আমাকে কিছু খ্রীষ্টান ভাই প্রশ্ন করেছেন, দশমাংশ নতুন নিয়মের শিক্ষা নয়। এই কথাশুনে আমি নড়েচড়ে বসলাম, এবং মনে মনে ভাবলাম এই ব্যক্তির মত খাঁটি ঈশ্বরের বাক্য পালনে আগ্রহী দ্বিতীয় ব্যক্তি আমি এপর্যন্ত দেখিনি। আমার মনে প্রশ্ন আসল কি উদ্দেশ্য তিনি এই প্রশ্ন করছেন? তিনি কি দশমাংশ দিতে আগ্রহী? নতুন নিয়মে ঈশ্বর যতগুলো আদেশ দিয়েছেন তা কি তিনি সম্পূর্ণরূপে যথাযথ পালন করছেন? আসুন বাইবেলে বর্ণিত সেই ধনী যুবকের কথা স্মরণ করি, যে অনন্তজীবন লাভের আগ্রহ নিয়ে যীশুকে প্রশ্ন করেছিল, " কি করলে অনন্তজীবন পাব। যীশুর উত্তর ছিল, দশআজ্ঞা পালন করতে, তখন সেই ধনী যুবক উত্তর দিয়েছিল তিনি দশআজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে পালন করেন কিন্তু তার পরেও সে অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা পায় নি কারণ ব্যবস্থায় তার বিশ্বাস ছিল না। পরে যীশু তাকে এক নতুন আদেশ দিলেন, " তা হলো তুমি তোমার সমস্ত ধন সম্পদ গরীবদের দান করে দিয়ে এসে যীশুর শিষ্য হও। কিন্তু সেই ধনী যুবক চলে গেল। তখন যীশু বললেন, " সুইচের ছিদ্র দিয়ে উঠের প্রবেশ সহজ কিন্তু ধনীদের জন্য স্বর্গে প্রবেশ করা তার চেয়েও কঠিন।
আমার প্রশ্নঃ আপনি কি নতুন নিয়মের সকল পালনীয় আদেশ যথাযথ বিশ্বস্তভাবে পালন করছেন?
১। দশমাংশ দানে সাধারণ আপত্তি হল, এটি ব্যবস্থামূলক বিষয়। কেউ কেউ বলে, " আমরা ব্যবস্থার অধীন নই, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন " রোমীয় ৬:১৪। অতএব এখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের পক্ষে দশমাংশ নেই।
"হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক; আর ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ; কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকলও পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল।" #মথি ২৩:২৩
ক. খুব চমক লাগে যে, আমাদের প্রভু এই পদে দশমাংশ অনুমোদন করলেন, যেহেতু অধ্যাপক ও ফরশীদের প্রতি সামান্য ধৈর্য রেখে তিনি সময় নষ্ট না করে বিষয়টার মর্ম তাদের সামনে তুলে ধরলেন। মথি ২৩ অধ্যায় পড়লে আপনি দেখবেন, আমাদের প্রভু তাদের প্রতি আক্রমণ ফিরিয়ে নেননি। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন। তিনি কেবল ২৩ পদে দশমাংশ সম্পর্কে উল্লেখ করলেন ও পরে এ প্রসঙ্গে কোন কিছু বলতে চাইলেন না। কিন্তু তিনি আরও কিছু বললেন। যদিও তিনি ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস সম্পর্কে উল্লেখ করলেন, যেগুলো ব্যবস্থার মূল বিষয়। এগুলোতে জ্বর দিলেও তিনি দশমাংশ পরিত্যাগ করতে বলেন নি। তিনি বললেন এ সকল পালন করা এবং ঐ সকলও পরিত্যাগ না করা তোমাদের উচিৎ ছিল। আমি বলি, আমাদের প্রভু সম্ভবত তাদের পোদিনা, মৌরী ও জিরার দশমাংশের প্রতি আলোকপাত করলেন, অন্যান্য মসলার দশমাংশ দিয়ে থাকো। যীশুর পক্ষে এমন অতিরিক্ত যত্নশীল দশমাংশ অবহেলা করা উপযুক্ত স্থান ছিল কিন্তু তিনি তা না করে ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস অনুশীলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঐ প্রকার সামান্য দশমাংশ অনুমোদন করতে নিজে যত্নশীল হলেন।
খ. যদি দশমাংশ ব্যবস্থার অংশ ছিল, যা নতুন নিয়মে বিলুপ্ত হত বা করা যেত তা হলে প্রভু এখানে তা করতেন। তিনি সে কাজ করেন নি।আমরা মথি ২৩:২৩ ও লুক ১১:৪২ পদে পরিস্কার দেখতে পাই আমাদের প্রভু দশমাংশকে সমর্থন করেছেন।
যদি যীশু দশমাংশ সমন্ধে " ঐ সকল পরিত্যাগ না করা উচিৎ " কথাটি প্রভু না বলতেন, আমি জানি না আজ মিশনগুলি কোথায় থাকত!
২। "সেই যে মল্কীষেদক, যিনি শালেমের রাজা ও পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক ছিলেন, অব্রাহাম যখন রাজাদের সংহার হইতে ফিরিয়া আইসেন, তিনি তখন তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, ও তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং অব্রাহাম তাঁহাকে সমস্তের দশমাংশ দিলেন। প্রথমে তাঁহার নামের তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করিলে তিনি ‘ধার্ম্মিকতার রাজা’, পরে ‘শালেমের রাজা’, অর্থাৎ শান্তিরাজ; তাঁহার পিতা নাই, মাতা নাই, পূর্ব্বপুরুষাবলি নাই, আয়ুর আদি কি জীবনের অন্ত নাই; কিন্তু তিনি ঈশ্বরের পুত্রের সদৃশীকৃত; তিনি নিত্যই যাজক থাকেন। বিবেচনা করিয়া দেখ, তিনি কেমন মহান্, যাঁহাকে সেই পিতৃকুলপতি অব্রাহাম উত্তম উত্তম লুটদ্রব্য লইয়া দশমাংশ দান করিয়াছিলেন।
আর লেবির সন্তানদের মধ্যে যাহারা যাজকত্ব প্রাপ্ত হয়, তাহারা ব্যবস্থানুসারে প্রজাবৃন্দের অর্থাৎ নিজ ভ্রাতৃগণের কাছে দশমাংশ গ্রহণ করিবার বিধি পাইয়াছে, যদিও তাহারা অব্রাহামের বংশ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে;
কিন্তু ঐ যে ব্যক্তি তাহাদের বংশজাত বলিয়া নির্দ্দিষ্ট নহেন, তিনি অব্রাহাম হইতে দশমাংশ লইয়াছিলেন, এবং প্রতিজ্ঞাকলাপের সেই অধিকারীকেই আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন।
ক্ষুদ্রতর পাত্র গুরুতর পাত্রকর্ত্তৃক আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়, এই কথা ত সমস্ত প্রতিবাদের বহির্ভূত।
আবার এই স্থলে মরণশীল মনুষ্যেরাই দশমাংশ পায়, কিন্তু ঐ স্থলে তিনি পান, যাঁহার বিষয়ে এমন সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছে যে, তিনি জীবনবিশিষ্ট। আবার ইহাও বলিলে বলা যাইতে পারে যে, অব্রাহামের দ্বারা দশমাংশগ্রাহী লেবি আপনি দশমাংশ দিয়াছেন,কারণ যখন মল্কীষেদক তাঁহার পিতার সহিত সাক্ষাৎ করেন, তখন লেবি পিতার কটিতে ছিলেন।" #ইব্রীয় ৭:১-১০
ক. সত্য হচ্ছে দশমাংশ দেওয়া এটি ব্যবস্থার শিক্ষা নয়। #আদিপুস্তক ১৪:২০ পদে প্রথম ইবরাহিম দশমাংশ দেন, মল্কীষেদককে। প্রশ্ন কে এই মল্কীষেদক?
ইব্রীয় পত্রের লেখক মল্কীষেদক সম্পর্কে বলছেন তিনি শ্যালেমের রাজা ও পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক ছিলেন। ইবরাহিম লুন্ঠিত দ্রব্যের দশমাংশ সেই যাজকে দিয়েছেন।
খ. তিনি ধার্মিকতার রাজা, শান্তিরাজ, ঈশ্বরের পুত্রের সদৃশীকৃত তিনি অনন্তকালীন যাজক।
এই মল্কীষেদক ঈশ্বরের পুত্র যীশু স্বর্গীয় যাজকত্বের প্রতিনিধি, কেননা যীশুই অনন্তকালীন যাজক হিসাবে আমাদের যাজকত্ব নিজ রক্ত দিয়ে সম্পূর্ণ করেছেন।
"ভাল, আমরা এক মহান্ মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে।
অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।" #ইব্রীয় ৪:১৪-১৬
সুতরাং নতুন নিয়মের শিক্ষা পরিস্কার মল্কীষেদকের মত, প্রভু যীশুকে আমাদের আয়ের দশমাংশ দিয়ে সম্মানিত করি। কারণ এই দশমাংশ ঈশ্বরের অধিকার এটি তার।
#কল ১: ১৮ "আর তিনিই দেহের অর্থাৎ মন্ডলীর মস্তক; [ দশমাংশ মন্ডলী যীশুর দেহ প্রাপ্য] ।"