প্রিয়পাঠক, এই বিশ্বের প্রত্যেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসী যদি এক একটি জীবন্ত মিশনারী হতো তা হলে সুসমাচারের এই বার্তা সমুদয় দেশে, প্রত্যেক জাতি, বংশ ও ভাষাবাদীর নিকটে অতি দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ত, তাই নয় কি?

যাহারা ঈশ্বরের নগরে প্রবেশ করিবে, এই পার্থিব জীবন-কাল তাহাদের প্রত্যেকেরই আচার - ব্যবহারে খ্রীষ্টকে প্রকাশ করতে হবে। কারণ তারা যীশু খ্রীষ্টের বার্ত্তাবাহক ও তাঁহার সাক্ষীরূপে নির্ণীত হইবে। সমুদয় মন্দ আচার - ব্যহারের বিরুদ্ধে তাহাদের সুস্পষ্ট ও সুনির্দ্দষ্ট সাক্ষ্য প্রদান করিতে হইবে এবং ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান, তাঁহার দিকে পাপিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। যাহারা তাঁহাকে গ্রহন করে, তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার ক্ষমতা দান করেন। একমাত্র নূতন জন্মের দ্বারা আমরা প্রবেশ করি তাহা সরল, কিন্তু নর-নারী এবং সন্তান - সন্ততিগণকে ইহার মধ্যে দিয়ে আমাদের চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তাহাদিগকে শিক্ষা দিতে হবে যে, পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তাহাদের অবশ্যই নূতন অন্তঃকরণ ও নূতন আত্মা লাভ করিতে হইবে। পুরাতন, বংশগত স্বভাবের উপরে জয় লাভ করতে হবে। কারণ, মনের স্বাভাবিক বৃত্তিগুলির পরিবর্ত্তনের নিতান্ত প্রয়োজন। সকল প্রকার প্রতারণা, ছল-চাতুরী, মিথ্যা-প্রবঞ্চনা ও কুবাক্য আবশ্যিক বর্জন করতে হবে। নূতন জীবন,- যে জীবন প্রত্যেক নর - নারীকে খ্রীষ্টের মত করে গড়ে তোলে, সেইরূপ জীবন যাপন করতে হবে।
হে আমার ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ, যে মন্ত্র-জাল আপনাদিগকে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে, আপনারা কি তাহা ছিন্ন করতে অভিলাষী নহেন? মৃত্যুর নিষ্ক্রিয়তার সহিত যে অলসতার তুলানা করা যায়, আপনারা কি তাহা হতে উন্থিত হবেন না? কার্য্য করার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, কার্য্যে রত হউন। যীশুর কাছে লোকদিগকে আনুন ও তাহাদিগকে সত্যের তত্ত্বজ্ঞান দেওয়ার নিমিত্ত ব্যক্তিগত কার্য্যে নিবিষ্ট থাকুন। ঐরূপ পরিশ্রমে উত্তেজক ও বলকারক এই উভয়-বিধ ঔষধ পাইবেন; ইহা আপনাকে উত্তেজনা ও বল, এই উভয়ই দান করবে। কার্য্যের ফলে আপনার আধ্যাত্মিক শক্তি উত্তরোত্তর সতেজ হবে, আর এরদ্বারা আপনি আপনার নিজের পরিত্রাণ অধিকতর কৃতকার্য্যতার সহিত সাধন করিতে পারিবেন। মৃত্যুতে যেমন সংজ্ঞা থাকে না, বহু নামধারী খ্রীষ্টিয়ান তেমনি অচৈতন্য অবস্থায় রয়েছে। তাহাদিগকে জাগরিত করার জন্য প্রত্যেক প্রকার চেষ্টা করতে হবে। চেতনা দিতে হবে, অনূনয়-বিনয় করতে হবে, ভর্তসনা করতে হবে। তাহাদের শীতল স্বভাব যেন ঈশ্বরের মধুর প্রেমে উষ্ণ ও বিগলিত হয়, তর্জন্য প্রার্থনা করতে হবে। তাহারা শুনিতে না চাহিলেও আপনার পরিশ্রম বিফল হইবে না। অন্যের আশীর্ব্বাদের চেষ্টায়, আপনি নিজে আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবেন।
কেহ যেন মনে না করে যে, যে প্রভুর কার্য্যের অংশ গ্রহন করতে অপারক, কারণ সে অশিক্ষিত। ঈশ্বর আপনার জন্য একটি কার্য্য রেখেছেন। তিনি প্রত্যেককেই নিজ নিজ কার্য্য দিয়াছেন। আপনি নিজেই শাত্র অনুসন্ধান করিতে পারেন।
গীতসংহীতা ১১৯:১৩০ তব বাক্যসমূহের বিকাশ আলোক প্রদান করে, তাহা অমায়িকদিগকে বুদ্ধিমান করে।
আপনি কার্য্যের জন্য প্রার্থানা করতে পারেন সরলান্তঃকরণে বিশ্বাসের সহিত প্রার্থনা করিলে ঈশ্বর তাহা শুনিবেন। ফল কথা আপনার সামর্থ্যানুযায়ী আপনার কার্য্য করতে হবে। মানুষ কি হতে পারে এবং তাহাদের প্রভাবের দ্বারা ধ্বংসোন্মুখ লোকদের আত্মার পরিত্রাণের জন্য তাহারা কি অসাধ্য সাধন করিতে পারে, তাহা প্রকাশার্থে স্বর্গীয় আধ্যাত্মিক সত্ত্বাগণ মানবের সহিত সহযোগিতার অপেক্ষায় আছেন। মরুপ্রান্তের জাহাজ ধ্বংসের ন্যায় সর্ব্বদেশের যে সহস্র সহস্র ব্যক্তি আপন আপন পাপে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাহাদের রক্ষার নিমিত্ত ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় সহকারে কার্য্য করণার্থে খ্রীষ্ট আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান করছি। যাহারা খ্রীষ্টের গৌরবের অংশী হবে, তাহাদের আবশ্যক,- দুর্ব্বল, দীন দুঃখী ও হতাশদিগের সাহায্য করিয়া তাঁহার পরিচর্য্যারও অংশী হওয়া।
প্রত্যেক বিশ্বাসীরই সর্ব্বান্তঃকরণে মণ্ডলীর প্রতি অনুরক্ত থাকা কর্ত্তব্য। মণ্ডলীর শ্রীবৃদ্ধি তাঁহার প্রথম লক্ষ্যের বিষয় হওয়া উচিত। নিজের মঙ্গল চেষ্টা না করে মণ্ডলীর মঙ্গলার্থে সে যদি মণ্ডলীর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার গুরু-দায়িত্ব উপলব্ধি না করে, তবে তাহাকে ছাড়াও মণ্ডলী বেশ চলিতে পারে। ঈশ্বরের জন্য প্রত্যেকরই কিছু না কিছু করার ক্ষমতা আছে। অনেকে আছে, অনাবশ্যক বিলাসিতার জন্য প্রভূত অর্থ ব্যয় করে নিজেদের লালসা চরিতার্থ করিয়া থাকে, কিন্তু মণ্ডলী প্রতিপালনের জন্য অর্থদান করা, তাহারা বড়ই কষ্টকর বলে মনে করে। তাহারা মণ্ডলীর সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চাহে, কিন্তু তাহারা চাহে, যেন অন্যে তাহাদের খরচটা বহন করে।
যীশু খ্রীষ্টের রক্তে ক্রয় করা মণ্ডলীকে যথাযত রূপে সৈন্যদলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রত্যেক সৈন্যর জীবন পরিশ্রমের, ক্লেশের ও বিপদের জীবন। অন্ধকারের কর্ত্তৃত্বাধীপতি,- যে কখনও নিদ্রা যায় না এবং কখনও তাঁহার কার্য্য হইতে অবসর গ্রহণ করে না, তৎ পরিচালিত সতর্ক শত্রুগণ চতুর্দ্দিকে বিদ্যমান। কোন খ্রীষ্টীয়ান অসতর্ক হলে, এই পরাক্রান্ত শত্রু হঠাৎ ভীষণরূপে আক্রমণ করিয়া থাকে। মণ্ডলীর সভ্যগণ কার্য্যতৎপর ও জাগ্রত না হলে, উক্ত শত্রুর করাল কবলে পতিত হবে। যুদ্ধক্ষেত্রে যাইয়া অর্দ্ধাংশ সৈন্য অলসতা করিলে কিংবা নিদ্রা গেলে, ইহার ফল কি হবে? ফল হবে, পরাজয়, বন্দিত্ব কিংবা মৃত্যু। শত্রুগণের হস্ত হইতে কেহ পলায়ন করলে তাহার কি পুরস্কার লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হইবে? না, তাহারা তারা মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হবে। খ্রীষ্টের মণ্ডলীও অসতর্ক ও অবিশ্বস্ত হইলে, এতদপেক্ষা গুরুতর শাস্তি প্রাপ্ত হবে। খ্রীষ্টীয়ান সৈন্য নিদ্রাতুর হবে, ইহা অপেক্ষা অধিকতর ভয়াবহ ব্যাপার আর কি হতে পারে? যাহারা অন্ধকারের অধিপতির কর্ত্তৃত্বাধীনে, তাহারা জগতের বিপরীতে কতটা অগ্রসর হতে পারে? যুদ্ধের দিনে যাহারা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, পশ্চাদ্দিকে ফিরে উদাসীন ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে, যুদ্ধে তাহাদের কোন দায়িত্ব আছে বলে বধ না করে, তাহাদের ঐ ভাব পরিবর্তন করা, নতুবা তৎক্ষণাৎ দল ত্যাগ করা অপেক্ষাকৃত ভাল।
Comentarios