পাপের সূত্রপাত
প্রিয়পাঠক, পবিত্র বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে স্বর্গে আদম ও হবার অবাধ্যতার ফল হিসাবে পৃথিবীতে পাপের প্রবেশ ঘটে। প্রথম পাপ ঘটে সাপবেশে শয়তানের প্রলোভনে, যে মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল। পবিত্র বাইবেল পরিস্কারভাবে বর্ণনা দেয় যে সাপ পতনের কাহিনীতে প্রলোভনকারীরুপে কাজ করে, সে আর কেউ নয়, কিন্তু শয়তান -
যোহন ৮:৪৪ তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যবাদী ও তাহার পিতা।
রোমীয় ১৬:২০ আর শান্তির ঈশ্বর ত্বরায় শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করিবেন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক।
২ করি ১১:৩ কিন্তু আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ত্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়।
প্রকাশিত বাক্য ১২:৯ আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল।
সদসদ জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের ফল খাওয়া প্রথম পাপ হয়। এটি পাপ হয়েছিল কেননা ঈশ্বর এটি খেতে নিষিদ্ধ করেছিলেন এতে পরিস্কার বোঝা যায় যে ঈশ্বরের ইচ্ছায় মানুষ তার ইচ্ছাকে নিঃশর্তভাবে অধীন করতে রাজি নয়, এবং এতে মানুষের আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বুদ্ধিগতভাবে এটি অবিশ্বাস ও গর্ব প্রকাশ করেছিল, ইচ্ছার ক্ষেত্রে মানুষ ঈশ্বরের মত হওয়ার আকাঙ্খা এবং অনুভূতির দিক দিয়েএটি হচ্ছে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার অপবিত্র তৃপ্তির প্রকাশ। এ পাপের ফলে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি থেকে মানুষ বিচ্যুত হয়ে দোষী এবং নষ্ট হয়ে মৃত্যুর জগতে পতিত হল,
আদিপুস্তক ৩:১৯ তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।
রোমীয় ৫:১২ অতএব যেমন এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল;
রোমীয় ৬:২৩ কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।
মানব বংশে পাপ
প্রিয়পাঠক, আদম ও তার বংশধরদের পাপের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে বিদ্যামান আছে। এই বিষয়টি সাধারণত তিনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।
ক. সব চেয়ে পুরাতন ব্যাখ্যাটি হচ্ছে প্রকৃত তত্ত্ব, যার ফলে ঈশ্বর মূলতঃ একটি সাধারণ মানবীয় প্রকৃতি সৃষ্টি করেন, যেটি সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন অংশে স্থানান্তরিত হয় বিভিন্ন ব্যক্তিত্বে। আদমের সাধারণত: মানবিক পরিস্তিতির সমস্থটাই ছিল এবং পাপের মধ্যে দিয়ে দোষী ও দূষিত হল। স্বাভাবিকভাবে এটির প্রত্যেকটি অংশ দোষ ও দূষণ ঘটায়।
রোমীয় ৭: ১৯-২০ কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। পরন্তু যাহা আমি ইচ্ছা করি না, তাহা যদি করি, তবে তাহা আর আমি সম্পন্ন করি না, কিন্তু আমাতে বাসকারী পাপ তাহা করে।
খ. আমরা জানি যে সংস্কার যুগে প্রতিনিধিত্বমূলক তত্ত্বের সৃষ্টি হয়। এই ধারাতে আদম তার বংশধরদের নিকট দু' রকম সম্পর্কে উপনীত হল। তিনি স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রধান এবং তিনি প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান। যখন তিনি তাদের প্রতিনিধি হিসাবে পাপ করলেন, এ পাপ তাদের মধ্যেও সংক্রামিত হল ও ফল হিসাবে তারা সবাই দোষী বা দুষ্টত্ব অবস্থা নিয়ে জন্ম নিল। এটিই হচ্ছে প্রকৃত পাপ।
গীতসংহিতা ৫১:৫ দেখ, অপরাধে আমার জন্ম হইয়াছে, পাপে আমার মাতা আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলেন।
গ. তৃতীয়টি মধ্যবর্তী অভিযোগ - তত্ত্ব বা অভিযোগের যোগ্য তত্ত্ব যা তত পরিচিত নয়। এই মতে আদমের পাপ সরাসরি মানব শরীরে আসেনি, তার পতন তার বংশধরদের উপর প্রভুব রেখেয়ে এবং এটির দ্বারা তারা ব্যক্তিগতভাবে দোষী। তারা আদমের দোষী বলে পতিত নয়। কিন্তু তারা নিজেরা পতিত বলেই দোষী।
মথি ১৮:২-৪ তিনি একটী শিশুকে আপনার নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইলেন, এবং কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যদি না ফির ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না। অতএব যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গ-রাজ্যে শ্রেষ্ঠ।
আদি ও প্রকৃত পাপ
প্রিয়পাঠক আজ আমরা জানব আদি ও প্রকৃত পাপ কি! আমরা আদি ও প্রকৃত পাপের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। আদি পাপ হল সমস্ত লোকই পাপের স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহন করে এবং তাদের দ্বারা কৃত প্রকৃত পাপের উৎস হচ্ছে আদি পাপ।
ক. আদি পাপ: এটি মানুষের দোষ ও দোষণ দুটিকেই বুঝায়। আদমের নিষিদ্ধগাছের ফল খাওয়ার দোষ আমাদের মধ্যে এসেছে। কারণ আদম আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে পাপ করেছেন, তাই আমরা আদমের দোষে দোষী। অবশ্যই তার দোষনের বৈশিষ্ট আমরা পেয়েছি এবং সেটি এখন আমাদের পাপ করার দিকে নিয়েছে। মানুষ জন্মগত ভাবেই সম্পূর্ণ রুপে কলুষিত। এর অর্থ এই নয় যে প্রতিটি মানুষ সে যতদূর চায় ততদূর খারাপ, কিন্তু পাপ তার স্বভাবের প্রতিটি অংশকে নষ্ট করে এবং আধ্যাতিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সে এই অবস্থায় বন্ধুদের সামনে অনেক প্রশংসার কাজ করতে পারে, কিন্তু এমন কি তার সবচে উত্তম কাজেও খাদ থাকে। কেননা তা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম বা বাধ্যতায় কারণে হয় না। যদিও পবিত্র বাইবেলে এই ধরনের শিক্ষা রয়েছে।
যিরমিয় ১৭:৯ অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?
যোহন ৫:৪২ কিন্তু আমি তোমাদিগকে জানি, তোমাদের অন্তরে ত ঈশ্বরের প্রেম নাই।
ইফি ২:১-৩ আর যখন তোমরা আপন আপন অপরাধে ও পাপে মৃত ছিলে, তখন তিনি তোমাদিগকেও জীবিত করিলেন; সেই সকলেতে তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মার অধিপতির অনুসারে চলিতে। সেই লোকদের মধ্যে আমরাও সকলে পূর্ব্বে আপন আপন মাংসের অভিলাষ অনুসারে আচরণ করিতাম, মাংসের ও মনের বিবিধ ইচ্ছা পূর্ণ করিতাম, এবং অন্য সকলের ন্যায় স্বভাবতঃ ক্রোধের সন্তান ছিলাম।
ইব্রীয় ১১:৬ কিন্তু বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।
খ. প্রকৃত পাপ: প্রকৃত পাপ বলতে মানুষের বাহ্যিক ভ্রান্ত কাজকে বুঝায় না, কিন্তু আদি পাপ থেকে আসা চিন্তা, আকাঙ্খা ও সিদ্ধান্তকে বুঝায়। এগুলো এমন পাপ যা ঐতিহ্যগত প্রকৃতি ও মোহের কারণে করে থাকে। সেক্ষেত্রে আদি পাপ একটি কিন্তু প্রকৃত পাপ বহুবিধ। এগুলো হতে পারে আমাদের জীবনের অন্ত: নির্হিত পাপ, যেমন গর্ব, শক্রুতা, ঘ্রিণা, কামভাব, এবং মন্দ ইচ্ছা অথবা বাহ্যিক জীবনের পাপ, যেমন - প্রতারণা, চুরি, খুন, ব্যভিচার, এবং আরো অনেক কিছু। এগুলোর মধ্যে একটি পাপ রয়েছে যার ক্ষমা হয় না, সেটি হল পবিত্র আত্নার বিরুদ্ধে পাপ ঈশ্বরনিন্দার পাপ, যার পরে অন্তরের পরিবর্তন সম্ভব নয় এবং যার জন্য প্রার্থনাও নিষ্প্রয়োজন -
মথি ১২:৩১-৩২ এই কারণ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মনুষ্যদের সকল পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হইবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হইবে না। আর যে কেহ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে না, ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়।
লুক ১২:১০ আর যে কেহ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার নিন্দা করে, সে ক্ষমা পাইবে না।
১ যোহন ৫:১৬ যদি কেহ আপন ভ্রাতাকে এমন পাপ করিতে দেখে, যাহা মৃত্যুজনক নয়, তবে সে যাচ্ঞা করিবে, এবং [ঈশ্বর] তাহাকে জীবন দিবেন—যাহারা মৃত্যুজনক পাপ করে না, তাহাদিগকেই দিবেন। মৃত্যুজনক পাপ আছে, সে বিষয়ে আমি বলি না যে, তাহাকে বিনতি করিতে হইবে।
Comentarios