প্রিয়পাঠক, আমরা যারা মুসলিম জনসংখ্যা বহুল দেশে বাস করছি, এখানে অবশ্যই আমাদের অনেক মুসলিম বন্ধু বান্ধব ও আত্নিয়-স্বজন আছে, বিশেষ করে আমার প্রচুর আছে, কেননা আমি মুসলিম থেকে খ্রীষ্টান হয়েছি। আগামী ০১/০৮/২০২০ তারিখ মুসলিমদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আয হা অর্থাৎ কোরবানি ঈদ। আমার নিকট আত্নীয়-স্বজনরা আমাকে ঈদের দাওয়াত করেছেন, অনেক বন্ধুও আমাকে দাওয়াত করেছেন এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমি খ্রীষ্টান হিসাবে কি এই কোরবানির মাংশ খেতে পারি?
প্রথমে বলা দরকার যে, একজন খ্রীষ্টান কিভাবে এই কোরবানির মাংশ খাবে। কোরবানির মাংশ খাওয়ার বিষয়ে অবশ্যই পবিত্র বাইবেলে শতর্ক বার্তা আছে। প্রিয়পাঠক, তাই আসুন এই সকালে আমরা তা দেখি -
১ করি ১০:২৩-৩৩ পদে এই বিষয় বলা আছে। এই নিয়ম হল পৌত্তলিক দেবতার কাছে উৎস্বর্গকৃত মাংশ যা সেই সময়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল সে সম্পর্কে পৌল আমাদের বলছেন। সে শিক্ষার মূল সারাংশ হচ্ছে পরিপক্ক কোন খ্রীষ্টান বিশ্বাসী দেবতার কাছে উৎস্বর্গকৃত মাংশ খেলে যদি নতুন কোন কনভার্ট খ্রীষ্টান বিশ্বাসী বিবেকে কষ্ট পায়, তা হলে কোন বাধা না থাকলেও, পরিপক্ক খ্রীষ্টান বিশ্বাসীকে সেই মাংশ না খাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা আছে। মূল নীতি হচ্ছে, "তোমরা খাওয়া দাওয়া কর যাই কর, সব কিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্য করো " - ১ করি ১০:৩১।
মুসলিম থেকে এসেছেন এমন খ্রীষ্টানদের বেলায় এরকম সমস্যা বা প্রশ্ন আসবে না তা বলা যায় না।আসতে তো পারে, তাই নয় কি? বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে কোরবানীর পরে বিকালে বাজারে বেশ কোরবানীর মাংশ বিক্রি হয়। এসব মাংশ গরিব লোকেরা বিভিন্ন বাসা বাড়ী থেকে সংগ্রহ করে, সেই কোরবানীর মাংশ বেশ সস্তা বলে অনেকেই ক্রয় করে। দেবতার নিকট উৎস্বর্গকৃত মাংশ খাওয়া নিয়ে করিন্থিয়ান্স চার্চের মধ্যে যে সমস্যা দেখা দেয়, মুসলিমদের কোরবানীর মাংশও বাজার থেকে কিনে খাওয়ার মধ্যে প্রকৃতিগত মিল থাকলেও উৎস্বর্গ অর্থে কোন মিল নেই। আবার মুসলমান ও খ্রীষ্টান একই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। কিন্তু মুসলমান অনেক পরিবার খ্রীষ্টান বিশ্বাসীদেরকে কোরবানি ঈদের দিনে কোরবানির মাংশ দিয়ে থাকে, অথবা খ্রীষ্টান বিশ্বাসীদের এখনও মুসলমান আছে এমন আত্নীয় স্বজনেরাও মাংশ দিয়ে থাকে, অনেক মুসলিম ভুরিভোজের দাওয়াত দিয়ে থাকে।
পবিত্র বাইবেলের দিক থেকে এই ধরনের মাংশ খাওয়ার বিষয়ে কোন বাধা নেই। তবে কোন কোন স্থানে মুসলিম কনভার্ট খ্রীষ্টান গোপন বিশ্বাসী মুসলিমদের সংগে মিলে ভাগে কোরবানির টাকা দিচ্ছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ মুসলিমরা তা জানতে পারছে না, অথবা জানলেও রিকর্ভার্ট করতে কিছু বলছে না। কিন্তু ইসলামিক আইনে এই কোরবানি মুসলিমরা করতে পারে না। খ্রীষ্টানরা কোরবানিতে অংশগ্রহণ না করলেও শুধু মাংশ খাওয়ার জন্য টাকা দিচ্ছে কিন্তু মুসলিমরা তা গ্রহন করতে পারে না। খ্রীষ্টানরা একইরুপে আচরণ করার কোন সমর্থন পবিত্র বাইবেলে নেই। তাছাড়া এটি করিন্থিয়ান্স চার্চের মত দেবতার উদ্দেশ্যের উৎস্বর্গের মত হবে। কেননা ইসলামের কোরবানীর নিয়ম কানুন একেবারেই আলাদা যা কোনভাবেই একজন খ্রীষ্টান গ্রহন ও সমর্থন করতে পারে না। কেননা কার উদ্দেশ্য কোরবানি, কার নামে কোরবানি, ইত্যাদিতে প্রশ্নযোগ্য ধর্ততাত্ত্বিক ও বিশ্বাসগত বিস্তর পার্থক্য বিদ্যামান রয়েছে।
"তাহা শুনিয়া তিনি কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসক প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়”; কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি।" (মথি ৯:১২-১৩)
আমরা মাংশ যেমন নরমালি ঈশ্বরের ধন্যবাদ সহকারে খাই একইভাবে অন্য ধর্মাঅবলম্বিদের বাসায় দাওয়াত খাব যেন সুসমাচার প্রচারের জন্য বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদি যীশুর অগৌরবজনক হয় তা হলে অবশ্যই এই দাওয়াত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। একজন মুসলিম এর নিকট এই কোরবানির মাংশ ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খ্রীষ্টান বিশ্বাসী হিসাবে আপনার নিকট তা শুধুই খাবার হিসাবে গন্য তাই, ধন্যবাদ সহকারে তা আপনি খেতে পারেন, ও সুসমাচার প্রচারের সুযোগ তৈরী করতে পারেন। আর যদি এই মাংশ খেতে আপনার বিবেগ বাধা প্রদান করেন তা হলে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কেননা বাইবেল বলে - "আর বাক্যে কি কার্য্যে যাহা কিছু কর, সকলই প্রভু যীশুর নামে কর, তাঁহার দ্বারা পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে করিতে ইহা কর।" (কল ৩:১৭)
সুসমাচার প্রচার করতে হলে আমাদের সকল ধর্ম, বর্ণ ও কৃষ্টির লোকদের বাসায় খাওয়া দাওয়া করতে হবে, এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কেননা এটি আপনার নিকট ঈশ্বর প্রদত্ত খাবার মাত্র, তাই ঈশ্বরের ধন্যবাদ পূর্বক তা গ্রহন করুন।