প্রিয়পাঠক, আজ আমরা প্রেরিত পৌলের সেই কথার তাৎপর্য অনুসন্ধান করবো, যা তিনি গালাতীয় পত্রে বলেছেন। আসুন পবিত্র বাইবেল থেকে সেই অংশটি পাঠ করি -
"খ্রীষ্টের সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন; আর এখন মাংসে থাকিতে আমার যে জীবন আছে, তাহা আমি বিশ্বাসে, ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাসেই, যাপন করিতেছি; তিনিই আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন” (গালাতীয় ২:২০)।
এখন প্রশ্নছ হচ্ছে "খ্রীষ্টের সহিত ক্রুশারোপিত” হওয়ার অর্থ কি? আমি বিশ্বাস করি এর অর্থ হল যে আমাদের অবশ্যই আত্মার একটি অন্ধকার রাত্রির মধ্যে দিয়ে যেতে হব। আমাদের অবশ্যই অনুভব করতে হবে আমাদের পাপ, অনুভব করতে হবে ব্যবস্থার কশাঘাত,যীশুর ক্রুশে পেরেক অনুভব করতে হবে, খ্রীষ্টের সাথে মৃত্যু বরণ করতে হবে – তাঁর মৃত্যুতে, আর সেইসঙ্গে তাঁর পুনরুত্থানে খ্রীষ্টের সাথে মিলিত হতে হবে।
বর্তমানে যদি আপনি বাংলাদেশের খ্রীষ্টান যুবকদের জিজ্ঞাসা করেন , “মি. মাইকেল তুমি এখানে কেন? তুমি কি করতে চাও? হ্যা বলো খ্রীষ্টান হিসাবে তুমি কি করতে চাও?"
সে বলবে আমি ধর্মের জন্য প্রচার কাজ করতে চাই না। এটি গীর্জার পাস্টরের দায়িত্ব আমার নয়। আমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। আমি বড় চাকরি, ব্যবসা করতে চাই। আমি বিয়ে করতে চাই; আমি টাকাপয়সা রোজগার করতে পছন্দ করি; এবং আমি ভ্রমণ করতে চাই। কিন্তু মাইকে এই গুলি সবই অদূরদর্শী বিষয়। তুমি সেইগুলি করবে আর তারপরে বুড়ো হবে এবং মারা যাবে। তোমার জীবনের বৃহৎ উদ্দেশ্য কি?
তখন মাইকেল হয়তো বলবে, “জীবনে আমার কোন উদ্দেশ্য আছে কি না আমি জানি না।"
অধিকাংশ খ্রীষ্টান লোকই জানেন না জীবনে তাদের উদ্দেশ্য কি? এটিই মন্ডলীর আজ বর্তমান অবস্থা।
একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী বলতে পারেন যে জীবনে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বর্গে যাওয়া। কিন্তু পবিত্র বাইবেলে বার বার বলে যে সেখানে শাস্ত্রের একটিও পদ নেই যা বলছে যে স্বর্গে যাওয়াই হলো আপনার জীবনের উদ্দেশ্য! জীবনে আপনার উদ্দেশ্য কি হ্ওয়া উচিৎ তা জানতে, ২ তীমথিয় ২:১২ পদটি দেখুন। ১২ নং পদের প্রথম অর্দ্ধাংশটি পড়ুন,
“যদি সহ্য করি, তাঁহার সহিত রাজত্ব করিব…”
প্রকাশিত বাক্য ২০:৬ পদ বলছে, “তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে।” “দুঃখভোগ” শব্দটির অর্থ “সহ্য করা”। ২ তীমথিয় ২:১২ পদের বিষয়বস্তু ২ তীমথিয় ২:১-১১ পদগুলিতে দেওয়া হয়েছে।
খ্রীষ্টের সাথে এই রাজত্ব খুব সহজভাবে দেখানো হয়েছে, লূক ১৯:১১-২৭ পদের দশ মুদ্রার দৃষ্টান্তে। যারা খ্রীষ্টের সাথে রাজত্ব করতে প্রস্তুত তাদের “দশ নগরের উপরে কর্তৃত্ব” (পদ. ১৭) অথবা “পাঁচ নগরের উপরে” (পদ ১৯) দেওয়া হবে। আমি বলছি যে এটা আক্ষরিক অর্থেই হবে। যারা এই জীবনে সহ্য করবেন তারাই খ্রীষ্টের সাথে রাজত্ব করবেন তাঁর আগত রাজ্যে। “দুঃখভোগ” এর অর্থ “সহ্য করা”।
তাহলে আমাদের কি সহ্য করতে হবে?
জগতকে প্রেম না করার দ্বারা আমরা সহ্য করি, “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী” (১ যোহন ২:১৫-১৭)।
একটি ভগ্ন মন্ডলী ত্যাগ না করার দ্বারা আমরা সহ্য করি, "তাহারা আমাদের হইতে বাহির হইয়াছে; কিন্তু আমাদের ছিল না; কেননা যদি আমাদের হইত, তবে আমাদের সঙ্গে থাকিত; কিন্তু তাহারা বাহির হইয়াছে, যেন প্রকাশ হইয়া পড়ে যে, সকলে আমাদের নয়” (১ যোহন ২:১৯)।
ভ্রান্ত শিক্ষকদের অনুসরণ অস্বীকার করার দ্বারা আমরা সহ্য করি, “প্রিয়তমেরা, তোমরা সকল আত্মাকে বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না; কারণ অনেক ভাক্ত ভাববাদী জগতে বাহির হইয়াছে” (১ যোহন ৪:১)।
সেই সমস্ত জিনিস করার দ্বারা আমরা সহ্য করি যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে, “এবং যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই; কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা করি” (১ যোহন ৩:২২)।
ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনের দ্বারা আমরা সহ্য করি, “এবং যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই; কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা কর।| আর তাঁহার আজ্ঞা এই, যেন আমরা তাঁহার পুত্ত্র যীশু খ্রীষ্টের নামে বিশ্বাস করি, এবং পরস্পর প্রেম করি, যেমন তিনি আমাদিগকে আজ্ঞা দিয়াছেন” ( ১ যোহন. ৩:২২-২৩)।
আমাদের শিক্ষকদের প্রতি সমর্পণের দ্বারা আমরা সহ্য করি, “যাঁহারা তোমাদিগকে ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া গিয়াছেন, তোমাদের সেই নেতাদিগকে স্মরণ কর, এবং তাঁহাদের আচরণের শেষগতি আলোচনা করিতে করিতে তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী হও… তোমরা (তোমাদের নেতাদিগের) আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরিকার্য্য করিতেছেন, - যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়” (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৬)।
আমরা সহ্য করি “প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া” পড়িবার দ্বারা – অবিচলিতভাবে!
“অতএব, হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়” ( ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮)।
ঈশ্বরকে প্রেমের জন্য আমরা এই জগতের সব কিছু ত্যাগ করে সহ্য করি, "হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে" ( যাকোব ৪:৪ )।
যীশু ও ঈশ্বরের গৌরবের জন্য আমরা নিজেকে অস্বীকার করি, "পরে তিনি আপন শিষ্যগণের সহিত লোকসমূহকেও ডাকিয়া কহিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।" (মার্ক ৮:৩৪)
এই সমস্ত বিষয় সহ্য করার দ্বারা, ঈশ্বর আমাদের সেই শিষ্যে পরিণত হওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যারা খ্রীষ্টের সাথে রাজত্ব করবেন তাঁর আগামী রাজত্বে।
“যে জয় করে, তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দিব…যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মন্ডলীগণকে কি কহিতেছেন” (প্রকাশিত বাক্য ৩:২১-২২)।