প্রিয়পাঠক, আপনাদের মনে হয় তো একটি প্রশ্ন অবশ্যই এসেছে তা হচ্ছে এই, পশু কোরবানির নিয়ম থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বর কেন তাঁর পুত্রকে ক্রুশের উপরে কোরবানি দিয়েছেন। কেননা ঈশ্বর মুসার ব্যবস্থা বা শরিয়তেই পশু কোরবানীর নিয়ম দিয়েছেন। মুসার নিকট তিনি পরিস্কার করে কোরবানীর সকল বিষয় প্রকাশ করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, যীশুর রক্ত কেন ক্রুশের উপর দিতে হয়েছিল? তাই আসুন সেই বিষয়ে যীশুর নিজের মুখের কথা শুনি -
মথি ২৬:২৭-২৮ পদে যীশু বলেন,
"পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয়।"
প্রথমতঃ যীশু মহা - যাজক বা ইমাম হিসাবে কোরবানি হয়েছেন। আমাদের এমন এক মহাযাজক বা মহাইমামের দরকার ছিল যিনি জগতের যাজক বা ইমামের মত নন, যারা আমাদের দূর্বলতায় কিছু করতে পারে না, কিন্তু যীশু প্রত্যেক কিছুতে পরীক্ষিত হয়েছেন, তবে তিনি কোন পাপ করেন নি। তিনিই আমাদের স্বর্গীয় অনুগ্রহ বা রহমত পেতে ঈশ্বরের কাছে আমাদের মিলন করে দিতে পারেন।
"ভাল, আমরা এক মহান্ মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।" (ইব্রীয় ৪:১৪-১৬)
দ্বিতীয়তঃ জগতের মহা ইমামেরা মানুষ থেকে মনোনিত ছিল এবং ঈশ্বর সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে মানুষকে সম্পর্কিত করে। তারা কোরবানি ও উপহার ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসে তাদের নিজের ও লোকদের পাপের জন্য। তার নিজের জন্যও কুরবানি আনতে হয়, কেননা তার নিজের পাপ আছে (ইব্রীয় ৫:১-৩ ) অথচ যীশু আমাদের পক্ষে মহাইমাম হয়েছেন এবং আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের কাছে গিয়েছেন (ইব্রীয় ৬:২০ )।
"কেননা তিনি এই সাক্ষ্য প্রাপ্ত হইতেছেন, “তুমিই মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অনন্তকালীন যাজক।”কারণ এক পক্ষে পূর্ব্বকার বিধির দুর্ব্বলতা ও নিষ্ফলতা প্রযুক্ত তাহার লোপ হইতেছে —কেননা ব্যবস্থা কিছুই সিদ্ধ করে নাই—পক্ষান্তরে এমন এক শ্রেষ্ঠ প্রত্যাশা আনা হইতেছে, যদ্দ্বারা আমরা ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হই। অধিকন্তু ইহা বিনা শপথে হয় নাই।উহারা ত বিনা শপথে যাজক হইয়া আসিতেছে; কিন্তু ইনি শপথ সহকারে তাঁহারই দ্বারা নিযুক্ত, তিনি তাঁহার বিষয়ে কহিলেন, “প্রভু এই শপথ করিলেন, আর তিনি অনুশোচনা করিবেন না, তুমিই অনন্তকালীন যাজক।” (ইব্রীয় ৭:১৭-২১)
যীশুর কোরবানি বিষয়ে নবী ইশাইয়া যীশুর জন্মের প্রায় ৮০০ বিসিতে ঘোষণা করে গিয়েছেন -
যিশাইয় ৫৩:৫-১২
"কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ,
আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন;
আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল,
এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।
আমরা সকলে মেষগণের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি,
প্রত্যেকে আপন আপন পথের দিকে ফিরিয়াছি;
আর সদাপ্রভু আমাদের সকলকার অপরাধ তাঁহার উপরে বর্ত্তাইয়াছেন।
তিনি উপদ্রুত হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন,
তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়,
মেষী যেমন লোমচ্ছেদকদের সম্মুখে নীরব হয়,
সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না।
তিনি উপদ্রব ও বিচার দ্বারা অপনীত হইলেন;
তৎকালীয়দের মধ্যে কে ইহা আলোচনা করিল যে,
তিনি জীবিতদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইলেন?
আমার জাতির অধর্ম্ম প্রযুক্তই তাঁহার উপরে আঘাত পড়িল।
আর লোকে দুষ্টগণের সহিত তাঁহার কবর নিরূপণ করিল,
এবং মৃত্যুতে তিনি ধনবানের সঙ্গী হইলেন,
যদিও তিনি দৌরাত্ম্য করেন নাই,
আর তাঁহার মুখে ছল ছিল না।
তথাপি তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল;
তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন,
তাঁহার প্রাণ যখন দোষার্থক বলি উৎসর্গ করিবে,
তখন তিনি আপন বংশ দেখিবেন, দীর্ঘায়ু হইবেন,
এবং তাঁহার হস্তে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ হইবে;
তিনি আপন প্রাণের শ্রমফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবেন;
আমার ধার্ম্মিক দাস আপনার জ্ঞান দিয়া অনেককে ধার্ম্মিক করিবেন,
এবং তিনিই তাহাদের অপরাধ সকল বহন করিবেন।
এই জন্য আমি মহানদিগের মধ্যে তাঁহাকে অংশ দিব,
তিনি পরাক্রমীদের সহিত লুট বিভাগ করিবেন,
কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন,
তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেন;
আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন,
এবং অধর্ম্মীদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন।
তৃতীয়তঃ শুধু অনুতাপ একজন পাপিকে ঈশ্বরের নিকট আনতে পারে না। অনুতাপ নিয়ে একজন পাপি শুধু দুঃখ প্রকাশ করে মাত্র। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে আসার ভিত্তি কি হবে? কিসের ভিত্তিতে একজন পাপি ঈশ্বরের নিকট আসার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে? অবশ্যই কাফফারা দরকার। যীশু সেই কাফফারা আদায় করেছেন। অনুতাপের ভিতরে কাফফারা নেই। পবিত্র ঈশ্বর শুধু অনুতাপ দিয়ে খুশি হতে পারেন না? সেজন্য অনেক লোক শুধু অনুতাপ করে কিন্তু অন্তরে ধার্মিকতা নেই। অনুতাপ কারা করবে? যারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের কাছে আসার যোগ্যতা অর্জন করেছে তারাই তাদের পাপের জন্য অনুতাপ করবে। কিন্তু যারা ঈশ্বরের কাছেই আসতে পারে নি, তাদের অনুতাপ করার আগে ঈশ্বরের সংগে মিলিত হওয়া দরকার। সেজন্য যীশুই ঈশ্বরের সংগে একজন পাপিকে মিলিত করেন তাই যীশুতে, যীশুর কুরবানিতে বিশ্বাস দরকার।
যীশুর রক্ত কি কাজ করে তার একটি বর্ণনা আমি নিম্নে তুলে ধরছি, যা বাইবেল ভিত্তিক।
ক. যীশুর ক্রুশের কোরবানির রক্ত শান্তি এনেছেন
"এবং তাঁহার ক্রুশের রক্ত দ্বারা সন্ধি করিয়া, তাঁহার দ্বারা যেন আপনার সহিত কি স্বর্গস্থিত, কি মর্ত্ত্যস্থিত, সকলই সম্মিলিত করেন, তাঁহার দ্বারাই করেন। তোমাদিগকে তিনি এখন খ্রীষ্টের মাংসময় দেহে মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত করিলেন, যেন পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ করিয়া আপনার সাক্ষাতে উপস্থিত করেন," (কল ১:২০,২২)
খ. যীশুর কোরবানির রক্ত দ্বারা আমরা ধার্মিক বলে গনিত হয়েছি
"সুতরাং সম্প্রতি তাঁহার রক্তে যখন ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছি, তখন আমরা কত অধিক নিশ্চয় তাঁহা দ্বারা ঈশ্বরের ক্রোধ হইতে পরিত্রাণ পাইব।" (রোমীয় ৫:৯)
গ. যীশুর কুরবানীর রক্ত আমাদের ঈশ্বরের নিকট এনেছেন
"এবং ক্রুশে শত্রুতাকে বধ-করণ পূর্ব্বক সেই ক্রুশ দ্বারা এক দেহে ঈশ্বরের সহিত উভয় পক্ষের মিলন করিয়া দেন। আর তিনি আসিয়া “দূরবর্ত্তী” যে তোমরা, তোমাদের কাছে “সন্ধির, ও নিকটবর্ত্তীদের কাছেও সন্ধির” সুসমাচার জানাইয়াছেন।" (ইফি ২:১৬-১৭)
ঘ. যীশুর কোরবানীর রক্ত আমাদের মুক্তি দিয়েছেন
"যাঁহাতে আমরা তাঁহার রক্ত দ্বারা মুক্তি, অর্থাৎ অপরাধ সকলের মোচন পাইয়াছি; ইহা তাঁহার সেই অনুগ্রহ-ধন অনুসারে হইয়াছে," (ইফি ১:৭)
ঙ. যীশুর কোরবানীর রক্তের দ্বারা আমরা ঈশ্বরের কাছে আসার সুযোগ পেয়েছি
"অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, যীশু আমাদের জন্য ‘তিরস্করিণী’ দিয়া, অর্থাৎ আপন মাংস দিয়া, যে পথ সংস্কার করিয়াছেন; আমরা সেই নূতন ও জীবন্ত পথে, যীশুর রক্তের গুণে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিতে সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি;" (ইব্রীয় ১০: ১৯-২০)
চ. যীশুর কোরবানীর রক্ত দ্বারা আমরা পাপ থেকে পরিস্কৃত ও ধৌত হয়েছি
"কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে, এবং তাঁহার পুত্র যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে।" (যোহন ১:৭)
"এবং যিনি ‘‘বিশ্বস্ত সাক্ষী,” মৃতগণের মধ্যে ‘‘প্রথমজাত” ও ‘‘পৃথিবীর রাজাদের কর্ত্তা,” সেই যীশু খ্রীষ্ট হইতে, অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। যিনি অামাদিগকে প্রেম করেন, ও নিজ রক্তে অামাদের পাপ হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন।" (প্রকাশিত বাক্য ১:৫)
যীশুর রক্তের দ্বারা ঈশ্বরের ন্যায়বিচার সম্পূর্ণ হয়েছে। যীশুর রক্তের দ্বারা পাপিদের পরিত্রাণ করতে ঈশ্বরের পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে পূর্ণতা লাভ করেছেন, এটিই ঈশ্বরের প্রেম।