স্বর্গদূতহলেন আত্মা সম্বলিত ব্যক্তি যাদের বুদ্ধিমত্তা, আবেগ এবং ইচ্ছাশক্তি আছে। এই বিষয়টি ভালো এবং মন্দ উভয় স্বর্গদূত সম্বন্ধেই সত্য বা প্রযোজ্য। স্বর্গদূতেরা
বুদ্ধিমত্তার অধিকারী (মথি ৮:২৯; ২করিন্থীয় ১১:৩; ১পিতর ১:১২ পদ)।
তাদের আবেগ-অনুভূতি আছে (লূক ২:১৩; যাকোব ২:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭ পদ)। তাদের কাজ করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি আছে (লূক ৮:২৮-৩১; ২তীমথিয় ২:২৬; যিহূদা ৬ পদ)।
স্বর্গদূতেরা হলো সত্যিকারের দেহবিহীন আত্মা (ইব্রীয় ১:১৪ পদ)। যদিও তাদের শারীরিক দেহ নেই তথাপি তারা ব্যক্তিত্বের অধিকারী
স্বর্গদূতদের জ্ঞান সীমিত
কারণ হলো, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের যে জ্ঞান আছে তা সীমিত। এর অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর যা জানেন তার সবকিছু তারা জানে না (মথি ২৪:৩৬ পদ)। মানুষের চেয়ে তাদের জ্ঞানে বিশালতা বেশী বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এর পিছনে তিনটি কারণ থাকতে পারেঃ
প্রথমত, শুরুতেই মানুষের চেয়ে স্বর্গদূতদের বড় বা মহৎ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা মানুষের চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানের অধিকারী।
দ্বিতীয়ত, স্বর্গদূতেরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশী বাইবেল এবং জগৎ সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে এবং এগুলোর মধ্য থেকে জ্ঞান অর্জন করে (যাকোব ২:১৯: প্রকাশিত বাক্য ১২:১২ পদ)।
তৃতীয়ত, স্বর্গদূতেরা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের নানাবিধ কর্মকান্ড পর্য়বেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে। সুতরাং তারা জানে যে, অন্যান্যরা ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং তারা এটাও সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে যে, ঐ একই ঘটনায় আমরাও কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি কিংবা আমাদের প্রতিক্রিয়াই বা কেমন হবে।
স্বর্গদূতদের কাজ
যদিও তাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি আছে তবু স্বর্গদূতদের মত অন্যান্য সব সৃষ্টিও ঈশ্বরের ইচ্ছাশক্তির দাস বা তাঁর অধীন। উত্তম বা ভালো স্বর্গদূতদের পাঠানো হয় যেন তারা বিশ্বাসীদের সাহায্য করতে পারে (ইব্রীয় ১:১৪ পদ)।
পবিত্র বাইবেলে স্বর্গদূতদের কাজ সম্বন্ধে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হলোঃ তারা ঈশ্বরের গৌরব-প্রশংসা করেন (গীতসংহিতা ১৪৮:১-২; যিশাইয় ৬:৩ পদ); তারা ঈশ্বরের আরাধনা করেন (ইব্রীয় ১:৬; প্রকাশিত বাক্য ৫: ৮-১৩ পদ)। ঈশ্বর যা কিছু করেন তাতে তারা আনন্দ করেন (ইয়োব ১: ৬; ২:১ পদ)। তারা হলেন ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের হাতিয়ার (প্রকাশিত বাক্য ৭:১; ৮:২ পদ)। তারা আমাদের কাছে আমাদের প্রার্থনার উত্তর বহন করে আনেন (প্রেরিত ১২:৫-১০ পদ)। খ্রীষ্টের পক্ষে লোকদের জয় করার জন্য তারা সাহায্যকারীরূপে কাজ করেন (প্রেরিত ৮:২৬; ১০:৩ পদ)। তারা হলেন খ্রীষ্টিয়ানদের কাজকর্ম ও তাদের দুঃখ-দূর্দশার তদারককারী (১করিন্থীয় ৪:৯; ১১:১০; ইফিষীয় ৩:১০; ১পিতর ১:১২ পদ)। তারা বিপদের সময় আমাদের উৎসাহ যোগান (প্রেরিত ২৭:২৩-২৪ পদ)। ধার্মিকদের মৃত্যুর সময় তারা তাদের যত্ন নেন (লূক ১৬:২২ পদ)।
স্বর্গদূত এবং মানুষের তুলনা
স্বর্গদূতেরা মানুষের তুলনায় সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন সত্তার অধিকারী। মানুষ কখনেই মারা যাবার পর স্বর্গদূতে পরিণত হতে পারে না। অন্যদিকে স্বর্গদূতও কখনও মানুষে পরিণত হতে পারেন না এবং তারা কখনও মানুষের মত ছিলেনও না। ঈশ্বর যেভাবে মানুষ সৃষ্টি করেছেন ঠিক একইভাবে তিনি স্বর্গদূতদেরও সৃষ্টি করেছেন। বাইবেলের কোথাও এটি প্রকাশ করা হয় নাই যে, স্বর্গদূতদের ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে কিংবা তাঁর নিজের মত করে সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে মানুষকে ঈশ্বেরের প্রতিমূর্তিতে এবং তাঁর মত করেই সৃষ্টি করা হয়েছে (আদিপুস্তক ১:২৬ পদ)।
স্বর্গদূতেরা হলেন আত্মিক সত্তা যারা একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কোন কিছু করতে পারেন এবং মানুষের আকার ধারণ করতে পারেন। কিন্তু মানুষকে প্রথম থেকেই আত্মিক গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে দৈহিক সত্তা দিয়ে সৃষ্টি করা হযেছে। আমরা স্বর্গদূতদের নিকট থেকে যে মহৎ বিষয়টি শিখতে পারি সেটি হলো ঈশ্বরের আদেশের প্রতি তাদের তাৎক্ষণিক প্রশ্নাতীত বাধ্যতা।
অরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বর্গ দুতের ভজনা বা তাদের কাছে প্রার্থনা করা বাইবেল বিরুদ্ধ। (প্রকাশিত বাক্য ২২:৯-১০)
Comments