“তখন তিনি যীশুকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়| আর তখন তাহারা যীশুকে লইল, এবং তাহাকে লইয়া চলিতে লাগিল| আর তিনি আপন ক্রুশ বহন করিতে করিতে বাহির হইয়া মাথার খুলির স্থান নামক স্থানে গেলেন, ইব্রীয় ভাষায় সেই স্থানকে গল্গাথা বলে: তথায় তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিল, এবং তাঁহার সহিত আর দুইজনকে দিল, দুই পার্শ্বে দুইজনকে, এবং মধ্যস্থানে যীশুকে।" #যোহন ১৯:১৬-১৮
যে দিনে যীশু ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করে তা মনুষ্যজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনের চতুর্থ এক দিন। প্রথম দিন ছিল যখন ঈশ্বর প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করেন। দ্বিতীয়টি ছিল পতনের দিন, যখন মানুষ পাপ করে এই জগতের ধ্বংস ডেকে আনলো। তৃতীয় দিনটি ছিল যখন নোহের সময়ে জলপ্লাবন হয়। কিন্তু চতুর্থ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনটি ছিল সেই দিন যেদিনে খ্রীষ্ট ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেন, সেই গলগাথা পাহাড়ের উপরে যিরুশালেম নগরীর বাইরের জায়্গাটিতে। যে দিনে যীশু ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেন সেই দিনে মনুষ্যজাতির সমুদয় ইতিহাসের পরিবর্তন ঘটে - চিরকালের জন্য! হাজার হাজার মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়। আত্মা সকল রূপান্তরিত হয়, আর এই জগতের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। আজ ২০২০ সনে আমরা সে দিনটিকে আবার দেখবো যে দিনে খ্রীষ্ট মারা যান আর দেখবো সেই চারটি মহত্বপূর্ণ ঘটনা যা সেই সময়ে ঘটেছিল।
প্রথম, পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে রইল
বাইবেল বলে: “পরে ছয় ঘটিকা [দুপুরবেলা] হইতে নয় ঘটিকা [বিকাল ৩টা] পর্যন্ত সমুদয় দেশে অন্ধকার হইয়া রহিল” (#মথি ২৭:৪৫)। আমাদের প্রভূকে ক্রুশের উপরে তিন ঘন্টা ক্রুশারোপিত করা হয়, যেটা কি না সকাল নয় ঘটিকা। দুপুর বারোটার মধ্যে, মানুষেরা ঈশ্বরের পুত্রের উপরে যা কিছু করার তার সমস্ত কিছুই তারা করেছে। এরপরে দুপুরের সময়ে, অন্ধকারময় অবস্থা হয়, আর তখন সেই ক্রুশ এক বেদীতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠে যেখান সেই মেষ সমুদয় জগতের পাপের ভার নিজের উপরে নিয়ে উৎসর্গীকৃত হন। মথি, মার্ক, এবং লূক আমাদের বলেন যে সেই দুপুর থেকে বিকাল তিনটে অবধি “সমুদয় দেশে” তখন অন্ধকার বিরাজ করতে থাকলো, আর এই সময়ে যীশু সেখানেই মৃত্যুবরণ করলেন।তিনি যখন অন্ধকার সম্বন্ধে বলেন তখন যদিও খ্রীষ্টের রক্ত বিষয়ে অযৌক্তিক বলেন, কিন্তু অন্ধকারের বিষয়ে তিনি ঠিক:এটা সূর্য গ্রহণের প্রভাব হতে পারে না, কারন যিহুদীরা ব্যবহার করতেন ল্যুনার বা চন্দ্র সংক্রান্ত ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা, আর নিস্তারপর্ব সব সময়েই পূর্ণিমার দিনে হত, তাই সূর্য গ্রহণের ব্যাপারটি প্রশ্নের বাইরে। এটা ছিল এক অতিপ্রাকৃতিক অন্ধকার। সেই অতিপ্রাকৃতিক অন্ধকার, তখনি সারা দেশে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে যখন খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করেন, যা আমাদের স্মরন করিয়ে দেয় মোশির সময়কার দ্বাদশতম অলৌকিক ঘটনার বিষয় যখন ইস্রায়েলীয় সন্তানেরা মিশর ত্যাগ করে ঠিক তার আগেকার অবস্থা: “পরে সদাপ্রভূ মোশিকে কহিলেন, তুমি আকশের দিকে হস্ত বিস্তার কর, তাহাতে মিশর দেশে অন্ধকার হইবে, ও সেই অন্ধকার স্পর্শনীয় হইবে| পরে মোশি আকাশের দিকে হস্ত বিস্তার করিলে; তিনদিন পর্যন্ত সমস্ত মিশর দেশে গাঢ় অন্ধকার হইল…” (#যাত্রাপুস্তক ১০:২১-২২)। মোশির সময়ে ঈশ্বর সেই তিমির অন্ধকার পাঠিয়েছিলেন। আর যীশু যখন ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেন তখনও ঈশ্বর সেই একই প্রকার অন্ধকার প্রেরণ করেছিলেন। তখন সূর্য ভালোভাবেই অন্ধকারে লুকিয়ে পড়েছিল, ও তার গৌরব বা উজ্বলতাকে রুদ্ধ করেছিল, ঠিক এমনিভাবেই, সৃষ্টিকারীদের পাপের জন্যই খ্রীষ্ট, সেই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা, মানুষের জন্য মৃত্যুবরণ করলেন”।
দ্বিতীয়, সেইদিনে মন্দিরের যবনিকা বা তিরষ্করিণী ছিঁড়ে গিয়েছিল
বাইবেল বলে, “আর দেখ, মন্দিরের তিরষ্করিণী উপর হইতে নিচ পর্যন্ত ছিঁড়িয়া দুই খান হইল, ভূমিকম্প হইল ও শৈল সকল বিদীর্ণ হইল” (#মথি ২৭:৫১)। মন্দিরের ভিতরে ছিল এক প্রকান্ড, মোটা যবনিকা বা তিরষ্করিণী। আমাদের সেই পবিত্র স্থানের কথা, বা উপযুক্ত মন্দিরের কথা বলা হয়েছে, যা লম্বায় ছিল নব্বই ফিট, চওড়ায় ছিল ত্রিশ ফিট এবং উচ্চতায় নব্বই ফিট…সে পবিত্র স্থানটি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম ষাট ফিট ছিল সেই পবিত্র স্থান…একটা প্রকান্ড মোটা যবনিকা পবিত্র স্থানের থেকে অন্য এক-তৃতীয়াংশ মন্দিরকে বা অট্টালিকাকে আলাদা করে রাখতো, যাকে বলা হত মহা-পবিত্র স্থান, বা সবথেকে পবিত্রতম স্থান। ডাঃ রাইস উল্লেখ করেছিলেন যে খুব উচ্চ মানের যাজক ছাড়া অন্য কেউ সেই সব থেকে পবিত্রতম স্থানটিতে যেতে পারতেন না। আবার সেই যাজকেরাও সেইস্থানে বছরে কেবলমাত্র একদিন, কেবল সেই বলিদানের দিনেই যেতে পারতেন। সুতরাং, খ্রীষ্ট যখন ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেন তখন, “মন্দিরের যবনিকা বা তিরষ্করিণী উপর থেকে নিচে অবধি বিভক্ত [দুইভাগ] হয়ে গেল” (#মথি ২৭:৫১)। সেই উপর থেকে নিচে পর্যন্ত, বিভক্ত বা ছিঁড়ে যাওয়াটা, এটাই ইঙ্গিত করে যে ঈশ্বর নিজেই সেই যবনিকা বা তিরষ্করিণী [ছিঁড়ে] ফেললেন…যখন সেই যবনিকা ছিঁড়ে পড়লো, তখন ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে যে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা ছিল তা অপসারন করা হলো তাদের জন্য যারা [খ্রীষ্টের] মধ্য দিয়ে তাঁর কাছে আসতে চান।
তৃতীয়, এক ভূমিকম্প সেইদিনে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে তুললো
বাইবেল বলে, “ভূমিকম্প হইল, ও শৈল সকল বিদীর্ণ হইল [খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়ল]” (#মথি ২৭:৫১)। ভূমিকম্পও হয়তো তিরষ্করিণী বা যবনিকাকে ছিঁড়ে দুফাঁক করে দেওয়ার বিষয় হতে পারে। আমার মনে হয় ইহা হয়েছিল। কিন্তু এডারসিম নির্দেশ করেন, “যদিও ভূমিকম্প প্রাকৃতিক ভিত্তিতে সেটাকে সজ্জিভূত করলেও, মন্দিরের যবনিকা বা তিরষ্করিণী সেইদিন ছিঁড়ে গিয়েছিল ও যা হয়েছিল…তা কেবলমাত্র ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের দ্বারাই।" এডারসিম নির্দেশ করেন যে সেই যবনিকা বা তিরষ্করিণীর ঘনত্ব ছিল মানুষের হাতের তালুর সমান (প্রায় আড়াই ইঞ্চি মোটা)| “তালমুড যদি সেই যবনিকাকে সেইভাবে বর্নণা করে থাকেন, তবে সেটা কোনমতেই এই প্রকার ভূমিকম্পের দ্বারা ছিঁড়ে যেতে পারে না।
সেই যবনিকা বা তিরষ্করিণী তখনই ছিঁড়ে যায় “যখন, সান্ধ্যকালীন বলিদানের সময়ে, দায়িত্বশীল যাজকেরা পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছিলেন, হয় ধূপ জ্বালানোর জন্য বা অন্য কোন সেবা কাজের জন্য। এই যিহুদী যাজকদের উপরে যবনিকা বা তিরষ্করিণী ছিঁড়ে যাওয়াটা এক ভীষন ভয়ানক আভাস। এটি একটি পরিণাম যথা যবনিকা বা তিরষ্করিণীকে অতিপ্রাকৃতভাবে ছিঁড়ে ফেলার বিষয়টি প্রেরিত ৬:৭ পদে উল্লেখ রয়েছে, যেখানে আমাদের বলা হয়েছে, ‘আর যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্তী হইল। খ্রীষ্ট যখন মারা যান, তখন যবনিকা বা তিরষ্করিণী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। যেহেতু খ্রীষ্ট এখন মধ্যস্থতাকারী, তাই আপনি তাঁর দ্বারা ঈশ্বরের কাছে আসতে পারেন। এখন আপনার ও ঈশ্বরের মধ্যে আর কোন যবনিকা বা তিরষ্করিণী নেই। আপনার ও ঈশ্বরের মাঝখানে এখন যীশু রয়েছেন। যীশুর কাছে আসুন আর তিনিই আপনাকে সরাসরি ঈশ্বরের উপস্থিতিতে নিয়ে যাবেন। “কারন একমাত্র ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বর ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থতাকারীও আছেন, যিনি হলেন খ্রীষ্ট যীশু” (#১মতিমথি ২:৫)।
চতুর্থ, সেই দিনেই ক্রুশের উপর থেকে যীশু যে কথা বলেছিলেন
মন্দিরের প্রহরীরা যীশুকে ভ্রান্ত ও ভুল অভিযোগে বন্দী করেছিল। তারা তাঁকে মহাযাজকের কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছিল, তারা তাঁর মুখে থুতু দিয়েছিল আর তাদের মুষ্টির দ্বারা তারা যীশুর মুখে ঘুঁষি মেরেছিল। যেহেতু যিহুদীদের কর্তৃত্বপ্রসূত কোন অধিকার ছিল না, তাই তারা যীশুকে রোমীয় শাসনকর্তা, পন্তীয় পীলাতের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। পীলাত যীশুর প্রতি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, ও তাঁকে নির্দোষ বলে ঘোষনা করেন আর এইভাবে তাঁর জীবন রক্ষার চেষ্টা করেন। তিনি যীশুকে বেত্রাঘাত করতে বলেন, এই আশা নিয়ে যে ইহা হয়তো মহাযাজকদের পরিতৃপ্ত বা সন্তুষ্ট করবে। রোমীয় সেনারা তাঁর পিঠে বেত্রাঘাত করতে ও চাবুক মারতে থাকে, তারা তাঁর মাথায় কাঁটার একটা মুকুট তৈরী করে চেপে বসিয়ে দেয়, আর তাঁর শরীরে বেগুনি রঙের বস্ত্র পড়িয়ে দেয়।
পীলাত তাঁকে লোকদের সামনে নিয়ে এসে প্রদর্শন করতে চান যে কিভাবে তাঁকে প্রহার করা হয়েছে, আর ভাবছিলেন যে এই দেখে তাদের হয়তো অনুকম্পা হবে। পীলাত তাদের বলেছিলেন, “তাঁর কোন দোষই আমি খুঁজে পাচ্ছি না” (#যোহন ১৯:৪)। প্রধান যাজকেরা তাঁকে দেখার পরে চিৎকার করে বলতে থাকে, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক! ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক!” পীলাত তাদের বলেন, “তোমরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে ক্রুশারোপিত কর; কারন আমি তাঁর কোন দোষই পাইনি”। যিহুদী নেতারা চিৎকার করতে থাকে, “তুমি যদি এই ব্যক্তিকে ছেড়ে দাও, তবে তুমি কৈসরের বন্ধু নও। ইনি নিজেকে রাজা বলে কৈসরের বিরুদ্ধাচারণ করে”। পীলাত বলেন, “তবে কি আমি তোমদের রাজাকে ক্রুশে দেব?” তখন প্রধান যাজক চিৎকার করে বলে, “কৈসর ছাড়া আমাদের আর কোন রাজা নেই”। পীলাত তখন যীশুকে সৈন্যদের হাতে অর্পণ করে, আর তারা তাকে ক্রুশারোপনের জন্য নিয়ে যায়। যীশু তখন প্রচন্ড ব্যাথায় কষ্ট পান এবং ক্রুশারোপনের সময়ে বীভৎস তীব্র যন্ত্রণা পান। কিন্তু তিনি যখন দুঃখভোগ করছিলেন তখন তিনি এই কথাগুলো বলতে থাকেন,
ক্ষমালাভের – প্রথম বাণীঃ “আর যখন তাহারা সেইস্থানে আসিল, যে স্থানের নাম কালভেরী, সেখানে তারা তাঁহাকে, এবং সেই দুষ্কর্মকারীদের ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁহার দক্ষিন পার্শ্বে, আর অন্যজনকে তাঁহার বামপার্শ্বে রাখিল| তখন যীশু কহিলেন, পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর; কেননা ইহারা কি করিতেছে তাহা জানেনা| পরে তাহারা তাঁহার বস্ত্রগুলি বিভাগ করিয়া, গুলিবাঁট করিল” (#লূক ২৩:৩৩-৩৪)। এই কারনেই যীশু ক্রুশে গিয়েছিলেন – আমাদের পাপসকলের ক্ষমা করার জন্য। আমাদের পাপের দন্ড মিটিয়ে দেওয়ার জন্য যীশু ইচ্ছা করেই ক্রুশে গিয়েছিলেন।
উদ্ধারলাভের – দ্বিতীয় বাণীঃ “আর যে দুষ্কর্মকারীদের ক্রুশে টাঙ্গান হইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে একজন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট, তাহলে আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর। কিন্তু অন্যজন উত্তর দিয়া তাহাকে অনুযোগ করিয়া, কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না, তুমিও তো একই দন্ড পাইতেছ? আর আমরা ন্যায়মতে দন্ড পাইতেছি; কারন আমরা যাহা যাহা করিয়াছি তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি: কিন্তু ইনি অপকার্য কিছুই করেন নাই। পরে সে যীশুকে কহিল, প্রভু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন তখন আমাকে স্মরণ করিবেন। আর যীশু তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে” (#লূক ২৩:৩৯-৪৩)। পাপীদের উদ্ধার করার জন্যই যীশু ক্রুশের উপরে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রথম যে পাপীকে তিনি উদ্ধার করেছিলেন বলে আমরা বিশ্বাস করি তিনি ছিলেন তাঁরই ক্রুশের পার্শ্বের এক দস্যু। অনেক লোক মনে করেন যে তারা উদ্ধারলাভের বিষয়টাকে কেবল শিখতে পারেন। কিন্তু এই যে দস্যু সে কোন কিছুই এই পরিত্রাণ বা উদ্ধারের বিষয়ে শেখেনি। সে সরলভাবেই যীশুতে নির্ভর করেছিল। অন্যরা আবার মনে করে উদ্ধার লাভের জন্য তাদের কোন অনুভূতি বা একপ্রকার আন্তরিক পরিবর্তন অর্জন করতে হবে| কিন্তু সেই দস্যুর কোনটাই ছিল না। সে কেবলমাত্র সরলচিত্তে যীশুতে নির্ভর করেছিল।
প্রেম করা হল – তৃতীয় বাণীঃ “এখন সেখানে যীশুর ক্রুশের নিকটে তাঁহার মাতা, ও তাঁহার মাতার ভগ্নী, ক্ল্যাপার স্ত্রী মরিয়ম, এবং ম্যাগদলীনী মরিয়ম ইহারা দাঁড়াইয়া ছিলেন| যীশু, মাতাকে দেখিয়া এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছে দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারী, ঐ দেখ তোমার পুত্র! পরে তিনি সেই শিষ্যকে কহিলেন, ঐ দেখ তোমার মাতা! তাহাতে সেই দন্ড অবধি ঐ শিষ্য তাঁহাকে আপনগৃহে লইয়া গেলেন” (#যোহন ১৯:২৫-২৭)। যোহনকে যীশু বললেন যেন তিনি তাঁর মায়ের যত্ন নেন| যীশু চান আমরা যেন স্থানীয় মন্ডলীতে সহভাগিতার সময়ে একে অপরের যত্ন নিই।
প্রায়শ্চিত্ত – চতুর্থ বাণীঃ “পরে বেলা ছ্য় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। আর নয় ঘটিকার সময়ে যীশু উচ্চরবে চিৎকার করিয়া ডাকিয়া, কহিলেন, এলী, এলী, লামা শাবাস্থানী? অর্থাৎ, ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছ?” (#মথি ২৭:৪৫-৪৬)। যীশুর তীব্র মনোকষ্ট এটাই দেখায় যে তিনি পিতা ঈশ্বর থেকে পৃথকীকৃত আর আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তিনি বলিদান উৎসর্গ করলেন।
দুঃখভোগ – পঞ্চম বাণীঃ “ইহার পরে যীশু, সমস্তই সমাপ্ত হইল জানিয়া, শাস্ত্রের বচন যেন সিদ্ধ হয়, এইজন্য কহিলেন, আমার পিপাসা পাইয়াছে। সেই স্থানে সিরকায় পূর্ণ একটি পাত্র ছিল: তাহাতে লোকেরা সিরকায় পূর্ণ একটি স্পঞ্জ, এসোব নলে লাগাইয়া, তাঁহার মুখের নিকটে ধরিল” (#যোহন ১৯:২৮-২৯)। এটা দেখায় যে আমাদের পাপের দন্ড মিটিয়ে দেওয়ার জন্য যীশু এই প্রকার বিরাট যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন।
বলিদান – ষষ্ঠ বাণীঃ “সিরকা গ্রহণ করিবার পরে, যীশু কহিলেন, ইহা সমাপ্ত হইল: পরে মস্তক নত করিয়া, আত্মা সমর্পণ করিলেন” (#যোহন ১৯:৩০)। আমাদের পরিত্রাণের জন্য যা কিছুর প্রয়োজন ছিল তা এখন সমাপ্ত হয়েছে। একজন হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির জন্য যীশুর উপরে নির্ভর করা ব্যতিরেকে সেখানে আর কিছুই নেই।
পিতার প্রতি অঙ্গীকার – সপ্তম বাণীঃ “আর যীশু উচ্চরবে চিৎকার করিয়া, কহিলেন, পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করিলাম: আর এই বলিয়া, তিনি প্রাণ ত্যাগ করিলেন” (#লূক ২৩:৪৬)। এক অশান্ত শতপতী বহু ক্রুশারোপন দেখেছেন। তার হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যীশু যেভাবে মারা গেলেন সেইভাবে কাউকে মৃত্যু বরণ করতে তিনি দেখেন নি। সেই শতপতী ক্রুশের উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় যীশুর দেহকে ঝুলতে দেখলেন। তার দুই গাল বেয়ে যখন অশ্রুধারা ঝরে পড়ছে, তখন শতপতী বললেন, “সত্য সত্যই এই ব্যক্তি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন” (#মার্ক ১৫:৩৯)।
তাঁর বলিদান ও তাঁর রক্তের দ্বারা আপনি কি ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাস করবেন ও আপনার পাপ থেকে উদ্ধারলাভ করবেন।