ত্রিত্ত্ব অর্থ তিনজন ঈশ্বর নয়, কেননা বাইবেলের ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়
আমরা খৃষ্টানরা যীশুকে একই সাথে ঈশ্বর ও ঈশ্বরের পূত্র হিসাবে বিশ্বাস করি কিন্তু মুসলমানরা তাকেই শিরক বলে। তারা বিষয়টা বোঝে না, বুঝতে চেষ্টাও করে না।
যীশুকে যখন খৃষ্টানরা ঈশ্বরের পূত্র বলে তখন মুসলমানরা ভাবে ঈশ্বর মারিয়ামের সাথে যৌন কাজের মাধ্যমে যীশুর জন্ম দিয়েছে। তখন তারা ভুলে যায়, ঈশ্বর যদি তার পূত্র বানায়, তাহলে যৌন ক্রিয়া ছাড়াই সেটা করতে পারে। যদি না পারে তাহলে সে ঈশ্বরই না।
মুসলমানদের মাথায় এই বিষয়টাই কোনমতে ঢোকে না। প্রথমেই আমরা কোরানের নিচের বানীটা দেখি -
"এই কিতাবে মারইয়ামের কথা বর্ণনা করুন, যখন সে তার পরিবারের লোকজন থেকে পৃথক হয়ে পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।" সুরা মারিয়াম- ১৯: ১৬
"অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।" সুরা মারিয়াম- ১৯: ১৭
তার মানে আল্লাহ মারিয়ামের কাছে নিজের আত্মাকে প্রেরন করল, আর সে একটা মানুষের আকার ধারন করল। আল্লাহর নিজের আত্মা বলতে কি বুঝায় ? আল্লাহর তো নিজের একটা আত্মা আছে। আর সেই আত্মাই মারিয়ামের কাছে গিয়ে মানুষ রূপ ধারন করেছিল।
এরপর সেই মানব বলছে— "সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।" মারিয়াম- ১৯: ১৯
অর্থাৎ সেই মানব হলো আল্লাহর কাছ থেকে প্রেরিত একজন বার্তাবাহক যাকে মুসলমানরা জিব্রাইল ফেরেস্তা বলে সাব্যাস্ত করে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? আল্লাহর নিজেরই আত্মা, যে নাকি স্বয়ং আল্লাহ নিজেই, সে আবার আল্লাহর বার্তাবাহক হয় কিভাবে?
তার চাইতে আশ্চর্য বিষয় হলো , পরবর্তীতে আল্লাহ নিজেই বলছে মারিয়ামের গর্ভে আল্লা নিজেই তার আত্মাকে ফু দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, যেমন –
"এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।" সুরা আম্বিয়া -২১: ৯১
"আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার আত্মাকে ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।" সুরা তাহরিম- ৬৬:১২
তাহলে কোরান (মারিয়াম ১৯: ১৯) আয়াত মোতাবেক মারিয়ামের কাছে যাওয়া সেই আত্মা কিভাবে ফেরেস্তা হবে , কারন ফেরেস্তা তো আল্লাহর আত্মা বা রুহুকে মারিয়ামের গর্ভে ফুকে দিতে পারে না। তার মানে স্বয়ং আল্লাহর নিজের আত্মাকেই মারিয়ামের গর্ভে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে আল্লাহ মারিয়ামকে গর্ভবতী করে।
কোন নারীকে যে গর্ভবতী করবে, নিয়ম অনুযায়ী সেই তো জন্ম নেয়া শিশুর পিতা হবে। সুতরাং মারিয়ামের গর্ভে ঈশ্বর নিজের আত্মাকে ফুকে দিয়ে মারিয়ামকে গর্ভবতী করার পর যে যীশুর জন্ম হলো ,পার্থিব বিচারে সেই ঈশ্বরই তো যীশুর পিতা হবে। ঈশ্বরকে যীশুর পিতা হওয়ার জন্যে তো মারিয়ামের সাথে যৌন ক্রিয়ার দরকার নেই। কিভাবে ঈশ্বর মারিয়ামকে গর্ভবতী করেছে, সেটা তো খোদ কোরানে বার বার বলা হয়েছে।
যীশুর পিতা যদি ঈশ্বর হয়, তাহলে সেই যীশুই আবার কিভাবে তার পিতা ঈশ্বর হয়?
বিষয়টা বোঝা অতি সহজ যদি বোঝার চেষ্টা থাকে। যীশুর আত্মা হলো স্বয়ং ঈশ্বরের আত্মাা। তাহলে বাস্তবে যীশু কে হবে? স্বয়ং ঈশ্বরই হবে। ইসলামে যীশুকে রুহু আল্লাহ ও কালিমাতুল্লাহ বলে। এর অর্থ কি ? রুহু আল্লাহ = আল্লাহর আত্মা, কালিমাতুল্লা= আল্লাহর কালাম বা আল্লাহর কথা। ইসলাম যদি এটাই স্বীকার করে , তাহলে যীশু অবশেষে কি হয়ে পড়ে? স্বয়ং ঈশ্বর বা আল্লাহই তো হয়ে পড়ে।
বাইবেলে দেখা যায়, যীশুর কাছে কখনই কোন ফিরিস্তা আসত না, আর তাকে কোন বানী দিত না। অথচ অতীতের সকল নবীর কাছে ফিরিস্তারা এসে বানী দিয়ে যেত, যদিও কিছু কিছু নবীর সাথে স্বয়ং ঈশ্বর কথা বলত। এখন প্রশ্ন কেন দিত না? কারন যীশু যা বলত, সেটাই তো ঈশ্বরের বানী। অর্থাৎ যীশু নিজেই ঈশ্বরের পূত্র রূপে স্বয়ং ঈশ্বর।
এসব বিষয় বুঝতে হলে ঈশ্বরের স্বরূপ জানতে হবে। ঈশ্বরের পক্ষে সব কিছুই সম্ভব, আর তাই তার পক্ষে সম্ভব একই সাথে মহাবিশ্বের সকল যায়গাতেই অবস্থান করা। ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব, একই সাথে বহু রূপে বিরাজমান থাকা। দুনিয়াতে মানুষের কাছে ঈশ্বর তিন রূপে বিরাজ করে- ঈশ্বর পিতা, পূত্র যীশু আর পবিত্র আত্মা, এই তিন রূপ ঈশ্বরের শ্বাশ্বত রূপও। পিতা, পুত্র আর পবিত্র আত্মার মধ্যে কোনই তফাৎ নেই, তারা সবাই পরস্পর এক, কিন্তু ভিন্ন রূপে।এটাকেই বলে ত্রিত্ববাদ।
কিন্তু মুসলমানরা এই ত্রিত্ববাদের গভীরে না গিয়ে, বলে খৃষ্টানরা নাকি তিন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। কি আজব কান্ড ! ত্রিত্ববাদকে নিচের আকারে লেখা যায়——
পিতা = পুত্র = পবিত্র আত্মা
ত্রিত্ত্ব অর্থ ঈশ্বর সদাপ্রভু এক ও একই তবে অভিন্ন তিনজন - পিতা সদাপ্রভু ঈশ্বর, পুত্র যীশু ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মা ঈশ্বর - এ তিন ব্যক্তিতে বিদ্যমান এবং তিনজনই অনন্তকালীনভাবে সহাবস্থানশীল - এক ঈশ্বরের তিন ভিন্ন ভিন্ন অংশ নয়। তিন জনই অনন্তকালীনভাবে অদৃশ্য, তাঁদের কথা কাজ ও উপস্থিতি দিয়ে দৃশ্যমান; তবে পুত্র অনন্তকালীনভাবে দৈহিক আকারে আবার দৃশ্যমান; অবিচ্ছেদ্য পরিকল্পনা ও পরিচর্যা - কাজ সম্পর্কে রয়েছে অনন্তকালীন পরম ও সিদ্ধ একত্ব ও একতা যা তিনজনকে এক জন করেছে। এক জনের অবস্থানের কারণে বাকী দু জন অন্তহির্ত হন না, তবে তিন ঈশ্বর নন, কিন্তু এক। তিন জনই স্বভাব, কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুনাবলিতে সমান। তিন জনের কাজ ভিন্ন ভিন্ন; কোন কাজ তিন জনে একসাথে একই সময়ে করেন অথবা একই কাজের ভিন্ন ভিন্ন দিক তিন জনে মিলে সম্পাদন করেন।