
প্রিয় পাঠক, পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলির মধ্যে খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে।
খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের সাদৃশ্য
খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে অনুসারীরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন, যিনি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বত্র বিরাজমান, অনন্ত, এবং অসীম। উভয় ধর্মের অনুসারীরা ঈশ্বরকে পবিত্র, ধার্মিক, এবং ন্যায়পরায়ণ হিসেবে বিশ্বাস করেন। পাশাপাশি তাঁরা ঈশ্বরকে প্রেমময়, ক্ষমাশীল, এবং করুনাময় হিসেবে মানেন।
খ্রিস্টানরা এবং ইহুদীরা হিব্রু শাস্ত্র বা পুরাতন নিয়মকে ঈশ্বর থেকে প্রাপ্ত বাক্য হিসেবে দাবি করে। উভয় ধর্মই এটিকে ঈশ্বরের দেওয়া শাস্ত্রের অংশ হিসেবে মান্য করে। তারা একই পুরাতন নিয়ম অনুসরণ করে, যার অনেক শিক্ষাই উভয়ের জন্য একই রকম। তবে খ্রিস্টানরা নতুন নিয়মকেও ঈশ্বরের বাক্য হিসেবে গ্রহণ করে।
দুই ধর্মের অনুসারীরা স্বর্গ, নরক এবং ধার্মিক ও দুষ্টদের জন্য আলাদা স্থানকে বিশ্বাস করে। তবে কিছু খ্রিস্টান ও ইহুদি দল রয়েছে যারা অনন্ত নরককে বিশ্বাস করে না।
বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য
ইহুদি ধর্মকে ইহুদি ধর্মমত (Judaism) এবং খ্রিস্টানদের ধর্মকে খ্রিস্টবিশ্বাস (Christianity) বলা হয়। এছাড়াও ইহুদি-খ্রিস্টান বা মসীয়ভিত্তিক ইহুদি নামে একটি দল রয়েছে যারা দাবি করে যে খ্রিস্টান ও ইহুদীরা নীতিগতভাবে এক। উভয় ধর্মই শিক্ষা দেয় যে ইস্রায়েল জাতি এবং ইহুদি লোকদের জন্য ঈশ্বরের একটি বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
খ্রিস্টান ও ইহুদীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল যিশু খ্রিস্টকে নিয়ে। ইহুদীরা যিশুকে মসীহ হিসেবে স্বীকার করে না।
ইহুদি ধর্ম (বা ইসলাম) ধারণা একইরকম যে, মানুষ তার নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি উচ্চতর অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। মানুষ তার প্রচেষ্টা, ত্যাগ বা সুকর্মের সুবিধাভোগী। জান্নাত হল মানুষের কঠোর আনুগত্যের পুরস্কার।
কিন্তু, খ্রিস্টধর্মে, ঈশ্বর উদ্যোগী এবং মানুষ সুবিধাভোগী (রোমানস ৮:৩)। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে, মানুষ ঈশ্বরের সাথে সঠিকভাবে সম্পর্কিত হওয়ার জন্য কিছুই করতে পারে না (ইসাইয়া ৫৩:৬; ৬৪:৬; রোমানস ৩:২৩; ৬:২৩)। খ্রিস্টধর্ম অনুসারে, ঈশ্বর আমাদের জন্য যা করতে পারেনি তা তিনি আমাদের জন্য করেছেন (কলসীয়ানস ২:১৩; ২ করিন্থীয়ানস ৫:২১)। আমাদের পাপ আমাদের ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে পৃথক করে, এবং পাপকে শাস্তি পেতে হবে (রোমানস ৬:২৩; মথি ১০:২৮; ২৩:৩৩)। কিন্তু, ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন বলে, তিনি আমাদের শাস্তি নিজের উপর নিয়েছেন। আমাদের যা করতে হবে তা হল বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের পরিত্রাণের উপহার গ্রহণ করা (এফেসীয়ানস ২:৮-৯; ২ করিন্থীয়ানস ৫:২১)। অনুগ্রহ হল অযোগ্যদের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদ।
খ্রিস্টানদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যিশু খ্রিস্ট
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশু খ্রিস্টই পুরাতন নিয়মের মসীহের ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা করেছেন। খ্রিস্টান শিক্ষায় বলা হয়:
“প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন, . . . সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন” (যোহন ১:১,১৪ পদ)।
খ্রিস্টানরা শিক্ষা দেয় যে যিশু খ্রিস্ট তাঁর জীবন দিয়ে মানবজাতির পাপের জন্য মূল্য দিয়েছেন:
“কিন্তু ঈশ্বর যে আমাদের ভালোবাসেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা পাপী থাকতেই খ্রিস্ট আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন” (রোমীয় ৫:৮ পদ)।
ইহুদীরা যিশুকে মসীহ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে
ইহুদীরা যিশুকে মসীহ হিসেবে গ্রহণ করে না এবং বিশ্বাস করে না যে যিশু ঈশ্বরের অবতার ছিলেন বা মানবজাতির পাপের জন্য তাঁর বলিদান প্রয়োজন ছিল। ইহুদীরা তাঁকে খ্রিস্ট বা মসীহ হিসেবে মানে না।
মূল সমস্যা
যিশু খ্রিস্টের ব্যক্তি এবং তাঁর কর্মই খ্রিস্টান ও ইহুদীদের মধ্যে প্রধান বিতর্কের বিষয়। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশুই সেই প্রতিশ্রুত মসীহ যিনি পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করেছেন, যেখানে ইহুদীরা এখনও সেই প্রতিশ্রুত মসীহের অপেক্ষায় আছে।
যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের মূল ভিত্তি, যা ইহুদীরা প্রত্যাখ্যান করে।
উপসংহার
খ্রিস্টান ও ইহুদীদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য যিশু খ্রিস্টকে নিয়ে। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশুর বলিদান মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য অপরিহার্য ছিল, যা ইহুদীরা মানে না। তবে উভয় ধর্মের শিক্ষা, ঐতিহ্য, এবং বিশ্বাসের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে।
A leading Python training institute in Pune, offering comprehensive courses for beginners and professionals. Learn Python programming from expert trainers with hands-on projects, real-world applications, and industry-relevant curriculum. Flexible schedules and certification upon completion ensure your success.