খ্রীষ্টেতে প্রিয় ভাই ও বোন ১২ ই এপ্রিল ইষ্টার সানডে। ২০২০ খ্রীষ্টাব্দ আমাদের খুবই কঠিন সময়, আমরা ঈশ্বরের বিচারের মুখোমুখি আমাদের পাপের কারণে, কারণ আমরা ঈশ্বর ছাড়াই জীবনযাপন করছিলাম। আমরা পাপের পথে হাটছিলাম। যীশু এই পাপের জন্যই জগতে এসেছিলেন। পাপ থেকে উদ্ধার করতে যীশু ক্রুশে মরেছিলেন। আমাদের ধার্মিকতার জন্য যীশু কবর থেকে পুনুরুন্থিত হয়েছিলেন। যীশুর পুনঃরুত্থানের প্রথম প্রমাণ হল তাঁর শূন্য সমাধি বা কবর। যীশুর পুনঃরুত্থানের মহৎ প্রমাণগুলির মধ্যে একটি হল তাঁর মৃত্যুর তিন দিন পরে যীশুর সমাধি শূন্য থাকার সত্য ঘটনা। চারজন সুসমাচার লেখক সকলেই সম্পূর্ণ সহমত হয়েছেন যে খ্রীষ্ট মারা যাওয়ার তিনদিন পরে তাঁর সমাধি শূন্য ছিল। আরও অনেক সাক্ষীগণ শূন্য সমাধির সত্য ঘটনাটি যাচাই করেছেন।
যীশুর শিষ্যেরা কি তাঁর দেহ চুরি করেছিলেন?
খ্রীষ্টের পুনঃরুত্থানের বিরুদ্ধে প্রাচীনতম আক্রমণ এই ছিল যে কেউ একজন যীশুর দেহ চুরি করেছিলেন। প্রধান যাজকগণ, “... ঐ সেনাগণকে অনেক টাকা দিল, কহিল, তোমরা বলিও যে, তাহার শিষ্যগণ রাত্রিকালে আসিয়া, যখন আমরা নিদ্রাগত ছিলাম, তখন তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছে...তখন তাহারা সেই টাকা লইয়া, যেরূপ শিক্ষা পাইল, সেইরূপ কার্য্য করিল। আর যিহূদীদের মধ্যে সেই জনরব রটিয়া গেল, তাহা অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে” (#মথি ২৮:১২-১৫)। কিন্তু এই যুক্তি অনেক লোককে সন্তুষ্ট করেনি। সাধারণ জ্ঞানই আপনাকে বলবে যে শিষ্যেরা তাঁর দেহ চুরি করেছিলেন এবং তিনি পুনঃরুত্থানের ভাণ করেছিলেন তা হয়নি। তিন দিন আগে যখন যীশু বন্দী এবং ক্রুশারোপিত হয়েছিলেন শিষ্যেরা তাদের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এটা অতি অপ্রত্যাশিত যে এই সমস্ত ভয়াতুর মানুষগুলি যথেষ্ট সাহস অবলম্বন করে যীশুর দেহ চুরি করার জন্য উঠে দাঁড়াবেন - এবং তারপরে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচার শুরু করবেন যে তিনি মৃত অবস্থা থেকে উঠে এসেছেন - তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে! না, সেটা চরমভাবে অপ্রত্যাশিত একটি যুক্তি! সত্য ঘটনাটি সহজভাবে মিলছে না। শিষ্যেরা একটা ঘরে দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে ছিলেন, “যিহূদিগণের ভয়ে” (#যোহন ২০:১৯)। তারা আকস্মিক বিহ্বলতার মধ্যে ছিলেন। তারা বিশ্বাস করেন নি যে যীশু আবার উঠবেন। খ্রীষ্টের অনুগামীদের মধ্যে একজনেরও সেই বিশ্বাস বা সাহস ছিল না যাতে তারা শক্তিশালী রোমীয় সরকারের প্রতিদ্বন্দীতা এবং সমাধি থেকে যীশুর দেহ চুরি করে। ঐটা একটা মনস্তাত্তিক সত্য যা উপেক্ষা করা যায় না।
একমাত্র অন্য সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা, যারা খ্রীষ্টের দেহ চুরি করতে পারতেন, ছিলেন তাঁর শত্রুরা। সেই তত্ত্ব নিয়ে সমস্যা এটাই যে খ্রীষ্টের শত্রুদের তাঁর সমাধি ছিনিয়ে নেওয়ার কোন অভিপ্রায় ছিল না। প্রধান যাজক এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতাগণ খ্রীষ্টকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন এই কারণে যে তিনি তাদের ধর্মীয় ব্যবস্থা এবং জীবনযাত্রার প্রতি ভীতিপ্রদর্শন করেছিলেন। এইসব ব্যক্তিদের চাওয়া সর্বশেষ বিষয় ছিল লোকদের মনে হওয়া যে খ্রীষ্ট আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছেন! সেই কারণে এইসব ধর্মীয় নেতাগণ বহুদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন যাতে তাঁর পুনঃরুত্থানের উপস্থিতির যেকোন প্রকাশ পরিহার করা যায়। মথির সুসমাচার আমাদের বলছে যে তারা রোমের রাজ্যপাল, পন্তিয় পীলাতের কাছে গিয়েছিলেন, “কহিল, মহাশয়, আমাদের মনে পড়িতেছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকিতে বলিয়াছিল, তিন দিনের পরে আমি উঠিব| অতএব তৃতীয় দিবস পর্য্যন্ত তাহার কবর চৌকি দিতে আজ্ঞা করুন; পাছে তাহার শিষ্যেরা আসিয়া তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া যায়, আর লোকদিগকে বলে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন; তাহা হইলে প্রথম ভ্রান্তি অপেক্ষা শেষ ভ্রান্তি আরও মন্দ হইবে” (#মথি ২৭:৬৩-৬৪)। পীলাত তাদের বলেছিলেন সঙ্গে প্রহরি-দল নাও এবং কবরটিকে “তোমরা গিয়া যথাসাধ্য রক্ষা কর” - কবরে রক্ষীদল নিযুক্ত কর এবং সম্ভাব্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে সেটিকে সুরক্ষিত রাখ (#মথি ২৭:৬৫)| কাজেই তারা গিয়ে কবরে মুদ্রাঙ্ক দিয়েছিল এবং সেটা রক্ষা করতে প্রহরিদের নিযুক্ত করেছিল (#মথি ২৭:৬৬)। বিস্ময়করভাবে, এটা দেখা যাচ্ছে যে তাঁর নিজের শিষ্যরা যা করেছিলেন তার তুলনায় এইসব প্রধান যাজক ও ধর্মীয় নেতাদের মনে খ্রীষ্টের পুনঃরুত্থানের প্রতি অনেক বেশী বিশ্বাস ছিল! সত্যিটা হল যে খ্রীষ্টের দেহ চুরি যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে ধর্মীয় নেতারা চরম ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিলেন। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে মৃতদের মধ্যে থেকে উঠে আসার যে প্রতিশ্রুতি খ্রীষ্ট দিয়েছিলেন সেটা ছিল মিথ্যা। খ্রীষ্ট মৃতদের মধ্যে থেকে উঠেছেন এই গল্পটি ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পরিহার করতে ধর্মীয় নেতারা যতটা পেরেছিল তার সবই করেছিল। দেহ চুরির ব্যাপারটি হতে পারতো সর্বশেষ বিষয় যা তাঁর শত্রুরা করতে পারত। কিন্তু যদি তারা দেহ চুরি করত, তারা নিঃসন্দেহে সেই দেহ তখনই প্রকাশ্যে নিয়ে আসত যখন শিষ্যেরা তাঁর পুনঃরুত্থানের প্রচার করছিলেন। কিন্তু খ্রীষ্টের শত্রুরা তাঁর দেহ কখনও প্রকাশ্যে আনেননি। কেন? সহজভাবে এই কারণে যে তাদের কাছে প্রকাশ্যে আনার মতন কোন দেহ ছিল না! সমাধিটি শূন্য ছিল! খ্রীষ্ট মৃত্যু থেকে উত্থিত হয়েছিলেন!
খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের প্রত্যক্ষদর্শী আছে
যখন যীশুকে ক্রুশারোপিত করা হয়েছিল, সেইসময়ে তাঁর শিষ্যেরা নিরাশ হয়েছিলেন। তাদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁকে আর কখনও জীবিত দেখার আশা তাদের কাছে ছিল না। তখন যীশু আসলেন, “এবং মধ্যস্থানে দাঁড়াইলেন, এবং তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের শান্তি হউক।" #যোহন ২০:১৯
কিন্তু শিষ্যেরা তাঁকে বার বার জীবিত দেখেছিলেন। “তিনি অনেক প্রমাণ দ্বারা তাঁহাদের নিকটে আপনাকে জীবিত দেখাইলেন, ফলতঃ চল্লিশ দিন যাবৎ তাঁহাদিগকে দর্শন দিলেন” (#প্রেরিত ১:৩)।" প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে পুনঃরুত্থিত খ্রীষ্ট, “কৈফাকে [পিতর], পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচশতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন... তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষে...আমাকেও দেখা দিলেন” ( #১করি ১৫:৫-৮)।" এই বিষয়টি আপনি বিবেচনা করুন কতটা অভিভূতকারী ছিল আক্ষরিকভাবে সেই শতাধিক লোকের সাক্ষ্য যাহারা যীশুকে তাঁহার পুনঃরুত্থানের পর দেখিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ চল্লিশ দিনের সময়কালে বারে বারে ক্রমাগত তাঁহার দর্শন করিতেছিলেন! (#প্রেরিত ১:৩)| বাইবেলের ব্যবস্থা ছিল “দুই অথবা তিনজন সাক্ষীর মুখে।” এই স্থানে ছিল শত শত সাক্ষী। এক বা দুইজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যে বহু মানুষ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হইয়াছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিস্পত্তি করিবার জন্য জুরিগণের সহমত হইতে মাত্র বারোজন সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। এইস্থানে আক্ষরিক অর্থে শত শত প্রত্যক্ষদর্শী একমত হইয়াছিলেন যে যীশু মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন। তৃতীয় দিবসের পরে তাহারা তাঁহার মৃতদেহ দেখিয়াছে ইহা বলিতে, নয়ত সাক্ষ্যের কোন একটিরও বিপরীতে কিছু বলিতে কথাপি একজন ব্যক্তিও উপস্থিত হয় নাই। ঐসব সাক্ষীগণের সাক্ষ্য - প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষ্য দিয়াছেন যাহারা পরিত্রাতাকে হাত দিয়া দেখিয়াছিলেন, তাঁহাকে স্পর্শ করিয়াছিলেন, তাঁহার হস্ত ও পদদ্বয়ে পেরেকের চিহ্ন অনুভব করিয়াছিলেন, তাঁহাকে আহার গ্রহণ করিতে দেখিয়াছিলেন, তাঁহার সহিত চল্লিশদিন যাবৎ কথাবার্ত্তা চালাইয়াছিলেন - সেই সাক্ষ্য বিশ্বের অন্য যেকোন ন্যায়ালয়ের অধীনস্থ মামলার জন্যে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী ছিল... সেই সাক্ষ্য এতই অভিভূতকারী যে একমাত্র যাহারা বিশ্বাস করিতে চাহেন না এবং সাক্ষ্য যাচাই করেন না তাহারাই ইহা প্রত্যাখ্যান করেন। আস্চর্য্যের কিছুই নাই যে বাইবেল ঘোষণা করিতেছে যে যীশু “আপন দুঃখভোগের পরে তিনি অনেক প্রমাণ দ্বারা তাঁহাদের নিকট আপনাকে জীবিত দেখাইলেন,” #প্রেরিত ১:৩।