প্রিয়পাঠক, আমরা জানি যে এই বিষয়ে খ্রিষ্টানদের প্রাই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, যীশু কিভাবে মানুষের পাপভার বহন করেছেন। অর্থাৎ একজন মানুষ আরেক জন মানুষের পাপেরভার বহন করতে পারে না, এই বলে খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। যদিও প্রতিবছর মুসলিমরা পশু কুরবানি দিয়ে থাকে, কিন্তু তবুও তারা এই প্রশ্ন করে। এখানে আমার প্রশ্ন হচ্ছে যদি পশু কুরবানি মানুষের পাপ থেকে রক্ষার ( কাফফারা) জন্য অবদান রাখতে পারে, তাহলে একজন মানুষের কুরবানির ব্যবস্থা ঈশ্বর করেছেন, তাও মানা সম্ভব, তাই নয় কি? যীশু পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য একবার ঈশ্বরের দয়ায় সন্তুষ্টিজনক ও পূর্ব - নির্ধারিত মানুষের জন্য বিকল্প কুরবানি।
পবিত্র বাইবেল বলে পাপের শাস্তি ( বেতন ) মৃত্যু,
"কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের দয়ায় "অনুগ্রহ-দান" আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন" (রোমীয় ৬:২৩)
প্রিয়পাঠক, আসুন এখন আমরা পবিত্র বাইবেল থেকে কুরবানির ইতিহাস দেখি, যাতে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন যে, কেন যীশু ক্রুশের উপরে কোরবানি হয়েছেন।
ব্যাবস্থা বা শরিয়ত আসার পূর্বের কুরবানিঃ
ক. এদন বাগানে ঈশ্বর নিজেই কুরবানি দিয়েছেন - আদিপুস্তক ৩:২১ " আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁহার স্ত্রীর হবার নিমিত্ত চর্ম্মের বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া তাঁহাদিগকে পরাইলেন।" ঈশ্বর কেন পশুকুরবানি দেন? যদিও এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না তবে খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্ববিদগন বলেন ঈশ্বরের এই কুরবানি পাপ ক্ষমার জন্য যে রক্ত দরকার তা দেখায়। পশুর চামড়ার যে পোশাক ঈশ্বর আদম ও হবাকে পড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য বাইবেলে তা উল্লেখ আছে। কেননা পাপ করার পরে আদম ও হবা শুধুমাত্র উলুঙ্গতা নিয়ে কথা বলেন, এটি তাদের বিবেক কলুষিত করেছিল। পশু কুরবানি দিয়ে উলংগতার লজ্জা ঢাকা যে পাপ ক্ষমার বিষয়, তা বাইবেলের অন্যান্য পদ থেকেও প্রমাণ করা যায়। নতুন নিয়মে -
"কারণ বাস্তবিক আমরা এই তাম্বুর মধ্যে থাকিয়া আর্ত্তস্বর করিতেছি, ইহার উপরে স্বর্গ হইতে প্রাপ্য আবাস-পরিহিত হইবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি; পরিহিত হইলে পর আমরা ত উলঙ্গ থাকিব না।" (২ করিন্থীয় ৫:২-৩ )
"তুমি কহিতেছ, আমি ধনবান্, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই; কিন্তু জান না যে, তুমিই দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ" (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৭)।
যীশু এখানে চার্চের আত্মিক দারিদ্র্যেতার কথা বলেছেন। আবার প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৫ দেখ, আমি চোরের ন্যায় আসিতেছি; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে, এবং আপন বস্ত্র রক্ষা করে, যেন সে উলঙ্গ হইয়া না বেড়ায়, এবং লোকে তাহার অপমান না দেখে।
খ. হাবিলের কুরবানি - আদমের ছেলে হাবিল ঈশ্বরের নিকট কুরবানি নিয়ে আসেন তার মেষ পালের মধ্য থেকে মোটা ও প্রথমজাত মেষ -
"আর হেবলও অাপন পালের প্রথমজাত কএকটি পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ করিল। তখন সদাপ্রভু হেবলকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন;" (আদিপুস্তক ৪:৪)
আদিপুস্তক ৪:৭ পদে বলা হয়েছে তিনি সঠিক ধরনের কুরবানি দিয়েছেন। ঈশ্বর আদমের আরেক সন্তান কাবিলের শষ্য কুরবানি চেয়ে পশুকুরবানিকে বেশি পছন্দ করেছেন। কেননা ঈশ্বর পাপের বদলে মৃত্যুর শাস্তি দিয়েছেন। তবে সে মৃত্যু মানুষের নয় কিন্তু পশুর মৃত্যু দ্বারা তিনি দেখালেন যে পাপের কারণে মানুষ এভাবে মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত ছিল। সুতরাং পাপ ক্ষমার পশুকুরবানির রক্ত একেবারেই প্রথম থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবে প্রচলিত হয়ে আসছে।
গ. নুহের কুরবানি - "পরে নোহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার শুচি পশুর ও সর্ব্বপ্রকার শুচি পক্ষীর মধ্যে কতকগুলি লইয়া বেদির উপরে হোম করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু তাহার সৌরভ আঘ্রাণ করিলেন, আর সদাপ্রভু মনে মনে কহিলেন, আমি মনুষ্যের জন্য ভূমিকে আর অভিশাপ দিব না, কারণ বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট; যেমন করিলাম, তেমন আর কখনও সকল প্রাণীকে সংহার করিব না।" (আদিপুস্তক ৮:২০-২১)
নুহ শুচি পশু দিয়ে পোড়ানো কুরবানি দিয়েছিলেন। এর আগে মাংশ খাওয়ার কোন হুকুম ছিল না। কিন্তু নূহের সময় থেকে ঈশ্বর মাংশ খাওয়ার হুকুম দিয়েছেন।
"প্রত্যেক গমনশীল প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে; আমি হরিৎ ওষধির ন্যায় সে সকল তোমাদিগকে দিলাম। কিন্তু সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না।" (আদিপুস্তক ৯:৩-৪)
তবে নুহ ও তার পরিবার কুরবানি মাংশ খেয়েছেন কি না তা জানা যায় না। কেননা এই কুরবানি মূল উদ্দেশ্য ছিল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা। আদিপুস্তক ৮:২১ ঈশ্বর সেই কুরবানি ঘ্রাণে খুশি হলেন।
ঘ. ইবরাহিম এর কুরবানি - ইবরাহিম প্রথম যে কুরবানি দেন, তা হচ্ছে ঈশ্বর তার সাথে যখন চুক্তি স্থাপন করেন তখন - আদিপুস্তক ১৫:৯-২১ ঈশ্বরের হুকুমে ইবরাহিম কুরবানি দেন। এই কুরবানীর আসল অর্থ ছিল "চুক্তি ভাংগার অভিষাপে শাস্তিকে প্রতিক হিসাবে দেখিয়ে দেওয়া"।
এই সময় ঈশ্বর পশুর বয়স বলে দেন। পশুকে জবাই করে নয় কিন্তু দ্বিখণ্ডিত করে কুরবানি করতে ঈশ্বর বলেন। দ্বিখণ্ডিত পশুর মাঝখান দিয়ে ঈশ্বর হেটে যান এবং ইবরাহিমের সাথে চুক্তি করেন যে ঈশ্বর ইবরাহিমের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার সমস্তজাতিকে আসির্বাদ করবেন। এই কুরবানির প্রধান অর্থ ছিল রক্ত দিয়ে চুক্তি করা কারণ কোন পক্ষ যদি চুক্তি ভাংগে চুক্তি ভঙ্গকারীর দশাও দ্বিখণ্ডিত পশুর মত হবে।
ইবরাহিম এর আরো পরে ইসাহাকের পরিবর্তে মেষ কুরবানি দেন। কেননা ঈশ্বর তাকে পোড়ানো কুরবানি দিতে বলেন। পরে ইবরাহিম সেখানে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে গিয়েছেন,সেখানে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কুরবানগাহ তৈরী করে কোরবানি দিয়েছেন, তবে তা তার অদ্বিতীয় পুত্র ঈসাহাকের কোরবানিকে স্মরণ করে নয়। নানা স্থানে নবী ইবরাহিমের কোরবানি দেওয়া ছিল বহুঈশ্বরবাদের বিপরীতে এক ঈশ্বরের উপাসনা বা ইবাদত হিসাবে। কেননা এই কোরবানি ইবাদতের অংশ। আমি অবশ্যই প্রার্থনা পূর্বক আগামী কয় দিন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ঙ. মুসার কুরবানি - মুসার সময়ে প্রথম কোরবানি হয় মিসর দেশে নিস্তার পর্বের সময় থেকে। এই কোরবানি প্রতিবছর করতে স্বয়ং ঈশ্বর আদেশ দেন। এই আদেশের জন্যই ইহুদী জাতি প্রতিবছর কোরবানি দিয়ে আসছিল। তখন ইসলাম ধর্মের কোন প্রতিষ্ঠা হয় নি। কিন্তু ইবরাহিম ঈসমাইলকে কুরবানি দেওয়ার কারণ কোথা থেকে আসল - বা ইসলামের কোরবানি কিভাবে আসে তা আমাদের জানা নেই। তবে ইসলাম ধর্ম ইবরাহিমের জামানা হতে ধারাবাহিকতায় কোরবানি দিয়ে আসছে বলে শিক্ষা দেয়। সেজন্য ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলিমরা প্রতি বছর এক সাথে কোরবানি দেয়।তবে এখন বিশ্বে দিনের পার্থক্য থাকার কারণে এক সংগে কুরবানি করা হয় না। সেজন্য ইসলামে তিন দিন কুরবানি করা যায় বলে, ধর্মীয় ঘোষণা আছে।
মুসার সময়ে কুরবানির পশু কেমন হবে? কখন কোরবানি দিতে হবে ? কিভাবে কোরবানি দিতে হবে? কোথায় কোরবানি করতে হবে? কোরবানির মাংশ কিভাবে খাওয়া হবে? ইত্যাদি নানা বিষয়ে বিস্তারিত নিয়ম ঈশ্বর পবিত্র বাইবেলে দিয়েছেন।
ঈসমাইলের কোরবানি কোন কথা বাইবেলে নেই বরং ঈসাহাকের কথা বাইবেলে আছে। কুরআন অনুসারে যে কুরবানি করার হুকুম রয়েছে তা অবশ্যই মোহাম্মাদের আমলের হুকুম। কেননা পবিত্র বাইবেলে এমন কোন কোরবানির কথা বলা হয় নি, এমন কি ঈসাহাকের কুরবানিকে স্মরণ করেও কোরবানি করতে বলা হয় নি। বাইবেল অনুসারে ঈশ্বর কোরবানির নিয়ম করেন মিসরে ঈস্রায়েল জাতি বন্দি দশা হতে মুক্ত হওয়ার আগে পালিত ঈদুল ফেসাখের দিনে করা কুরবানির নিয়ম থেকে। এর আগে লোকেরা নিয়মিত ভাবে পশু কুরবানি দেয় নি, কোন নিয়মও ছিল না,ঈশ্বরের হুকুম ছিল না। তবে মাঝে মাঝে দেখা যায় - যেমন নুহ কুরবানি করেছিল - আদিপুস্তক ৮:২০ পদ।
পশুর রক্ত মানুষের অনন্তকালীন পাপ ক্ষমার কোন উপায় নয়, পশুর রক্ত যীশু কোরবানি হওয়ার আগ পর্যন্ত, তাঁর রক্তের প্রতিনিধিত্ব করেছিলমাত্র, কারণ খ্রীষ্টের রক্তই জীবন-দায়ী।