যীশু বা ঈসা যে ঈশ্বর তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই কারণ কোরআন অনুযায়ী যীশুই আল্লাহ। আমি আজ নিম্নে সকল পাঠকের নিকট রেফারেন্স সহ বিস্তারিত তুলে ধরছি - সকল পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলছি যদিও কোরানে সরাসরি ভাবে যীশুকে আল্লাহ দাবী করা হয়নি। কিন্তু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলো ইহুদী, মুসলিম খ্রীষ্টান সকলেই একমত পোষণ করে যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো শুধুমাত্র ঈশ্বরের থাকা সম্ভব, কোনো সাধারণ মানুষ বা নবীর নয়। কোরান মতে ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যর সাথে নিজেকে তুলনা করাও শিরকের মধ্যে পড়ে যা ইসলামে সবচেয়ে বড় গুণাহ। কোনো সত্যিকারের নবী কী নিজেকে ঈশ্বরের সাথে তুলনা করবে? কেউ শিরক করলে সে কি নবী হতে পারে,বা তাকে নবী বলা যায়? চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাই-
কে প্রথম এবং শেষ?
এই পৃথিবীর সকল মানুষ বিশ্বাস করে যে এই বৈশিষ্ট্য গুলো একমাত্র ঈশ্বরের থাকতে পারে। যেমন সুরা ৫৭:৩ তে বলা আছে আল্লাহই একমাত্র প্রথম এবং সর্বশেষ।
"তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।"
Old Testament কী বলে দেখে নেই Isaiah 44:6
"প্রভু পরমেশ্বর, যিনি ইসরায়েলের রক্ষক, রাজাধিরাজ, সেই সর্বাধিপতি প্রভু পরমেশ্বর বলেন, আমিই আদি এবং অন্ত, আমিই অদ্বিতীয়, আমি ছাড়া আর নেই কোন ঈশ্বর।"
Old Testament ও কোরআন দুটোই agree করে যে একমাত্র ঈশ্বর আদি এবং অন্ত বা প্রথম এবং সর্বশেষ। কোনো সত্যিকারের নবী কী নিজেকে প্রথম এবং শেষ দাবী করতে পারে? যদি করে কোরান অনুযায়ী তা শিরক।
চলুন যীশু #প্রকাশিত বাক্য। ১:১৭-১৮ পদে এ কী বলেছে দেখে নিই-
"তাঁকে দেখামাত্র আমি তাঁর চরণপ্রান্তে মৃতবৎ পতিত হলাম। তিনি দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করে আমাকে স্পর্শ করলেন, বললেন, ভয় করো না, আমিই আদি এবং অন্ত। আমি জীবন্ত, আমি মৃত্যুবরণ করেছিলাম, কিন্তু দেখ এখন আমি যুগ পর্যায়ে যুগে যুগে জীবিত। মৃত্যু ও পাতালের চাবি রয়েছে আমার হাতে।"
যীশু নিজেকে আমিই আদি এবং অন্ত দাবী করছে। কোনো নবী কী তা করবে?
কে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখে?
মানুষ একে অন্যের দোষ ক্ষমা করতে পারে৷ কিন্তু আল্টিমেট পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা একমাত্র গডেরই রয়েছে। আব্রাহামিক রিলিজিয়ন এর সকলেই জানে একমাত্র গডেরই এই ক্ষমতা রয়েছে।
কোরআন সুরা ৩:১৩৫ বলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে?
"তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।"
Old Testament এর Psalm 51:4 ও একই কথা বলে - "তোমার বিরুদ্ধে, একমাত্র তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি, তোমার দৃষ্টিতে যা কিছু মন্দ, তা-ই করেছি আমি। সুতরাং ন্যায্য তোমার দণ্ডাদেশ, নিখুঁত তোমার বিচার।"
কিন্তু যিশু কী করেছিলো?
আসুন #মার্ক ২:৫-১২ থেকে জেনে নিই "যীশু তাদের বিশ্বাস দেখে পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটিকে বললেন, বৎস, তোমার পাপ ক্ষমা করা হল। সেখানে কয়েকজন শাস্ত্রী বসেছিলেন। তাঁরা ভাবতে লাগলেন এ লোকটা এমন কথা কেন বলছে? এ তো ঈশ্বর-নিন্দা! একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের মনের কথা জানতে পেরে বললেন, তোমরা এ ধরণের কথা কেন ভাবছ? এই পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে কোন কথাটা বলা সহজ —‘তোমার পাপ ক্ষমা হল’ না, ‘ওঠ, তোমার খাট তুলে নিয়ে চলে যাও'? কিন্তু তোমাদের জানা দরকার, এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার অধিকার মানবপুত্রের আছে। তারপর পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকটিকে যীশু বললেন, তোমায় আমি বলছি, ওঠ, তোমার খাট তুলে নিয়ে বাড়ি যাও। সঙ্গে সঙ্গে সে উঠে খাট তুলে নিয়ে সকলের সামনে দিয়ে চলে গেল। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে সকলে ঈশ্বরের স্তুতি করতে লাগল, বলতে লাগল, এমনটি আর কখনও দেখিনি।"
যীশু পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখতেন। যেটা একমাত্র আল্লাহর দ্বারাই সম্ভব। কোরান তাই বলে। মুসলিমরা আপনারা এখনও যীশুকে নবী বলবেন? এগুলো কী আল্লাহর সাথে শিরক নয়? আল্লাহর বৈশিষ্ট্যগুলো যীশুর মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।
কে আমাদের শেষ বিচারের বিচারক?
ইহুদী, খ্রীষ্টান, ইসলাম এর সকলেই মানে ঈশ্বর আমাদের শেষ বিচারক।
Old Testament এর #যোয়েল ৩:১২ তে বলা হয়েছে ঈশ্বর শেষ বিচারের দিন আমাদের বিচার করবেন।
"রণসাজে সজ্জিত হয়ে জাতিবৃন্দ উপস্থিত হোক বিচার ভূমিতে সেখানেই আমি সকলের বিচার নিষ্পন্ন করব।"
কোরানের সুরা ২২:৫৬ বলে আল্লাহই শেষ বিচারে কাফের দের বিচার করবেন।
"রাজত্ব সেদিন আল্লাহরই; তিনিই তাদের বিচার করবেন। অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তারা নেয়ামত পূর্ণ......।"
কোনো নবী কি নিজেকে শেষ বিচারের বিচারক দাবী করতে পারে? অবশ্যই না। কিন্তু যীশু করেছেন
#মথি ২৫:৩১-৩২ পদে - "তিনি তার সিংহাসনে বসবেন সকল মানুষ তার সামনে হাজির হবে তিনি পৃথক করবেন মানুষদের মধ্যে কাউকে জান্নাতে দেবেন কাউকে জাহান্নামে শেষ বিচারের দিন।"
কে পরম সত্য?
ইহুদি, খ্রীষ্টান, ইসলাম এর সকলেই মানে একমাত্র ঈশ্বর পরম সত্য।
Old Testament এর Psalm ৩১:৫ এ বলা হয়েছে গড সত্যময়।
"তোমারই হাতে আমি সঁপেছি আমার প্রাণ, সত্যময় তুমি হে প্রভু ঈশ্বর, তুমিই আমায় করেছ উদ্ধার।
কোরআন সুরা ২২:৬ তেও বলা আছে আল্লাহ সত্য।
Al-Hajj 22:6
"এগুলো এ কারণে যে, আল্লাহ সত্য এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।"
কোনো নবী নিজেকে আমিই সত্য বলে দাবী করবে? কখনই নয়। কিন্তু যীশু করেছে৷ #যোহন ১৪:৬ পদে এ বলেছে সে'ই পথ, সে'ই সত্য।
"যীশু বললেন, আমিই পথ, আমিই সত্য এবং আমিই জীবন। আমার মাধ্যমে না গেলে কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না।"
কে মৃতদের পুনর্জীবিত/ পুনরুত্থিত করার ক্ষমতা রাখে?
Old Testament ও কোরআন দুটোই সহমত যে একমাত্র ঈশ্বরই মৃতকে পুনর্জীবিত করতে পারে। #১সামুয়েল ২:৬ এ বলা হয়েছে
"প্রভুই সংহারকর্তা, প্রভুই জীবনদাতা পাতালে নামান তিনিই, তিনিই ঊর্ধ্বে উঠান।"
এছাড়াও কোরআন সুরা ২২:৭ তে বলা আছে আল্লাহ মৃতদের কবর থেকে পুনর্জীবিত/ পুনরুত্থিত করবেন।
"এবং এ কারণে যে, কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে সন্দেহ নেই এবং এ কারণে যে, কবরে যারা আছে, আল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।"
যদি এই ক্ষমতা ঈশ্বরের থাকে আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি কোনো সাধারণ নবী এই কাজটি করতে পারবে? কোনো নবী আমাদের পুনরুত্থিত করবে?
#যোহন ৫:২৫-২৯ পদে এ যীশু বলেছে -
"সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, সেই সময় আসছে, প্রকৃতপক্ষে এসে গেছে, যখন মৃতেরাও ঈশ্বরের পুত্রের বাণী শুনবে, যারা শুনবে তারা সকলেই জীবনলাভ করবে। কারণ পিতা স্বয়ং যেমন জীবনের উৎস, তেমনি পুত্রকেও তিনি জীবনের উৎসস্বরূপ করেছেন। মানবপুত্ররূপে বিচারের অধিকারও তিনি তাঁকে দিয়েছেন। এতে আশ্চর্য হয়ো না কারণ সেই সময় আসছে যখন সমাধিশয্যায় শায়িত সকলে তাঁর কন্ঠস্বর শুনে বেরিয়ে আসবে বাইরে। যারা সৎকর্ম করেছে তাদের পুনরুত্থান হবে জীবনে উত্তরণের জন্য। আর যারা দুষ্কর্ম করেছে যারা পুনরুত্থিত হবে দণ্ডাজ্ঞার জন্য।"
এছাড়াও #যোহন ১১:২৫ পদে এ যীশু বলেছে ---
"যীশু বললেন আমিই পুনরুত্থান এবং আমিই জীবন। আমার উপরে যদি কারও বিশ্বাস থাকে তার মৃত্যু হলেও সে জীবন লাভ করবে।"
কোরান বলে আল্লাহ পুনরুত্থান ঘটাবেন এখানে দেখা যাচ্ছে যীশুরও পুনরুত্থান ঘটানোর ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতার দিক দিয়ে আল্লাহ= যীশু নয় কী? কোনো সত্যিকারের নবী কী আল্লাহর সমকক্ষ হতে পারে?
#যোহন ৫:২১-২৬ পদে এ বলা হয়েছে যীশু আর তার পিতা সমকক্ষ।
"পিতা যেমন মৃতকে জীবন দান করেন, পুত্রও তেমনি যাকে ইচ্ছা তাকে জীবন দান করবেন। আরও বলি, পিতা কারও বিচার করেন না, বিচারের ভার সম্পূর্ণরূপে তিনি পুত্রকেই দান করেছেন। তাঁর ইচ্ছা এই যে, সকলে যেন পিতার মত পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে মান্য করবে না সে তাঁর প্রেরণ কর্তা পিতাকেও অমান্য করবে। একান্ত সত্য কথাই আমি বলছি যে, আমার কথা যে শুনবে, যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন তাঁর উপরে যে বিশ্বাস অর্পণ করবে সে লাভ করবে শাশ্বত জীবন। বিচারের সম্মুখীন সে হবে না। মৃত্যু থেকে সে উত্তীর্ণ হয়েছে জীবনে। সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, সেই সময় আসছে, প্রকৃতপক্ষে এসে গেছে, যখন মৃতেরাও ঈশতনয়ের বাণী শুনবে, যারা শুনবে তারা সকলেই জীবনলাভ করবে। কারণ পিতা স্বয়ং যেমন জীবনের উৎস, তেমনি পুত্রকেও তিনি জীবনের উৎসস্বরূপ করেছেন।"
কোনো নবী কী ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে পারে? যদি না পারে তবে কীভাবে বলেন যীশু হচ্ছে শুধুমাত্রই একজন নবী? কোরান ও Old Testament এ একজন ঈশ্বর হওয়ার জন্য যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত। সবই যীশুর কাছে রয়েছে বাইবেল অনুযায়ী। সুতরাং কোরান ও বাইবেল এটাই প্রমাণ করে যে কোরান অনুযায়ী যীশুই ঈশ্বর ।
কারণ আল্লাহ = যীশু।