প্রিয়পাঠক, আমরা জানি যে, পিতা ঈশ্বর আব্রাহামের প্রতি তার অদ্বিতীয় পুত্র ঈসাহাকে কোরবানি করতে আজ্ঞা করেছিলেন। এই বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের প্রকৃত শিক্ষা কি তা অনুসন্ধান করা এবং প্রয়োগ করা প্রত্যেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর খুবই প্রয়োজন। কেননা আমরা ঈশ্বরের পরিত্রাণের সুসমাচার তত্ত্বজ্ঞান পর্যন্ত পৌছাতে চাই। আমরা পরিত্রাণের এই সুসমাচারের নিঘূর্তত্ব জানতে চাই, যেন ইহাতে পিতা ঈশ্বরের গৌরব ও মহিমা এই যুগে প্রকাশিত হয়,তাই নয় কি? তাই আসুন আমরা এই সকালে
পবিত্র বাইবেলের আদিপুস্তক ২২:১-২ পদ পাঠ করি -
‘‘এই সকল ঘটনার পরে, ঈশ্বর অব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন, তিনি তাহাকে কহিলেন, হে অব্রাহাম: তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন তিনি কহিলেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, যাহাকে তুমি ভালবাস, সেই ইস্হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও; এবং তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর’’।
আব্রাহাম ৭৫ বছর বয়সেও নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি একটি সন্তানের আশায় মানবীয় সকল প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ করেছিলেন। তার পরেও তিনি সন্তানের পিতা হতে পারেন নি। সন্তান না হওয়ার যে কত কষ্ট তা আব্রাহাম খুব ভালভাবেই অনুভব করেছিলেন। কিন্তু ঠিক সেই মহুর্তে এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণকর্তা সমুদয় আসির্বাদের উৎস স্বয়ং ঈশ্বর তাকে আহবান করলেন এবং অজানা এক দেশের সন্ধানে যাত্রা করতে বললেন। যদি আব্রাহাম তাঁর সকল মাতৃভূমির বন্ধন ছিন্ন করে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে অজানা দেশের সন্ধানে যাত্রা করেন ঈশ্বর তাঁকে সন্তানের পিতা করবেন। ঈশ্বর আব্রাহামের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে মহাজাতি সৃষ্টি করবেন। আব্রাহামের নাম মহৎ করবেন। সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর বংশের মধ্যে দিয়ে আসির্বাদ করবেন। ঈশ্বরের এই মহান পরিকল্পনার সংগে আব্রাহাম একতা পোষণ করলেন ও অজানা দেশের সন্ধানে যাত্রা করলেন।
আব্রাহামের এই যাত্রা কোন সহজ বিষয় ছিল না।কেননা তাঁকে বার বার দূর্ভিক্ষের মধ্যে পড়তে হয়েছিল। মরুভূমিতে যাযাবরের মত জীবনযাপন করতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার পরেও তার সন্তান হয় নি। তাই তার স্ত্রী সারা হাগার নামক দাসীর সাথে আব্রাহামের বিয়ে দেন, উদ্দেশ্য একটি সন্তান লাভ করা। যদিও হাগারের গর্ভে আব্রাহামের সন্তান ইসমাইলের জন্য হয়। পরে ঈশ্বরের নির্দেশে সেই দাসীকে পুত্রসহ আব্রাহাম থেকে পৃথক করা হয়। কারণ এই সন্তান ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত সন্তান ছিল না।
ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী, তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আব্রাহামের শতবছর হলে ঈসাহাকের জন্ম হয়। এই পুত্র ঈসাহাকে নিয়ে আব্রাহাম মহাসুখে আনন্দপূর্ণ জীবনযাপন করছিলেন। ঠিক সেই মহুর্তে ঈশ্বর আব্রাহামকে আজ্ঞা করলেন, তাঁর এই প্রিয়পুত্রকে ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের জন্যই কোরবানি দিতে হবে। আমাকে একজন নাস্তিক বাইবেলের এই অংশ দেখিয়ে কিছু দিন আগে বলেছিলেন, বাইবেলের ঈশ্বর হৃদয় হীন পাষাণ, তা না হলে কি করে এধরনের আদেশ করতে পারে! আজ অনেক নাস্তিক ও অবিশ্বাসী তাদের ঈশ্বর বিহীন মানবীয় চিন্তায় এমন মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু আমরা জানি পিতা ঈশ্বরের পরিকল্পনা মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই নয় কি?
ঈশ্বর আব্রাহামকে পরীক্ষা করলেন, কি ছিল সেই পরীক্ষা? তার অদ্বিতীয় পুত্র ঈসাহাককে কোরবানি করা এবং এই পরীক্ষার মধ্যে লুকিয়ে আছে ঈশ্বরের প্রেম, আব্রাহামের বংশের প্রতি শুধু এই প্রেম তা নয় ঈশ্বরের এই প্রেম সমুদয় মানবজাতির জন্য।কেননা ঈশ্বরের ইচ্ছা এটি কখনোই ছিল না যে আব্রাহামের পুত্রকে কোরবানি করা হবে, এটি ছিল নিছক একটি পরীক্ষা মাত্র। কারণ, ঈশ্বর তার একজাতপুত্রকে ভবিষ্যতে আব্রাহামের বংশের ( সমুদয় মানব জাতির ) লোকদের পরিত্রাণ করতে কোরবানি করবেন, তাঁর জন্য আব্রাহামকে প্রস্তুত করা।
ঈশ্বরের প্রেমের প্রতি আব্রাহামের সাড়াদান, একই সুত্রে গাঁথা। আব্রাহাম নিজ পুত্রকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কোরবানি করে এটি দেখিয়েছেন যে, মানুষ তার সর্বস্ব দিয়ে ঈশ্বর প্রতি প্রেম দেখাতে সমর্থ। ঈশ্বর যেমন মানুষের প্রেমের জন্য তাঁর একজাত পুত্রকে দান করতে পারেন, তদ্রুপ। ঈশ্বরের একজাত পুত্রকে গ্রহন করতে আব্রাহাম ও তার ভাবি বংশ প্রস্তুত। কেননা যে ঈশ্বর আব্রাহামকে পুত্র কোরবানি করতে বলেছিলেন, সেই ঈশ্বরই আব্রাহামের তরবারি থামিয়ে দিয়েছিলেন। কেননা আব্রাহামের অদ্বিতীয় পুত্রের কোরবানির কোন অর্থ পূর্ণ কারণ ছিল না। এটি শুধুমাত্র আব্রাহামের জন্য ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের পরীক্ষা ছিল। আব্রাহামের এই সিদ্ধান্ত ঈশ্বররের হৃদয়কে প্রভাবিত করেছিল, তাঁর একজাত পুত্রকে সমুদয় মানুষের উদ্ধারের জন্য কোরবানি করতে, তাই নয় কি?
"কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার এক জাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।" (যোহন ৩: ১৬)
যোহন ৩:১৬ পদের বার্তা এতই সরল যে একজন শিশুর জন্যও বোঝা সহজ, কিন্তু আবার এতই গভির যে সবচে ' উচুঁ মানের ধর্মতত্ত্ববিদরাও যুগে যুগে এর প্রয়োগ অনুসন্ধান এখনো অব্যাহত রেখেছেন। আমরা অধিকাংশ খ্রীষ্টান ব্যক্তিগতভাবে পরিত্রাণের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি যা ঈশ্বর তাঁর পুত্র যীশুর ক্রুশীয় কোরবানি মধ্যে দিয়েছেন, কিন্তু আমরা কি সমস্ত মানব জাতির জন্য পিতা ঈশ্বরের এই প্রেমকে অর্থাৎ ক্রুশে যীশুর কোরবানিকে অনুধাবন করতে শুরু করেছি? আমরা কি এটি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, পিতা ঈশ্বর আব্রাহামকে তার পুত্র কোরবানি করার আজ্ঞা দেওয়ার পূর্বেই ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্রকে পাপে পতিত মানব জাতিকে উদ্ধার করতে কোরবানি দেওয়ার দ্বারা সমস্ত জগতে প্রেম করেন।
"ফলতঃ তিনি আমাদিগকে আপন ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিয়াছেন,তাঁহার সেই হিতসঙ্কল্প অনুসারে যাহা তিনি কালের পূর্ণতার বিধান লক্ষ্য করিয়া তাঁহাতে পূর্বে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। তাহা এই, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করা যাইবে "। (ইফি ১: ৯-১০)
ঈশ্বরের এই পরিকল্পনার জন্যই যীশু এই পৃথিবীর সকল ধর্ম ও মতবাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। যীশু ছাড়া সব কিছু মিথ্যা কেননা তিনিই কেবল সত্য, যীশু ছাড়া সকল পথ নরক মুখি, যীশুই কেবল (পিতা) স্বর্গমূখী পথ, যীশু ছাড়া সবাই মৃত কোন জীবন নেই।
"কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য। কেননা শাস্ত্রে বলে, ‘‘যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” (রোমীয় ১০:৯-১১)
For parents with young school going children, Grand Dunman is located within close proximity to popular primary schools Dunman Grand balance units chart including Tao Nan School, CHIJ Katong Primary, Tanjong Katong Primary School and Geylang Methodist Primary. Most other secondary schools and overseas schools are within minutes walk or drive from the condo.