নিম্নের আয়াত গুলো পড়ুনঃ
"এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী (খায়রু আল-মাকিরেনা)।" (সূরা আল ইমরান: ৫৪)
"তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের (মাকরা আল্লাহী) ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও (মাকরা আল্লাহী) থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।" (সূরা আল আ’রাফ: ৯৯)
"তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্ত করেছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি (ওয়ামাকারো মাকরান ওমাকর্ণ মাকরান)।" (সূরা নমল:৫০)
কুরআন আল্লাহর বর্ণনা দেবার সময় "মাকরা" শব্দটা ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বাংলা অনুবাদের সময়, অনুবাদক "মাকরা" র আসল অর্থটা ব্যবহার না করে "কুশলী" শব্দটা ব্যবহার করেছেন।
মাকরা (মিম-কাফ-রা) শব্দের আসল অর্থ হলো "প্রতারণা" বা "ছলনা" বা "চক্রের অনুশীলন করা", "ছদ্মবেশ বা মিথ্যা অনুশীলন করা", "ষড়যন্ত্র করা", "শিল্প বা নৈপুণ্য বা চতুর অনুশীলন করা", "স্তরচর্চা অনুশীলন করা"।
এখন আমরা দেখতে পাই যে ইসলামের আল্লাহ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য অনেক সময় প্রতারণা অথবা ষড়যন্তের আশ্রয় নেন। মুসলিমরা আল্লাহ আকবর এর অর্থ আল্লাহ মহান, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বুঝায় কিন্তু কোরানের আল্লাহ আবার কখনো ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেন। কিন্তু কেন? তিনি কি সর্বশক্তিমান না?
তাই আসুন আমরা কোরানের সূরা ৪:১৫৭-১৫৮ আয়াত দেখি -
"আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না কুরুশে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" (সূরা নিসা: ১৫৭-১৫৮)
মুসলিমদের ধারণা হল আল্লাহ কখনও তাঁর নবীকে ক্রুশের মত লজ্জাজনক মৃত্যুকে অনুমতি দিতে পারেন না। কুরআনের সূরা ৪:১৫৭-১৫৮ - এ তা স্পষ্ট রয়েছে। মুসলিম ধর্মতত্ত্ববিদরা এই আয়াতে অনুবাদ করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বলেন যে ঈসাকে ইহুদীরা মারেন নি, তাঁকে রোমানরা মেরেছেন, কেননা রোমান আইন অনুসারে তাঁর মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয়। এরা তাঁর মৃত্যুকে বিশ্বাস করে। অন্যান্যরা বলে যে ক্রুশে এরকম লজ্জাজনক মৃত্যুর চেয়ে আল্লাহ বরং তাঁকে জীবন্ত তুলে নিয়েছেন। তারা কোরআনের আয়াতকে আক্ষরিকভাবে অনুবাদ করেন। আবার কেউ কেউ বলে যে, একজন মারা গিয়েছে, কিন্তু সে ঈসা নয় তাহলে তাদের মতে সে কে?
এবিষয়ে ইসলামে একাধিক মত প্রচলিত রয়েছে। [ পবিত্র কোরআনুল করিম পৃষ্ঠা ২৯৪] ইহুদীরা যখন ঈসাকে হত্যা করতে বদ্ধ পরিকর হলো তখন তার ভক্ত সহচরবৃন্দ এক স্থানে সমবেত হলেন। ঈসা সেখানে উপস্থিত হলেন। শয়তান ইবলিস তখন রক্তপিপাসু ইহুদী ঘাতকদেরকে ঈসার অবস্থানের ঠিকানা জানিয়ে দিল। তখন চার হাজার ইহুদী ঈসার গৃহ অবরোধ করল। তখন ঈসা সিয়ভক্তদের বললেন, তোমাদের মধ্যে কে এই গৃহ হতে বের হতে ও নিহত হতে এবং পরকালে বেহেশতে আমার সাথি হতে কে আগ্রহী? জনৈক ভক্ত মৃত্যুর জন্য উঠে দাড়াইল। তখন ঈসা তাঁকে তার পোশাক পড়িয়ে দিলেন, এর পরে তাকে ঈসার সাদৃশ্যের মত করে দেওয়া হল। ইহুদীরা তাকে নিয়ে ক্রুশে দিল। অপর দিকে ঈসাকে আল্লাহ আসমানে তুলে নিলেন।
আরেক মতে, [ পবিত্র কোরআনুল করিম পৃষ্ঠা ২৯৪ ] ইহুদীরা তায়তালানুস নামক জনৈক নরাধমকে সর্বপ্রথম ঈসাকে হত্যা করার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ তাকে আসমানে তুলে নিলেন, সে তার নাগাল পেল না।বরং ইতি মধ্যে তার নিজের চেহারা ঈসার মত হয়ে গেল। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে যখন গৃহ থেকে বের হয়ে আসলেন, তখন অন্য ইহুদীরা তাকেই ঈসা মনে করে ক্রুশে হত্যা করল।
এর পরে পবিত্র কোরআনুল করিমের বর্ণনায় বলা হচ্ছে, উপরের ঘটনায় যে কোন একটি সত্য হতে পারে। কুরআন এই সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই ব্যক্ত করেনি। অতএব প্রকৃত ঘটনাবলীর সঠিক খবর একমাত্র আল্লাহই জানেন। অবশ্য কোরআনের আয়াত ও তফসীর সংক্রান্ত রেওয়াতে সমন্বয় করা যায় যে, প্রকৃত ঘটনা ইহুদি ও খ্রীষ্টানদের অজানাই ছিল। বিভিন্ন মতানৈক্য ও ইসলামে ঈসার মৃত্যু বিষয়ে অস্পষ্টতার আলোকে বলা যায় যে, সন্দেহ জনক বা রহস্যজনক কোন বিষয় নিয়ে ইসলাম এত বড় চেলেঞ্জ খ্রীষ্টান ধর্মের দিকে ছুড়ে দিতে পারে না।
প্রশ্ন : এই আয়াতে কুরুশের কথা বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে কাউকে কুরুশে চড়ানো হয়েছিল। সেই লোকটা কে?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর ইসলাম সঠিকভাবে দেয় না, যা বলে তা শুধু ধারণামাত্র। কেননা ভিন্ন ভিন্ন মত ও ব্যাখ্যা বিষয়টিকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করে কারণ যদি আল্লাহ ঈসাকে তাঁর কাছে তুলে নেবেন, তাহলে আরেক জনকে ঈসার মত বানানোর কি প্রয়োজন রয়েছে? তিনি সবার গোচরেই তাঁকে বেহেশতে তুলে নিতে পারতেন। যেমন তিনি ইলিয়াসকে তুলে নিয়েছেন (২ রাজা ২ :১-১২)। যেমন আল্লাহ ইদ্রিস নবীকে তুলে নিলেন - (আদিপুস্তক ৫:২১-২৪)। কোন কোন দল মনে করে যে ইহুদীদের তাড়া খেয়ে ঈসা বাইতুল মুকাদ্দাসে ঢুকেন, সেখানে দেয়ালে একটি ছোট ছিদ্র হয়ে যায় এবং ঈসাকে আল্লাহর কাছে তুলে নেওয়া হয়।
ঈসার সাহাবীরা সাক্ষী যে ইহুদীরা ঈসাকে ক্রুশে দিয়েছে। যদিও কোন কোন সাহাবীগণ পালিয়ে যান, অনেকে দাড়িয়ে ঈসার মৃত্যু দেখেন, ঈসার মাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সাহাবীগণ পরে ঈসার মৃত্যুকে প্রচার করতে শহীদ হন। কোন মিথ্যা বিষয়ের জন্য কি তারা মারা যাবেন? এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে থাকা পৌল পরে ঈসার ক্রুশীয় মৃত্যুকে প্রচারের ভিত্তি করেনি? তাছাড়া ঈসা যে মারা যাবেন তা আগেকার নবীদের কাছে আল্লাহ তা প্রকাশ করেছেন। কিভাবে তিনি মারা যাবেন তাও বলা হয়েছে। এ দুনিয়াতে ঈসার আসার উদ্দেশ্য হল পাপিদের জন্য তাঁর কুরবানী হওয়া।
প্রশ্ন : এই আয়াতে বলা হয়েছে যে "এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল"। কিন্তু কেন? কে এই ধাঁধার সৃষ্টি করেছিল ? আল্লাহ তো সর্বশ্রেষ্ট, তবে কেন তিনি এটা করলেন?
উত্তর: আল্লাহর নিকট হইতে এই কথা এসেছে এটি সত্য নয়। কারণ আল্লাহর নিকট হইতে ঈসা এসেছেন। পাপিদের পরিত্রাণ করতে, পাপিদের জন্য ক্রুশে মরতে। এটি আল্লাহর নামে চালিয়ে দেওয়া একটি ভ্রান্ত শিক্ষা। যেন লোকেরা সুসমাচার গ্রহন করে নাজাতপ্রাপ্ত না হন। কারণ আল্লাহর কোন ধাধার প্রয়োজন নেই। তিনি সর্বশক্তিমান তার কাজ প্রকাশিত।
প্রশ্ন : যীশুর তো ১২ জন শীৰ্ষ ছিলেন। তাদের সবাইকে কেন বোকা বানানো হলো?
উত্তর: এই ঘটনাগুলোর ঐতিহাসিক কোন সত্যতা নেই। এগুলো ধারণা, যদি, হয় তো থেকে উৎপত্তি। এখানে বোকা বানানোর কথা প্রচার করা হচ্ছে যেন সুসমাচার প্রচারে একটু বিগ্ন করা হয় এটি আল্লাহর কাজ নয়। কেননা আল্লার তো এটা করার কোনো দরকার ছিল'না।
প্রশ্ন: প্রেরিত শিষ্যরা যদি একটা বানানো ধর্ম প্রচার করতেন তাহলে তো এটা তাদের দোষ না, কারণ আল্লাহই তাদের প্রতারণা করেছেন। তাহলে কি খ্রীষ্টান ধর্মের উৎপত্তির জন্য আল্লাহই দায়ী?
উত্তর: ঈসার মৃত্যুর এই পরিকল্পনা স্বয়ং আল্লাহ কতৃক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ইসলাম যে ব্যাখ্যা দেয় তাতেও ঈসার সাহাবীদের প্রচার সত্য বলে প্রতিষ্টিত হয়। আর এটি সত্য বলে প্রকাশ পাচ্ছে যে আল্লাহই ঈসার মৃত্যু উপর খ্রীষ্টান ধর্মের ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। এই দায় আল্লাহর।
প্রশ্ন: কেন একটা একটা বানানো ধর্মের জন্য প্রেরিত শিষ্যরা শহীদ হয়েছিলেন?
উত্তর: প্রেরিত শিষ্যরা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন ঈসার মৃত্যু সত্য ও গ্রহনযোগ্য পাপ ক্ষমার জন্য। এটি বানানো কোন গল্প নয়, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রকাশ।
ঈসার ক্রুশের মৃত্যু আল্লাহর এক অনন্তকালীন পরিকল্পনার অংশ। আল্লাহ ঈসাহাকের কুরবানীর পরিবর্তে যে মেষের ব্যবস্থা করেন তা ঈসা মসীহের অতীত নমুনা। আল্লাহ তাঁর গৌরবের বিরুদ্ধে কৃত মানুষের পাপকে কেবল ঈসার প্রায়শ্চিত্যমূলক মৃত্যু ও পুনুরুন্থান দ্বারা ক্ষমা করতে পারেন। ঈসা মসীহ যা করেছেন তা ইবরাহিম ও ঈসাহাকের কোরবানিতে প্রতীক হিসাবে আল্লাহ আল্লাহ দেখিয়েছেন -
"আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচিকৃত হয়, এবং রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না। ভাল, যাহা যাহা স্বর্গস্থ বিষয়ের দৃষ্টান্ত, সেগুলির ঐ সকলের দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক ছিল; কিন্তু যাহা যাহা স্বয়ং স্বর্গীয়, সেগুলির ইহা হইতে শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক।" (ইব্রীয় ৯:২২-২৩)
"তোমরা ত জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ।তিনি জগৎপত্তনের অগ্রে পূর্ব্বলক্ষিত ছিলেন, কিন্তু কালের পরিণামে তোমাদের নিমিত্ত প্রকাশিত হইলেন;" (১ পিতর ১:১৮-২০)
অতএব আমরা উপরোক্ত কোরআন ও বাইবেলের তত্ত্ব বিশ্লেষণে এটি খুব সহজেই বুঝতে পারি যে, ঈসা মসীহের মৃত্যু সম্পর্কে কোরানের আল্লাহ মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
Comments