নিম্ন লিখিত পদটি অনেক অবিশ্বাসী ভাইবোন ব্যবহার করে যে ঈশ্বর মানুষ হতে পারে না ।
"ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন; তিনি মনুষ্য-সন্তান নহেন যে অনুশোচনা করিবেন; তিনি কহিয়া কি কার্য করিবেন না? তিনি বলিয়া কি সিদ্ধ করিবেন না?"
(#গনণাপুস্তক ২৩:১৯ )
তাদের যুক্তি হচ্ছে "ঈশ্বর মনুষ্য নহেন - তাই যীশু ঈশ্বর নহেন" কি যে যুক্তি!
কিন্তু খ্রীষ্টীয় মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে, পুত্র ঈশ্বর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যিনি যুগে যুগে পিতা ঈশ্বরের সংগে ছিলেন অনন্তকালীন বাক্য হিসাবে তিনি মানুষ হয়েছেন । তাই তিনি ঈশ্বর-মানব ।
সেইজন্য আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে ঈশ্বর মানুষ হতে পারে যা এই পদ খ্রীষ্টীয় মতবাদ Incarnation ( ঈশ্বর মাংসে মূর্তিমান হয়েছেন) কোন বাধা তৈরী করে না ।
পটভূমিকা
ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে মিসরে ফৌরণের দীর্ঘ সময়ের দাসত্ব থেকে মহাপরাক্রমশালী আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে মুক্ত করে নিয়ে আসেন। এরপর চল্লিশ বৎসর ঈশ্বর ঐশ্বরিক যোগানের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করে কনান দেশের ও যর্দন নদীর পূর্ব প্রান্তে মোয়াবের তলভূমিতে অবস্থান করতে থাকেন । সেই সময় মোয়াব দেশের রাজা বালাক ইস্রায়েল জাতির জীবনে যেসব মহাপরাক্রমশালী ঘটনা ঘটেছে তা শুনে অনেক ভীত সন্ত্রস্ত হোন । বিশেষ করে ইস্রায়েল জাতি যখন ইমোরীয়দের চরম ভাবে পরাজিত করেন। তাছাড়া ঈশ্বর সংখ্যায়ও তাদের আশীর্বাদ করেছিলেন । তাই তিনি ইস্রায়েল জাতিকে অভিশাপ দেবার জন্য বিলিয়ম নামে একজন ভাববাদীকে ভাড়া করেন। (#গণনা পুস্তক ২২:১-৬)। তা করার জন্যে বিলিয়মের কথানুসারে বালাক রাজা সাতটি বলিদানের বেদি তৈরী করেন এবং তাতে বিলিয়ম বলিদান করেন (#গণনা ২৩:১,২) যেন ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে অভিশাপ দেন ।
কিন্তু ভাববাদী বিলিয়ম রাজা বালামের কথা রাখতে পারেননি বরং বিলিয়ম ঈশ্বরের কথানুসারে আশীর্বাদ করেন । পরে রাজা বালাক বিলিয়মকে স্হান পরিবর্তন করে অভিশাপ দিতে বলেন তবুও ঈশ্বরের সাক্ষ্য অনুযায়ী ইস্রায়েল জাতিকে আশীর্বাদ করেন। এইসকল কথা ভাববদী বিলিয়ম চারটি ভাববানীতে উল্লেখ করেছেন (#গণনা ২৩:৭-১০, ১৮-২৪,২৪:৩-৯,১৫-২৪)। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু দ্বিতীয় ভাববাণীতে আছে।
আলোচিত পদ দ্বারা ঈশ্বর কি বুঝিয়েছেন? "ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন"
প্রথমতঃ রাজা বালাকের ঈশ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা ছিল । তিনি মনে করেছিলেন ভাববাদীকে উপঢৌকন দিয়ে অথবা যাদু মন্ত্র দিয়ে ঈশ্বরের মন পরিবর্তন করতে পারবেন । কিন্তু এই কথা দ্বারা ঈশ্বরের কথার অপরিবর্তনীয় স্বভাব ও সততার কথা বলা হয়েছে । অন্যদিকে আমাদের আজকের প্রসঙ্গে ভাববাদী বিলিয়ম ঈশ্বরের কাজে বাধাস্বরূপ হন । তিনি ক্রমাগতভাবে সত্য প্রকাশে বাধা দেন ও সন্দেহজনক কথা বলার চেষ্টা করেন যা ঈশ্বরীয় স্বভাবের পরিপন্হী। এই উক্তির মধ্য দিয়ে মানুষ ও ঈশ্বরের মাঝে যে পার্থক্য আছে তা বুঝানো হয়েছে (TNIV study bible ,page 228)।
দ্বিতীয়তঃ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিবর্তন হবে না । ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে আশীর্বাদ করার জন্য যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা তিনি ভেঙে ফেলবেন না । কেননা ঈশ্বর বিলিয়মের মধ্য দিয়ে বলেছিলেন,
"তিনি যাকোবে অধর্ম দেখিতে পান নাই, ইস্রায়েলে উপদ্রব দেখেন নাই; উহার ঈশ্বর সদাপ্রভু উহার সহবর্তী, রাজার জয়ধ্বনি উহাদের মধ্যবর্তী।" (#গণনা ২৩:২১) তার অর্থ হচ্ছে, সেই সময়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ইস্রায়েল জাতির পাপ ছিল না : যেমন : মূর্তি পূজা । বিলিয়ম ভাল করে জানতেন একমাত্র পাপ ছাড়া ঈশ্বরের সাথে তাদের বিচ্ছেদ হবে না ।( Mathew Henry on Numbers 23:21, pg 168)।
প্রকৃত পক্ষে মানুষের স্বভাব পরিবর্তন হয় কিন্তু ঈশ্বরের না: Matthew Henry এ সম্পর্কে ঠিকই বলেছেন যে, "But though there are many devices in man's heart, God's counsels shall stand."
(Matthew Henry Commentary )।
মূলত ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে কনান দেশ দেওয়ার জন্য অব্রাহাম,ইসহাক ও যাকবের মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন যা তিনি সিদ্ধ করতে মনস্থির করেছেন তা অন্য কোন উপায়ে তা বর্জন করবেন না কারণ তিনি মানুষের মত মিথ্যাবাদী নয়।
তৃতীয়তঃ সত্য কথা ঈশ্বরের নৈতিক স্বভাব। মানুষ স্বভাবতই মিথ্যা কথা বলে কিন্তু ঈশ্বর না । ঈশ্বরের কোন অন্ধকার বলে কিছু নেই । "আমরা যে বার্তা তাঁহার কাছে শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইতেছি, তাহা এই, ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁহার মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই।" (#১যোহন ১:৫)
চতুর্থত: ঈশ্বর এখানে বলেনি যে , তিনি মানুষ হতে পারবেন না । তিনি তাঁর পুত্রের সম্পর্কে ভাববাণী করেছেন মহান ভাববাদী যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে যিনি বিক্রমশালী ঈশ্বর ।
"কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; আর তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাঁহার নাম হইবে- ‘আশ্চর্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ’।" (#যিশাইয় ৯:৬)।
পবিত্র বাইবেল আমাদের নিশ্চয়তা দেয় ঈশ্বরের অনন্তকালীন বাক্য যিনি ঈশ্বর মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন যা যিশাইয় ভাববাদী প্রভু যীশুর জন্মের প্রায় ৮০০ বৎসর পূর্বে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন।
কেন জন্ম নিয়েছিলেন?
প্রথমত: মুক্তির মূল্য পরিশোধের জন্য:
"কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।"(#মার্ক ১০:৪৫)
"তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন; এই সাক্ষ্য যথাসময়ে দাতব্য;" (#১তীম: ২:৬)
দ্বিতীয়ত: জীবন ও উপচয় দেওয়ার জন্য:
"চোর আইসে, কেবল যেন চুরি, বধ ও বিনাশ করিতে পারে; আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জীবন পায় ও উপচয় পায়।" (#যোহন ১০:১০)
তৃতীয়ত: শয়তানকে শক্তিহীন করার জন্য:
"ভাল, সেই সন্তানগণ যখন রক্তমাংসের ভাগী, তখন তিনি নিজেও তদ্রূপ তাহার ভাগী হইলেন; যেন মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন," (#ইব্রীয় ২:১৪)
"যে পাপাচরণ করে, সে দিয়াবলের; কেননা দিয়াবল আদি হইতে পাপ করিতেছে, ঈশ্বরের পুত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য সকল লোপ করেন।" (#১যোহন ৩:৮)।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন অবিশ্বাসীরা এই পদ ব্যবহার করে ?
কারণ তারা খ্রীষ্টের দুই স্বভাব: মানবিক ও ঐশ্ব স্বভাব একই সাথে আছে তা অস্বীকার করে ( আরও দেখতে ক্লিক করুন https://carm.org/dictionary-hypostatic-union।)
যেহেতু পদ বলেছে "ঈশ্বর মনুষ্য নহেন" সেহেতু ঈশ্বর মাংসে আগমন করতে পারে না । কিন্তু এই বাক্য খ্রীষ্টের মাংসে আগমনের কথা বলে না । অধিকন্তু গণনাপুস্তক যখন লেখা হচ্ছে তখনও পর্যন্ত যীশুর আগমন পৃথিবীতে হয় নাই। সেই কারণে এটা সত্য যে , তখন পুত্র ঈশ্বর মানুষ হন নাই।
কিন্তু পিতা ঈশ্বর নিদিষ্ট সময়ে পুত্রকে পাঠান , "কিন্তু কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্রকে প্রেরণ করিলেন; " (#গালাতীয় ৪:৪)।
তিনিই অনন্তকালীন বাক্য যিনি মাংসে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন , নিদিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেছেন ও পুনয়ায় পূর্ব স্হানে গেছেন (#যোহন ১:১,১৪ ; #লূক ২৪:৫১)।
এখন আমরা যদি পদের দ্বিতীয় অংশ দেখি , তাহলে দেখতে পাই ,-----'' যে মিথ্যা বলিবেন"
. . . " তার অর্থ আমরা পূর্বে দেখিয়েছি ঈশ্বর মিথ্যা কথা বলতে পারেন না । ঈশ্বর নিজেই সত্য যেমন যীশও দাবী করেছেন (#যোহন ১৪:৬)।
প্রতিটি মানুষের জন্মগত স্বভাব মিথ্যা বলার বা পাপ করার । শাস্ত্রীয় বচন হচ্ছে,
"কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে-" (#রোমীয় ৩:২৩)
কিন্তু খ্রীষ্ট এই শ্রেণীতে পড়ে না কারণ ,‘‘তিনি পাপ করেন নাই, তাহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই”। (#১পিতর ২:২২)।
প্রতিটি মানুষই পাপের স্পর্শে জন্ম হয় কিন্তু খ্রীষ্টের জন্ম আলাদা যা পবিত্র শাস্ত্র সাক্ষ্য দেয় (#মথি ১: ১৮-২৩,#লূক ১:৩১-৩৭)।
কারণ কি ? যেন অনন্তকালীন মহাযাজক হিসাবে তাঁর প্রজাদের জন্য শেষ বলিদান উৎকর্ষের মধ্য দিয়ে অনন্তকালীন মুক্তি অর্জন করতে পারেন ,
"এই জন্য, যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন।বস্তুতঃ আমাদের জন্য এমন এক মহাযাজক উপযুক্ত ছিলেন, যিনি সাধু, অহিংসুক, বিমল, পাপিগণ হইতে পৃথক্কৃত, এবং স্বর্গ সকল অপেক্ষা উচ্চীকৃত।" (#ইব্রীয় ৭:২৫,২৬)।
উপসংহার
ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করার জন্য ঈশ্বরের আত্মা প্রয়োজন কারণ তা ঈশ্বরের নিশ্বসিত বাক্য ( #২তীমথিয় ৩:১৬-১৭)। অবিশ্বাসীদের বাক্য বিন্যাস তাই ত্রুটিপূর্ণ কারণ তাদের পবিত্র আত্মার শক্তি নেই । জগতের বিদ্যমান শিক্ষা দ্বারা তা অর্জন সম্ভব নয় কারণ আলোচিত পদ #গণনাপুস্তক ২৩:১৯ পদে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা অবিশ্বাসীরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে, আমরা দেখেছি এ পদ দ্বারা ঈশ্বরের নৈতিকতার গুণাবলির কথা বলা হয়েছে । তিনি মিথ্যা বলেন না কিন্তু মানুষ স্বভাবতই মিথ্যা কথা বলে । পদের প্রেক্ষাপট আমাদের পরিষ্কার করে বলে রাজা বালাম ভাববাদী বিলিয়মকে ডেকে এনেছিলেন যেন ইস্রায়েল জাতিকে অভিশাপ দেয় কিন্তু ঈশ্বর তা সমর্থন করেননি বরং আশীর্বাদ করতে বাধ্য করেছেন কারণ তিনি আশীর্বাদ করার জন্যই প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি মানুষের মত প্রতিজ্ঞা ভাংগেন না কাণ তিনি মিথ্যা বলেন না। তাই এই পদের সাথে খ্রীষ্টের মানব দেহ গ্রহণের কোন বৈসাদৃশ্য ও বাঁধা (contradiction) তৈরী করে না ।
Bibliography:
Tyndale Serial Commentary on Numbers 23:19
John MacArthur Study Bible comment on Numbers 23:19
https://www.biblestudytools.com/commentaries/gills-exposition-of-the-bible/numbers-23-19.html
ttps://www.studylight.org/commentary/numbers 23:19.html
Matthew Henry Commentary on Numbers 23:19 .