'কারণ আইন কানুন দেহের মাধ্যমে দুর্বল হয়ে পড়ার জন্য যা করতে পারে নি তা ঈশ্বর করেছেন, তিনি নিজের পুত্রকে আমাদের মত পাপময় দেহে এবং পাপের জন্য বলিরূপে পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং তিনি পুত্রের দেহের মাধ্যমে পাপের বিচার করে দোষী করলেন। তিনি এটা করেছেন যাতে আইনের বিধিগুলি আমাদের মধ্যে পূর্ণ হয়, আমরা যারা দেহের বশে নয় কিন্তু আত্মার বশে চলি। কারণ যারা দেহের বশে আছে, তারা দেহের বিষয়ের দিকেই মনোযোগ দেয়; কিন্তু যারা আত্মার অধীনে আছে, তারা আত্মিক বিষয় এর দিকে মনোযোগ দেয়। কারণ দেহের মনোবৃত্তি হলো মৃত্যু কিন্তু আত্মার মনোবৃত্তি জীবন ও শান্তি। কারণ দেহের মনোবৃত্তি হলো ঈশ্বরের বিরুদ্ধতা, আর তা ঈশ্বরের আইন মেনে চলতে পারে না, বাস্তবে হতে পারেও না। যদিও, তোমরা দেহের অধীনে নও কিন্তু আত্মার অধীনে আছ যদি বাস্তবে ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন। কিন্তু যদি করো খ্রীষ্টের আত্মা নেই, তবে সে খ্রীষ্টের থেকে নয়। যারা দেহের অধীনে থাকে তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম নয়। যদি খ্রীষ্ট তোমাদের অন্তরে থাকেন, তবে একদিকে দেহ পাপের জন্য মৃত বটে, কিন্তু অন্য দিকে ধার্মিকতার দিক থেকে আত্মা জীবিত। ' #রোমীয় 8:3-10
পবিত্র বাইবেলের মূলকথা হল, " ঈশ্বর যীশুখ্রিষ্টের মাধ্যমে কিভাবে পাপিদের পরিত্রাণ করছেন তার পূর্ণ ইতিহাস। প্রথম মানুষ আদমের দ্বারা পাপের আগমন ও দ্বিতীয় মানুষ যীশুর দ্বারা পাপের ক্ষমা। যদি আপনি ঈশ্বর ন্যায়বিচারক এটি পরিস্কার বুঝতে পারেন, তা হলে যীশু কিভাবে আপনার ও আমার পাপের নাজাতকারী তা পরিস্কার বুঝতে পারবেন।
প্রথম পয়েন্টঃ মানুষ তার পাপের কারণে এদোন বাগানে ঈশ্বর হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। অর্থাৎ পাপ ও শয়তানের নিকট মানুষ হারিয়ে গিয়েছেন। জন্মগতভাবেই মানুষ শয়তানের নিকট বন্ধি - #আদি ৩ অধ্যায় ও #ইফি ২:১-৩।
দ্বিতীয় পয়েন্টঃ ঈশ্বর পাপি মানুষদের পাপ ও শয়তানের নিকট হইতে উদ্ধার করতে তাঁর পুত্র ঈসা বা যীশুকে অভিষেক করেছেন - #আদি ৩:১৫-১৬, #গালা ৪:৪, #যোহন ৩:১৬,#যোহন ১:১৪
তৃতীয় পয়েন্টঃ যীশু তাঁর নিজ রক্তের মূল্যদ্বারা পাপিদের পক্ষে, ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের দাবি পূর্ণ করে পাপিদের উদ্ধার করেছেন, এর অর্থ হল পাপ ও শয়তান যীশুর শিষ্যদের কোন ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না - #২করি ৫: ১-২১, #ইফি ২:১২-২০।
প্রতিটি মানুষের তিনটি শক্রু আছে -
১. শয়তান ২. পাপ ৩. মৃত্যু
এদোন বাগানে শয়তান আদম ও তার স্ত্রী হবাকে প্রতারিত করে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে- ঈশ্বর হইতে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। মানুষের বিবেগ কলুষিত হয়েছে, যার দরুন মানুষ ঈশ্বরের হুকুম শরিয়ত পালন করতে ব্যার্থ হচ্ছেন। আর ঈশ্বরের হুকুম অমান্য করাই হল পাপ, আর ঈশ্বর পাপের বিচার করেন। ঈশ্বরের বিচারের রায় হল মৃত্যু। এই হল মানুষের বর্তমান চিত্র। মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, শয়তান পাপ ও মৃত্যু থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে। কিন্তু মানুষ কখনোই নিজের চেষ্টা দ্বারা শয়তান, পাপ ও মৃত্যু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। এখানে মানুষ অসহায় - মানুষের উদ্ধারকারী প্রয়োজন।
সুখবর হলঃ ঈশ্বর পাপিদের রক্ষা করতে তাঁর নিজ কালাম, মানুষ উদ্ধারকারী হলেন, যিনি তাঁর পুত্র যীশু খ্রিষ্ট। যীশু শয়তানকে পরাজিত করেছেন, ঈশ্বরের সকল শরিয়ত পালন করে, পাপিদের পাপের জন্য নিজ রক্ত ঢেলে দিয়ে, ক্রুশের উপর পাপিদের পক্ষে কুরবানি হয়ে, শয়তানের পরিকল্পনা ও শয়তানকে পরাজিত করেছেন। তাই শয়তানের নিকট হইতে পাপিকে উদ্ধার কেবল যীশুই করতে পারেন।
পাপ আমরা ঈশ্বরের হুকুম অমান্য করে যে পাপের শাস্তি তৈরি করছি, সেই শাস্তি আমরা পাওয়ার যোগ্য, কিন্তু যীশু আমাদের পক্ষে, আমাদের পাপের শাস্তি বহন করেছেন, আমাদের আর পাপের শাস্তি নাই।
মৃত্যুঃ মৃত্যু অর্থ হল বিচ্ছিন্ন হওয়া। বাইবেলে তিনপ্রকার মৃত্যুর বিষয়ে বর্ণনা আছে।
ক. পাপের দরুণ ঈশ্বর হইতে বিচ্ছিন্ন যেমন এদোন বাগানে আদম নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ঈশ্বর হইতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্নিক মৃত্যু হল। খ. দেহ হতে আত্মার আলাদা হওয়া এটি দৈহিক মৃত্যু। গ. শেষ বিচারের পরে দোযকে চিরকাল ঈশ্বর হইতে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন হল অনন্ত মৃত্যু।
যীশু শয়তান, পাপ ও মৃত্যু হইতে পাপিদের উদ্ধারকর্তা। দ্বিতীয় বিকল্প কোন উদ্ধারকর্তা নেই।
উদাহরণঃ যেমন আপনি প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক দ্বীপে একা আটকা পরেছেন। আপনি আপনার সমস্ত চেষ্টা দ্বারা কখনোই সেই দ্বীপ হইতে নিজে রক্ষা করতে পারছেন না। এখানে আপনি একজন উদ্ধারকারী প্রয়োজন অনুভব করছেন। আপনি কোন সংকেত ব্যবহার করেছেন, যে আপনি এই দ্বীপে আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারী একটি হেলিকপ্টার আপনাকে সেখান থেকে উদ্ধার করলেন। ঠিক তেমনি একজন উদ্ধারকারী মানুষের নাজাতের জন্য দরকার। ঈশ্বর পাপিদের উদ্ধারের জন্য যীশুকে নিযুক্ত করেছেন।
এখন প্রশ্ন হল - ইসলাম কি মুসলিমদের উদ্ধারের প্রয়োজন নেই বলছেন। না কি যীশুকে উদ্ধারকারী হিসাবে অস্বীকার করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখি যে তারাও উদ্ধারকারী খুঁজছেন। সমস্যা হল ইসলাম ও মুসলিমরা যীশুকে উদ্ধারকর্তা বলে অস্বীকার করছে। তাহলে ইসলাম কিভাবে শয়তান, পাপ ও মৃত্যু হইতে পাপিদের পরিত্রাণের কথা বলছেন?
“ঈসা মসীহ্ আমাদের পাপ বহন করতে পারেন না, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে “কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করিবে না” (সূরা ৫৩:৩৮)”
ঈসা মসীহ্ যে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করেছেন, তা আসলে কোরআন শরীফের এই আয়াতে অস্বীকার করা হচ্ছে না। আয়াতটি এরকম — তাহাকে কি অবগত করা হয় নাই যাহা আছে মূসার কিতাবে, এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে পালন করিয়াছিল তাহার দায়িত্ব?
উহা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করিবে না” (সূরা নাজ্ম ৫৩:৩৬-৩৮)
যে গুনাহ্ করবে সে-ই মরবে। ছেলে বাবার দোষের জন্য শাস্তি পাবে না আর বাবাও ছেলের দোষের জন্য শাস্তি পাবে না। সৎ লোক তার সততার ফল পাবে এবং দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার ফল পাবে। (#ইহিষ্কেল ১৮:২০)
এখানে শেষ বিচারের শাস্তি সম্বন্ধে বলা হচ্ছে না, বরং দুনিয়াবী শাস্তি সম্বন্ধে বলা হচ্ছে, কারণ তখনকার সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী, বাবার দোষের জন্য ছেলে শাস্তি পেত এবং ছেলের দোষের জন্য বাবা শাস্তি পেত। আবার এখানে জোর করে কারও ঘাড়ের উপর অন্যের শাস্তি ছাপিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, কিন্তু স্বেচ্ছাকৃতভাবে অন্যের শাস্তি বহন করা নিষিদ্ধ এখানে হয় নি। আসলে, কোরআনের অন্যান্য আয়াতের দৃষ্টিতে, কোরআনের উপরোক্ত আয়াত কোন সর্বজনীন নিয়ম হিসাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, কারণ—
১। কোরআন শরীফ নিজেই একটি সর্বজনীন নিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে। সরল মানুষ যারা বিপথে নিয়ে যায় এমন মন্দ লোকদের সম্বন্ধে সূরা নাহল ২৫ আয়াত বলে—
"ফলে কিয়ামত দিবসে উহারা বহন করিবে উহাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাহাদেরও যাহাদিগকে উহারা অজ্ঞতাহেতু বিভ্রান্ত করিয়াছে। দেখ, উহারা যাহা বহন করিবে তাহা কত নিকৃষ্ট!" (সূরা নাহল ১৬:২৫)
আল কোরআন ইয়ুফাস্সিরু বা’’দুহু বা’দান (অর্থাৎ “কোরআনের বিভিন্ন অংশ পরপস্পরের ব্যাখ্যা দেয়”) নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের স্বীকার করতে হয় যে সূরা নাজ্ম ৩৮ আয়াতের নিয়মের প্রয়োগ সর্বজনীন নয় বরং সীমিত।
২। অনেক আগেই আদম (আঃ) এই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। কোরআন এবং তৌরাতের শিক্ষা অনুযায়ী, আদমের একটি পাপের ফলে সমস্ত মানব জাতি আর জান্নাতুল ফেরদৌসের বাগানে বাস করতে পারেনা বরং তাদেরকে দুঃখকষ্টের এই দুনিয়াতে বাস করতে হচ্ছে। অর্থাৎ, অন্য একজন ব্যক্তির পাপের শাস্তির ফল আমাদের বহন করতে হচ্ছে, অর্থাৎ ফেরদৌস থেকে বহিস্কার হয়ে আমাদের এই জগতে বাস করতে হচ্ছে। আসলে, বাইবেল থেকে আমরা জানি কেন আদম আল্লাহ্র এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম ছিলেন। তা হল, মানব জাতির সঙ্গে সর্বপ্রথম মানুষ হিসাবে আদমের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। তেমনই আল্লাহ্র ইচ্ছায় মানব জাতির সঙ্গে একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তি ঈসা মসীহ্র একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এইজন্য ইঞ্জিল ঈসাকে বলেন “দ্বিতীয় আদম”, যেমন করে কোরআনও বলেছেন, “আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো” (সূরা আলে-‘ইমরান ৫৯ আয়াত)। ইঞ্জিলে এটার ব্যাখ্যা আছে—
আদমের সংগে যুক্ত আছে বলে যেমন সমস্ত মানুষই মারা যায়, তেমনি মসীহের সংগে যারা যুক্ত আছে তাদের সবাইকে জীবিত করা হবে” (#১করিন্থীয় ১৫:২২, এবং দেখুন ১৫:৪৫)
আদমের সঙ্গে আমাদের যেমন একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে, তেমনই হযরত ঈসার সঙ্গেও আমাদের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। এমন একটি সাধারণ নিয়ম কেন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভঙ্গ হয়, তা বোঝাবার জন্য আরেকটি নিয়মের সঙ্গে তা তুলনা করা যায়—“খুন করিয়ো না”। এই সাধারণ নিয়ম শুধুমাত্র ন্যায্যভাবে ভঙ্গ করা যায় যদি প্রধান বিচারপতি একজনকে মনোনীত করেন একটি বিশেষ ভূমিকার জন্য (ঘাতক বা জল্লাদ হিসেবে) মৃত্যুদণ্ড শাস্তি প্রদান করার জন্য। “অন্যের বোঝা বহন না করা”র নিয়মের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম থাকে যখন প্রধান বিচারপতি (আল্লাহ্) বিশেষ ভূমিকার জন্য একজনকে মনোনীত করেন (অর্থাৎ ঈসা মসীহ্কে)।
দ্বিতীয়তঃ ঈসা মসীহ্ এই সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার আরেকটি কারণ হল যে সমস্ত মানব জাতির মধ্যে কেবল তিনিই পুরোপুরি নিষ্পাপ। আল্লাহ্র ন্যায্যতা অনযায়ী, কোন পীর বা ফকির দ্বারা পাপ মোচন হয় না কারণ ধার্মিক মানুষ হয়েও এরা আমাদের মত পাপে কলঙ্কিত। যেহেতু একমাত্র হযরত ঈসা মসীহ্ নিষ্পাপ, অন্যের ভার স্বেচ্ছাকৃতভাবে বহন করার অধিকার কেবল তারই আছে।
তৃতীয়তঃ ঈসা মসীহ্ যে আল্লাহ্র ইচ্ছাতে মানব জাতির পাপের শাস্তি সলীবে বহন করেছেন তা ইঞ্জিল শরীফে অনস্বীকার্য। ইঞ্জিলে এমনকি তৌরাতেও তা বার বার বলা হয়েছে। একজন যে “অন্যের বোঝা বহন করতে পারে” আমরা তা অস্বীকার করতে পারি, কিন্তু তাতে আমরা নিজেকে জাহান্নামের দিচ্ছি, কারণ আমরা পাপের নিশ্চিত শাস্তির একমাত্র রেহাইকে অস্বীকার করছি এবং আল্লাহ্র রহমত এবং ক্ষমার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করছি।
তৃতীয়তঃ ঈসা মসীহ্ যে আল্লাহ্র ইচ্ছাতে মানব জাতির পাপের শাস্তি সলীবে বহন করেছেন তা ইঞ্জিল শরীফে অনস্বীকার্য। ইঞ্জিলে এমনকি তৌরাতেও তা বার বার বলা হয়েছে। একজন যে “অন্যের বোঝা বহন করতে পারে” আমরা তা অস্বীকার করতে পারি, কিন্তু তাতে আমরা নিজেকে জাহান্নামের দিচ্ছি, কারণ আমরা পাপের নিশ্চিত শাস্তির একমাত্র রেহাইকে অস্বীকার করছি এবং আল্লাহ্র রহমত এবং ক্ষমার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করছি।
#মার্ক ২:১৭ যীশু তাহা শুনিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে; আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি।
#প্রেরির ৪:১২আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে। #তীমথিয় ১:১৫ এই কথা বিশ্বসনীয় ও সর্ব্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন; তাহাদের মধ্যে আমি অগ্রগণ্য; সুতরাং যীশুই এই জগতের একমাত্র ত্রাণকর্তা যা অস্বীকার করা যায় না।