আল্লাহ আর ইয়াহওয়ে কি এক?
- সত্য অন্বেষী
- Jun 2
- 2 min read
আমরা প্রায়ই শুনি, “সব ধর্মের ঈশ্বর এক” বা “আল্লাহ আর খ্রিস্টানদের ঈশ্বর একই।” কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, ইসলামের আল্লাহ এবং বাইবেলের ঈশ্বর, ইয়াহওয়ে-এর মাঝে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। বিশেষ করে যখন আমরা প্রেম, ক্ষমতা, এবং ঈশ্বরের স্বভাব নিয়ে চিন্তা করি।
এই ব্লগে আমরা খুব সহজভাবে এই তিনটি বিষয়ে কথা বলবো, যেন আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন — কে সত্যিকারের ঈশ্বর?
১. প্রেম: ঈশ্বর কি কেবল দয়ালু, নাকি তিনিই প্রেম?
ইসলামে আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে। এর মধ্যে আছে — করুণাময় (আর-রাহমান), দয়ালু (আর-রহিম), ন্যায়বান (আল-আদল), এবং সর্বশক্তিমান (আল-কাদির)। কিন্তু একটা নাম খুঁজে পাবেন না — “প্রেম” (মাহাব্বা)।
অন্যদিকে, বাইবেলে বলা হয়:
“যেহেতু ঈশ্বর প্রেম, সেইজন্য যে প্রেম করে, সে ঈশ্বরকে জানে।”
– ১ যোহন ৪:৮
(God is love – 1 John 4:8)
এই আয়াত আমাদের জানায়, ইয়াহওয়ে কেবল প্রেম করেন না — তিনিই প্রেম। প্রেম তাঁর স্বভাবের অংশ, এবং তিনি চিরকাল প্রেমের মধ্যে বিরাজ করেন।
ইসলামে আল্লাহর দয়া শর্তসাপেক্ষ — তিনি কেবল তাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখান যারা তাঁর আদেশ মেনে চলে। কিন্তু ইয়াহওয়ে এমন এক ঈশ্বর, যিনি তখনো আমাদের প্রেম করেছিলেন যখন আমরা পাপী ছিলাম।
“কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি নিজের প্রেম এইভাবে প্রকাশ করেছেন, আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনই খ্রীষ্ট আমাদের জন্য মরেছেন।” – রোমীয় ৫:৮
২. ঈশ্বরের ক্ষমতা: একজন সত্যিকারের ঈশ্বর কি নিজেকে রক্ষা করেন, নাকি মানুষকে দিয়ে রক্ষা করান?
ইসলামে বলা হয়, মুসলমানদের উপর দায়িত্ব রয়েছে ইসলাম ও কুরআন রক্ষা করার, এমনকি প্রয়োজনে যুদ্ধ করেও (সূরা ৯:৫, ৮:১২)। কেউ যদি নবী মুহাম্মদকে অপমান করে, বা ইসলাম নিয়ে কিছু বলে, অনেক সময় তার কঠোর শাস্তির দাবি করা হয়।
এতে একটি প্রশ্ন উঠে আসে:
যদি আল্লাহ সত্যিই সর্বশক্তিমান হন, তাহলে কেন তাঁকে মানুষ দিয়ে নিজ ধর্ম রক্ষা করাতে হয়?
একজন প্রকৃত ঈশ্বরকে যদি মানুষের রক্ষক বানাতে হয়, তাহলে সেই ঈশ্বর তো সর্বশক্তিমান হতে পারেন না। প্রকৃত শক্তি তো এমন, যা কারো অবমাননায় প্রতিশোধ নেয় না — বরং ক্ষমা করে।
এই জায়গায় ইয়াহওয়ের আচরণ সম্পূর্ণ আলাদা। যখন যীশু (যিনি ইয়াহওয়ের পূর্ণ প্রকাশ) অপমানিত হলেন, তখন তিনি প্রতিশোধ নেননি। বরং বললেন:
“পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা জানে না এরা কী করছে।” – লূক ২৩:৩৪
এটাই হলো একমাত্র সত্যিকারের ঈশ্বরের পরিচয় — যিনি নিজেই ন্যায়ের রক্ষা করেন, কিন্তু সেটা করে ক্ষমার মাধ্যমে, আত্মত্যাগের মাধ্যমে।
৩. প্রেম মানে সম্পর্ক — আর সম্পর্ক সম্ভব শুধু ত্রিত্বের ঈশ্বরের মধ্যেই
এখানেই সবচেয়ে গভীর সত্যটি লুকিয়ে আছে।
ইসলামে আল্লাহ একা — তিনি চিরকাল একা ছিলেন, এবং তাঁর কোনো সন্তান বা সঙ্গী নেই। তাহলে প্রশ্ন হলো, একজন চিরকাল একা ঈশ্বর কাকে প্রেম করবেন?
প্রেম মানেই সম্পর্ক — প্রেম কেবল তখনই সম্ভব যখন অন্য কেউ থাকে যাকে প্রেম করা যায়।
এইখানেই ইয়াহওয়ে অনন্য। বাইবেলের ঈশ্বর এক, কিন্তু তিন ব্যক্তিত্বে বিরাজমান — পিতা, পুত্র (যীশু), এবং পবিত্র আত্মা। ত্রিত্বে তিনজন ব্যক্তি একসাথে চিরকাল প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ। এই প্রেমই আমাদের সৃষ্টি করেছে, এবং আমাদের সেই প্রেমে অংশ নিতে ডাকে।
শেষ কথা
প্রেম তখনই সত্য যখন তা নিঃস্বার্থ, চিরস্থায়ী, এবং সম্পর্কময় হয়। এই প্রেম কেবল সেই ঈশ্বরই দিতে পারেন যিনি নিজেই প্রেম, এবং যিনি চিরকাল নিজ মধ্যেই সম্পর্কে বিরাজমান — পিতা, পুত্র, এবং পবিত্র আত্মা। তাঁর নাম ইয়াহওয়ে — এবং তিনিই একমাত্র সত্যিকারের ঈশ্বর।
Comments