top of page
Search

পবিত্র বাইবেল অনুযায়ী কেন মুহাম্মদ কোনভাবেই নবী হতে পারে না?

#পর্ব-১০২ তে দেখানো হয়েছে , মুহাম্মদকেই প্রমান করতে হবে , সে ছিল ইব্রাহিমের বংশধর। এ ক্ষেত্রে মুহাম্মদের নিজের বলা কথা ছাড়া আর কোন প্রমান নেই। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে যদি দাবী করে যে সে নবাব সিরাজুদ্দৌলার বংশধর , তাহলে সেটা তাকে ওয়ারিশনামা প্রদর্শন করেই প্রমান করতে হবে। কেউ কিছু একটা দাবী করলেই সেটা সত্য হবে না। মুসলমানরা ঠিক এই যায়গাতেই বুঝতে পারে না। তারা প্রতিটা কথার জন্যে কোরানের বানীকে প্রমান হিসাবে তুলে ধরে , কিন্তু তারা বোঝে না , কোরান প্রথমত: মুহাম্মদের বলা বানী। মুহাম্মদই বলেছে কোরান আল্লাহর বানী। সুতরাং কোরানের আগে মুহাম্মদ যে নবী সেটাই মুসলমানদের আগে প্রমান করতে হবে।


এবার দেখা যাক , মুহাম্মদ তার আগের নবী ও সেসব নবীদের ওপর নাজিল হওয়া কিতাব যেমন তৌরাত ও ইঞ্জিল সম্পর্কে কি বলেছিল। ইবনে হাজমই প্রথম প্রবক্তা যিনি প্রচার শুরু করেন ১১শ শতক থেকে যে ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত কিতাব। আর মুহাম্মদ মারা যান ৬৩২ খৃষ্টাব্দে। তার অর্থ মুহাম্মদ মারা যাওয়ারও প্রায় ৩৫০/৪০০ বছর পর থেকে বাইবেল সম্পর্কে এই ধরনের অভিযোগ ওঠে এখন আমাদেরকে দেখতে হবে , খোদ মুহাম্মদ নিজে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব সম্পর্কে কি বলে গেছে। প্রসঙ্গত: তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব সহ আরও কিছু কিতাবের সংকলনকেই বাইবেল হিসাবে খৃষ্টানরা অভিহিত করে থাকে।


সুরা বাকারা- ২: ১৩৬: তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আমরা তাঁরই আনুগত্যকারী।


সুরা বাকারা-২: ২৮৫: রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।


মুহাম্মদ তার আগের নবীদের ওপর নাজিল হওয়া সব কিতাবের ওপর বিশ্বাস এনেছে। আরও বলছে , সেইসব কিতাবের সাথে কোরানের কোন পার্থক্য নেই। শুধু তাই নয় , এবার নিচের আয়াত দেখা যাক


সুরা আল ইমরান – ৩: ৩ তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের।

সত্যায়ন কাকে বলে ? যারা চাকরির জন্যে তাদের শিক্ষাগত সনদপত্র সত্যায়ন করেছেন তারা জানেন। সেই সনদপত্রের ফটোকপি প্রথমে নিয়ে একজন সরকারী কর্মকর্তার কাছে যেতে হয়। সেই কর্মকর্তা অরিজিনাল সনদপত্রের সাথে ফটোকপি মিলিয়ে যদি দেখেন যে সব হুবহু এক , তখনই সেটা সত্যায়ন করেন। তাহলে প্রশ্ন , কোরান কিভাবে মুহাম্মদের সময়কালে ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে যে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব ছিল , সেটা না দেখে সত্যায়ন করছে ? তার মানে মুহাম্মদের সময়ে ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে যে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব ছিল , তা যে নিখুত ও বিশুদ্ধ , সেটারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। বিশুদ্ধ না হলে কোরান কখনই সত্যায়ন করত না। তৌরাত কিতাব যে সত্যিই মুহাম্মদের সময় বিশুদ্ধ ছিল , সেটার আরও কঠিন প্রমান নিচে


সুরা আল ইমরান – ৩: ৯৩:তওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে ইয়াকুব যেগুলো নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন, সেগুলো ব্যতীত সমস্ত আহার্য বস্তুই বনী-ইসরায়ীলদের জন্য হালাল ছিল। তুমি বলে দাও, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। তাহলে তওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ কর।

কিছু হারাম ও হালাল বিষয়ে ইহুদিদের সাথে মুহাম্মদের তর্ক হয় , তখন মুহাম্মদই কোরানের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করছে , ইহুদিরা বস্তুত: কিছু হারামকে হালাল করার জন্যে পায়তারা করছে , কিন্তু সেসব আসলে হারাম , সেই জন্যেই সে ইহুদিদেরকে তাওরাত কিতাব আনার জন্যে বলছে , এই কারনে যে তৌরাতের মধ্যে কোনটা হারাম আর কোনটা হালাল পরিস্কারভাবে বলা আছে। কোরান বা মুহাম্মদ যদি তৌরাত কিতাবকে বিশুদ্ধ না বিবেচনা করত , তাহলে নিশ্চিতভাবেই তৌরাতকে সাক্ষী মানত না। এবার নিচের আয়াতটা দেখা যাক


সুরা আল আনআম- ৬: ৯১: তারা আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারেনি, যখন তারা বললঃ আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি। আপনি জিজ্ঞেস করুনঃ ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছে, যা মূসা নিয়ে এসেছিল? যা জ্যোতিবিশেষ এবং মানব মন্ডলীর জন্যে হোদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্তপত্রে রেখে লোকদের জন্যে প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশকে গোপন করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানতো না। আপনি বলে দিনঃ আল্লাহ নাযিল করেছেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে ব্যাপৃত থাকতে দিন।

উপরের আয়াতে ইহুদিদের প্রতি একটা অভিযোগ আনা হচ্ছে , তাতে বলা হচ্ছে ইহুদিরা তাদের কিতাব থেকে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচার করে , আর কিছু গোপন করে। এখানে কিন্তু বলা হয় নি যে তারা তাদের কিতাবকে বিকৃত করেছে। বিক্ষিপ্তভাবে প্রচার ও গোপন করা এবং বিকৃত করা এক জিনিস না। এবার দেখা যাক , ইঞ্জিল সম্পর্কে কোরান কি বলছে —


সুরা ইউনুস-১০:৯৪: সুতরাং তুমি যদি সে বস্তু সম্পর্কে কোন সন্দেহের সম্মুখীন হয়ে থাক যা তোমার প্রতি আমি নাযিল করেছি, তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো যারা তোমার পূর্ব থেকে কিতাব পাঠ করছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট থেকে তোমার নিকট সত্য বিষয় এসেছে। কাজেই তুমি কস্মিনকালেও সন্দেহকারী হয়ো না।

ইহুদি ও খৃষ্টান উভয়ই মুহাম্মদের কোরান সম্পর্কে ও মুহাম্মদের নবূয়ত্ব সম্পর্কে সন্দেহ পোষন করতে থাকলে মুহাম্মদ তখন উক্ত আয়াত প্রচার করে বলে- আগের কিতাব তৌরাত ও ইঞ্জিল যারা পাঠ করছে ,তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে , যে কোরান ও মুহাম্মদের নবুয়ত্ব সঠিক কি না। মুহাম্মদের সময়কালে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব যদি বিশুদ্ধ না হতো , তাহলে কি কোরান বা মুহাম্মদ এই কথা বলত ? উল্লেখ্য , এই আয়াতে মুহাম্মদ বুঝাতে চাচ্ছে যে , আগের কিতাবে মুহাম্মদের নবূয়ত্বের কথা লেখা আছে। সুতরাং যারা তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব পাঠ করছে , তারা বুঝতে পারবে যে , মুহাম্মদ সত্যিই নবী। তার মানে মুহাম্মদ নিজেকে নবী প্রমানের জন্যে , তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাবকে সাক্ষী মানছে।


বর্তমানে মুসলমানরা দাবী করে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত, অথচ এই একই তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব মুহাম্মদের সময় ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে ছিল। সেই সময়কার তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব বা বাইবেলই হুবহুই আজকের বাইবেল। খেয়াল করতে হবে , কোরানের এইসব কথা বার্তা বলা হচ্ছে , মক্কা ও মদিনায় , যেখানে খুব বেশী ইহুদি খৃষ্টান বাস করত না। তখন গোটা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র ইহুদি খৃষ্টান বাস করত আর তখন এসব যায়গায় বাইবেলের শত শত নয় , হাজার হাজার কপি বিদ্যমান ছিল। সুতরাং আজকের যে বাইবেল তা হুবহু সেই মুহাম্মদের সময়কার বাইবেল। কারও পক্ষে সেই হাজার হাজার কপি বাইবেল বিকৃত করে আজকের বাইবেল তৈরী করা সম্ভব না।


কোরান বা মুহাম্মদ যে বাইবেলকে বার বার সত্যায়ন করছে, এমন কি বিচারের জন্যে বাইবেলকে সাক্ষী মানছে , বর্তমানে সেই বাইবেলকে বিকৃত বলে প্রচার করে মুসলমানরা আসলে কি প্রমান করছে ? তারা বস্তুত: এটাই প্রমান করছে , মুহাম্মদ কোন সত্য নবী নয় , কিতাবিয় ধারার নবী নয় , কারন তারা তাদের নবী ও কোরানের কথাকেই অস্বীকার করছে। কিন্তু কি আজব ব্যাপার , মুসলমানরা এতটাই অন্ধ যে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না।


তার মানে , মুসলমানরা নিজেরাই আসলে মুহাম্মদকে নবী নয় হিসাবে প্রমান করছে, কিন্তু তারা তাদের অন্ধত্বের কারনে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না।




63 views0 comments
bottom of page