'ঈশ্বরের সব যুদ্ধের সাজ পরিধান কর, যেন শয়তানের নানারকম মন্দ পরিকল্পনার সামনে দাঁড়াতে পার। ' #ইফিষীয় 6:11
আপনি যদি যীশুকে বিশ্বাস করেন তবে শয়তানের অস্তিত্বও বিশ্বাস করতে হবে।
মানবজাতির সৃষ্টির প্রথম থেকেই শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করা , পাপে পতিত করা সহ ঈশ্বরের গৌরব ধ্বংস করার জন্য সদাই মগ্ন।তার কার্যক্রম যীশুর শেষ বিচার আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে ।
শয়তানের অন্যতম কাজের ধরণ হচ্ছে প্রতারণা করে প্রলোভনে পতিত করা। প্রতারণার অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য ভাঁজ দেওয়া। ভাঁজ দেওয়ার জন্য শয়তান অনেক প্রশ্ন করেন যা বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করে পাপে পতিত করে । আজকে আমরা এই ক্ষুদ্র আলোচনায় শয়তানের প্রশ্ন ও প্রতারণার ফন্দি নিয়ে আলোচনা করব।
হবার কাছে শয়তানের প্রশ্ন: আদি মাতা হবার কাছে শয়তানের ঈশ্বরের বাক্যের ভাঁজ দেওয়া প্রশ্ন:
ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন,
"কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।" (#আদি ২:১৭)
এটা ছিল স্বয়ং ঈশ্বরের কথা।
কিন্তু শয়তান অনেক বড় প্রবঞ্চক তাই সত্যে থাকে নাই । সেইজন্য আদমকে পরাজিত করে পাপে পতিত করার লক্ষ্যে তিনি নেমেছিলেন ।
এখানে আরেকটি বিষয় বলা প্রয়োজন, শয়তান প্রথমে আদমকে পরাজিত করতে পারে নাই বরং তাঁর স্ত্রী হবাকে ।
প্রেরিত পৌল আমাদের জানায়,
"আর আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না, কিন্তু নারী প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিত হইলেন।"
(#১তীম:২:১৪)
কিন্তু শয়তানের মূল দৃষ্টি ছিল আদমের পতন।তাই আদিমাতার দুর্বলতার সুযোগ নিলেন যা এখনও শয়তান একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বড়ই সফল। এই কাজের জন্য এখন অনেক শয়তান তুল্য পুরুষ ব্যবহৃত হচ্ছে যারা সহজেই স্ত্রী লোকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিপথে নিয়ে যায়, বিজাতীয় ধর্মে ধর্মান্তরসহ বহু অপরাধে জড়িয়ে ফেলে ( পুরুষেরা যে সাধু তা না) যেমনটি প্রেরিত পৌল বলেছেন,
"এই রকম লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ঘরে ঘরে ঢুকে দুর্বল-মনা স্ত্রীলোকদের বিপথে নিয়ে যায়। এই স্ত্রীলোকদের উপর পাপ বোঝাই করা আছে; তারা নানা কামনা-বাসনার দ্বারা পরিচালিত।"( #২তীম: ৩:৬)।
আমাদের মূল আলোচনায় দেখেছি , ঈশ্বর সম্পূর্ণভাবে ফল খেতে নিষেধ করলেন কিন্তু
শয়তান ঈশ্বরের বাক্যকে (একজন দূর্বল নারীকে -স্বামী আদমের অনুপস্থিতিতে ) কিভাবে প্রকাশ করেছেন?
লক্ষ্য করুন :
শয়তান হবাকে বলেছে (যা পবিত্র বাইবেলে প্রথম প্রশ্ন)
"ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?"
(#আদিপুস্তক ৩:১)
আমাদের লক্ষ্য করতে হবে, শয়তান এখানে ঈশ্বরের বাক্যের ভাঁজ ( twist) দিয়ে হবাকে প্রশ্ন করেছেন ।
এই প্রশ্নে অনেক বিষয় জড়িত :
প্রথমত: শয়তান এমন ভাবে প্রশ্ন করেছেন যেন ঈশ্বরের মংগলভাবের গুণাবলি নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে পারে । শয়তান বুঝাতে চেয়েছেন ঈশ্বর হবার মংগল চান না তাই বিধি নিষেধ দিয়ে দিয়েছেন।*
দ্বিতীয়ত: শয়তান হবার কাছে ঈশ্বরের বিচারের সন্দেহের বীজ বপন করতে সক্ষম হয়েছে । সেইজন্য শয়তান হবাকে বলেছিল ,"
"--কোন ক্রমে মরিবে না;" (#আদি: ৩:৪) । শয়তান ঈশ্বর যা বলেছেন #আদি ২:১৭ পদে তার বিপরীতে এখানে হবাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে এবং দাবী করেছে তার চোখ খুলে যাবে এবং তিনি আত্মিকভাবে অগ্রগামী হবে অর্থাৎ ঈশ্বরের মত হবে ।
এ সম্পর্কে John Macarthur বলেছেন,
এখানে শয়তান প্রত্যক্ষ ভাবে হবাকে মিথ্যা কথা বলেছে। এই মিথ্যা আদম-হবাকে আত্মিকভাবে মৃত্যুর দিকে পরিচালনা করেছে । এই জন্যই যীশু শয়তানকে মিথ্যাবাদী ও নরঘাতক বলেছিলেন ( #যোহন ৮:৪৪)। শয়তানের মিথ্যার সাথে অনেক মিথ্যা আশীর্বাদের ডালি থাকে ।☆
এরপরে হবা দেখল ফলটা দেখতে বড়ই সুন্দর যা তাকে চরম আনন্দ দিবে ও পরিপক্বতাও দিবে । তাই সে মনে মনে ভেবেছিল শয়তান সত্য কথাই বলছে । অন্যদিকে হবা ঈশ্বরকে ভুল বুঝলেন। শয়তানের প্রতারণায় পতিত হয়ে সে আর দেরী করে নাই ।
সে নিজে সে ফল খেল ও স্বামী আদমকে খাওয়ালেন।
প্রেরিত পৌল ভ্রান্ত শিক্ষকদের সর্পের সাথে ( শয়তান) তুলনা করে বলেছিলেন,
"কিন্তু আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়।"
(#২করি:১১:৩)।
বাস্তবিক, হবা ঈশ্বরের আদেশের চেয়ে শয়তানের প্রতারিত প্রশ্ন ও আলোচনায় প্রাধান্য দিল।
কিন্তু তাদের চোখ খুলার পরে কি দেখল ? তাদের নগ্নতা , লজ্জা আর পাপ । কিন্তু তারা ঈশ্বরের কাছে না গিয়ে নিজেদের পাপ ও লজ্জা ঢাকার জন্য গাছের পাতা দিয়ে ঘাগ্ রা বানিয়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে পালানোর বৃথাই চেষ্টা করল ।
পরিণাম কি ?
ঈশ্বরের সাথে বিচ্ছেদ, অনন্তকালীন মৃত্যু, হারাল পৃথিবীর উপরে কর্তৃত্ব (#আদি ১:২৬,২৭), অন্যদিকে শয়তান হলো পৃথিবীর রাজা (#যিহিষ্কেল ২৮:১২-১৫,#লূক ৪:৫-৬, ২ #করি ৪:৪), সাথে আসলো নানান ধরনের অভিশাপ (#আদি ৩:১৭-১৯), সেই থেকে সবাই মৃত( #১করি: ১৫:২২)। কি যে ধ্বংস! *
প্রয়োগ
শয়তান আজও একই প্রশ্ন নিয়ে ও আকর্ষণীয় মিথ্যা সুবিধাসহ অনেক প্রলোভন আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনে নিয়ে আসে যেন সে আমাদের ধ্বংস করতে পারে ।
আজও শয়তান প্রশ্ন করে যীশু কি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র?
প্রশ্ন করে যীশু কি সতিই তোমার জন্য ক্রুশে মরেছেন ? সত্যি কি যীশু ক্রুশে মারা গেছেন? (বুঝাতে চায় প্রভু যীশু ক্রুশে মারা যায় নাই )
সত্যিই কি যীশু তোমাকে ভালবাসেন ? ( ঈশ্বরের ভালবাসায় সন্দেহ দেখায়)
প্রশ্ন করে পবিত্র বাইবেল নিয়ে: সত্যিই কি তা ঈশ্বরের বাক্য? না কি মানুষের মনগড়া কথা ?
শয়তান প্রশ্ন করে সত্যি কি মরার পরে অনন্ত জীবন আছে ? না এই পৃথিবীতেই সব শেষ? না কি কবরেই সব শেষ?
এমন অনেক অনেক প্রশ্ন । যে সব প্রশ্ন শুধু ঈশ্বরের মংগলের বিরুদ্ধে কাজ করে । এছাড়া, অনেক আকর্ষণীয় অফার নিয়ে শয়তান আমাদের ছেলেমেয়েদের ধোকা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । সামান্য সুখের জন্য, আরাম আয়াশের জন্য তারা মিথ্যা পথে পা বাড়াচ্ছে । তারা ঈশ্বরের আজ্ঞার চেয়ে শয়তানের চমকপ্রদ অফারে নিজেদের জীবনে লজ্জা, উলংগতা ও অপরাধ নিয়ে আসতেছে।
আশার বাণী
প্রভু যীশু সতর্ক করে বলেছিলেন শয়তান পারলে মনোনীতদের ভুলাবে । সে সিংহের মত গর্জন করছে যেন বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে পারে । শয়তান নিজের পতন সম্পর্কে অবগত তাই তার সাথে তার দল ভারী করা চাই । সেজন্য শয়তান খুবই তৎপর। প্রভু আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন ,
"পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সেই সমস্ত আমারই কাছে আসিবে; এবং যে আমার কাছে আসিবে, তাহাকে আমি কোন মতে বাহিরে ফেলিয়া দিব না।" (#যোহন ৬:৩৭)।
কিন্তু আমাদের ঈশ্বর দায়িত্ব দিয়েছেন যেন শয়তানের সমস্ত প্রকার প্রতারণা সম্পর্কে সচেতন হই, শয়তানের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হই, তার কাছ থেকে দূরে থাকি।
আজকে একটি ঘটনা বলে শেষ করি ,
বেশ কয়েক বছর দুই অস্ট্রেলিয়ান প্রথম জীবনে ভাল ছিলেন । কিন্তু তারা যুবককালে Drug Smuggler দলে পতিত হয় । কিন্তু কেন ? তারা পরে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তারা বন্ধুদের বড়লোকী জীবন থেকে আকর্ষিত হয়েছিল । তাদের সামান্য আয়ের পথ ছিল । তারা দেখত তাদের বন্ধুরা অনেক দামী গাড়ীতে চড়ে, ঘন ঘন বিদেশে যায়, বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে পার্টি দেয় - আরও কত কি ।
তারা এসকল দেখে কষ্ট পায় ও পথ খোঁজে কিভাবে সহজে বড়লোক হওয়া যায় । অনেকে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু তারা Drug Smuggler দের দ্বারা প্রলোভিত হল । Drug Smuggler রা বলেছিল শুধু কয়েকটা চালান দিতে পারলে কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। তারা মিথ্যা স্বপ্নে বিভর ছিল । যাইহোক শেষ পর্যন্ত তারা ইন্দে ানেশীয় একটি হোটেলে হেরোইন নিয়ে ধরা পরে । আপনারা হয়তো জানেন ইন্দোনেশিয়ায় Drugg Smuggler দের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তারা প্রায় ১০ বৎসর আইনী লড়াই করেছিলেন কিন্তু তারা মুক্ত হতে পারে নাই। কিন্তু আশ্চর্য ও আনন্দের বিষয় হলো, তারা দু'জনই জেল খানায় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তাদের একজন জেলে পালক হয়েছিলেন আরেক জন আর্টিস্ট । দুজনেই প্রভুর কাছ থেকে ক্ষমা ও পরিত্রাণের নিশ্চিয়তা পেয়েছিলেন। যদিও দুজনকে firing squad এ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল তবুও তারা জীবন্ত ঈশ্বরের সাক্ষাতে অনন্তজীবনের অধিকারী হয়ছে কারণ তাদের বিশ্বাস, অনুতাপ ও বিশ্বাসের ফল দেখাতে সক্ষম হয়েছিল ।
এই ঘটনা আমাদের সতর্ক হতে সাহায্য করে শয়তানের আকর্ষণীয় প্রলোভন সম্পর্কে । শয়তান তাদের অনেক বড় লাভের প্রত্যাশা দেখিয়েছিল কিভাবে কম সময়ে বড় লোক হওয়া যায় । কিন্তু তাদের মিথ্যা আশায় গুড়েবালি পড়ল। তাদের মূল্যবান জীবন দিয়ে তাদের অপরাধের শাস্তি পেতে হল। কিন্তু তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং একমাত্র ক্ষমার পথ খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছিল।
আজকে আপনার অবস্থা কি ? আপনি কি পরাজিত? পতিত ? শয়তানের হাতে বন্দী ? ভুল করে ফেলেছেন ? জানেন না কি করবেন । তাহলে আজই প্রভুর কাছে আসুন। তাঁকে বলুন আপনার কষ্টের কথা , ব্যর্থতার কথা । তিনিই রাস্তা খুলে দিবেন। সেদিন আদম-হবা সত্যি পরমদেশ হারিয়ে ছিল কিন্তু তা পুনরায় পাবার ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর পবিত্র পুত্র প্রভু যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মধ্যে দিয়ে । তাই দেরি না করে তাঁর সাহায্যের পাবার জন্য অগ্রগামী হই।
খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসীদের শয়তানের কার্যক্রম, কাজের ধরণ, প্রলোভনের পন্হা সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রেরিত পৌল বলেছেন,
"যেন আমরা শয়তান কর্তৃক প্রতারিত না হই; কেননা তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।" (#২করি:২:১১)।
প্রভু আমাদের শয়তানের সমস্ত চাতুরি সম্পর্কে জ্ঞাত করুন যেন আমরা খ্রীষ্টের বিজয়ী জীবন যাপন করতে সক্ষম হই। আমেন।।
References:
*https://doctrine.org/the-first-question
** D.A. Carson , New Bible Commentary Edit ( IVP: Nottingham),2007 page 63.
☆John Macarthur Study Bible , page 21