প্রিয়পাঠক, ভস্ম বুধবার বলতে পবিত্র বাইবেলে কোন শিক্ষার ইংগিত নেই, পবিত্র বাইবেলের কোথাও নাই, প্রেরিত ও আদি মন্ডলী এই অনুষ্ঠান উৎযাপন করেনি। তাহলে খুব সহজেই এই প্রশ্ন আসে, বর্তমান অনেক খ্রীষ্টিয় মন্ডলী বিশেষ করে ক্যাথলিক মন্ডলী কেন ঘটা করে এই অনুষ্ঠান ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্যে উৎযাপন করছেন?
ক্যাথলিক চার্চ মূলত পবিত্র বাইবেলের ঈশ্বরের বাক্যর বিপরীতে অনেক কিছুর চর্চা করে, যা মন্ডলীর ট্রেডিশন, এই ট্রেডিশন থেকে যদিও অনেক কিছুর সংস্কার ইতি মধ্যে করেছেন, আমরা আশা ও বিশ্বাস করি, অদূর্ভবিষ্যতে আরো সংস্কার হয়ে ঈশ্বরের বাক্যের কতৃত্বে ফিরে আসবে, কিন্তু ততদিনে বিশ্বের খ্রীষ্টিয় সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি সাধীত হবে, তারপরেও এই চার্চ ট্রেডিশনের মিথ্যা অহংকার রয়েই যাবে। ভষ্ম বুধবার আসলে মূলত একটি পৌত্তলিকতার ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল, আর ক্যাথলিক মন্ডলী খ্রীষ্টের শত শত বছর পরে কাথলিক মণ্ডলী তাদের মাণ্ডলিক বিশ্বাসরূপে এটাকে সুকৌশলে প্রবেশ করিয়েছেন। এটা সেই যুগের সেই সময়ের পত্তলিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান যখন কনস্টানটাইন ঢালাই করা পৌত্তলিক মূর্তিপূজার উদ্যোগী হয়েছিল এবং খ্রীষ্টিয়ানেরা রোমান সাম্রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল।
ভষ্ম বুধবার হলো প্রায়শ্চিত্তকাল, উপবাসকালের প্রথম দিন। রোমান কাথলিক মণ্ডলীগুলোতে ল্যাটিন আচারে এই ভষ্ম বুধবারে বিশেষভাবে আত্মপরীক্ষা, চেতনা ও মনপরিবর্তন, প্রার্থনা, ধ্যান, উপবাস (মাংসাহার ত্যাগ বিধেয়) এবং আত্মত্যাগ ও আত্মশুদ্ধি মাধ্যমে খ্রীষ্টের যাতনাভোগ এবং পুনরুত্থানের জন্য নিজেদের প্রস্তুতীর একটি বিশিষ্ট সময়। খেজুর পাতার পোড়ানো ভষ্ম বা ছাই হলো পাম সানডের আর্শীবাদ রবিবার। এই ভষ্মতে যাজক বা পুরোহিতরা তাদের কপালে ক্রুশচিহ্নে লেপন করে দেন যারা সামনে আসেন এবং হাঠু গাড়েন, আর বলেন, “কেননা তুমি ধূলি এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯ পদ)।
বাইবেলের সময় কাউকে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া হতো পাপের জন্য দুঃখ, অনুশোচিত হওয়ার জন্য। যারা ভষ্ম বুধবার মান্য করেন তারা দ্বিতীয়বার নিজেকে শাস্তি দেওয়া, অনুশোচনা ও প্রায়শ্চিত্ব করা; একটি পবিত্র মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়ার অর্থ প্রকাশ করেন।
কিন্তু এগুলো খ্রীষ্টের সুসমাচের ধার্মিকতার অনুষ্ঠান করে না। যদিও পুরাতন নিয়মে মিশর দেশ থেকে ঈস্রায়েল জাতির মুক্তির রাতে প্রতিটি দেয়ালে রক্তের দাগের কারণে মৃত্যুর দুতের শাস্তি থেকে ঈস্রায়েলের প্রথম সন্তানের মৃত্যুর শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল এটি পাসওভার। কিন্তু কপালে ছাই লাগানোর ব্যাপারে বাইবেলে কোনো ইঙ্গিত নেই। যীশু এবং তাঁর কোনো শিষ্যেরা এ ব্যপারে কোনো শিক্ষা কখনো দেননি। এ সব পৌত্তলিকতাদের থেকে নেওয়া। আফ্রিকা এবং ভারতীয় পৌত্তলিকতার আচারে কপালে ছাই লাগানো প্রচলত আছে। এ সব মানুষের তৈরি পরম্পরাগত জীবনধারা বা বিশ্বাস যা কাথলিকরা ঈশ্বরের আরাধনায় করে, যার কোনো ফল নেই এবং যীশু খ্রীষ্টের আজ্ঞায় সম্পর্কযুক্ত নয়।
মথি ১৫:৭-৯ পদ “এই লোকেরা ওষ্ঠধারে আমার সমাদর করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাক; এবং ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।”
ভষ্ম বুধবারে কপালে ছাই লেপন এটা মানুষের তৈরি ধর্মসূত্র মাত্র। পবিত্র আত্মার, আবেশে তৈরী কোন শিক্ষা নয়, এখানে সুসমাচারের কোন স্বপ্রকাশ হয় না, বরং পৌত্তলিকদের হৃদয় ও মন পৌত্তলিকতার দিকে ধাপিত করে।
মথি ২৮:১৮-২০ পদ “. . . আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সেই সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। . . . ”
ভষ্ম বুধবারে কপালে ছাই লেপন প্রভুর যীশুর আজ্ঞার শিক্ষা নয়, আর তা মানুষের শিক্ষা দেবারও বিষয় নয়। ঈশ্বরের লোকেরা ছাইয়ের মধ্যে, ছাই পেতে বসেছিল বা ছাই মেখে ছিল, ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দিয়ে ঈশ্বরের সম্মুখে তাদের গভীর দুঃখপ্রকাশ এবং অনুতাপ প্রকাশ করেছিল। কপালে ক্রুশচিহ্ন দেওয়া শুধু পৌত্তলিক কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস এবং মানুষের তৈরি পরম্পরাগত জীবনধারা বা বিশ্বাস।
ইষ্টের ৪:১,৩; ইয়োব ২:৮; যিশাইয় ৫৮:৫; যিরমিয় ৬:২৬; দানিয়েল ৯:৩; যোনা ৩:৬ পদ লূক ১০:১৩ পদ, “. . . তবে অনেক দিন পূর্বে তাহারা চট পরিয়া ভস্মে বসিয়া মন ফিরাইত”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, ছাই লাগানোর জন্য কপাল কেন বেছে নেওয়া হয়েছে? কেন বাম কনুই থেকে নিচ পর্যন্ত নয়? কেন ডান হাটু নয়? আপনার উপবাসকে নির্দেশ করে যীশু সর্বসমক্ষে প্রকাশ্যে আপনার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট, বিকৃত বা কদাকার করাটাকে তিনি নিন্দা জানিয়েছেন। মথি ৬:১৬-১৮ পদে উপবাস সম্পর্কে লেখা আছে, তা দেখুন ও পড়ুন।
আত্মধার্মিক খ্রীষ্টানরা অনেকে নিজেদের সাধু মনে করে, নিজেকে পবিত্রমনা মনে করায় তাদের ধর্মকর্ম দ্বারা প্রকাশে খ্রীষ্টের শিক্ষাকে অগ্রাহ্য করেছে। অনেক বড় বড় মণ্ডলী তাদের নিজেদের তৈরি রীতি, অনুশীলন ও অভ্যাস ঈশ্বরের কাছে বিরক্তিকর, বিতৃষ্ণাজনক, যেমন ইহুদীদের ঐরকম ছিল। যিশাইয় ১:১০-১৫; মথি ২৩:১-৩৯ পদ। ছাই লাগানোর জন্য কপাল কেন বেছে নেওয়া হয়েছে? কবচ দ্বারা ফরীশী ঐতিহ্যের অন্যথায় বাইবেলে একমাত্র পুরুষদের তাদের কপালকে উল্লেখ করা হলো খ্রীষ্টবিরোধী পশুর ছাপ, মথি ২৩:৫ পদ, প্রকাশিত বাক্য ১৩:৬; ২০:৪ পদ।
ঈশ্বরভীতি লোকেরা তাদের কপালে চিহ্ন দ্বারা রোমকে অনুসরণ করতে চাইবে না। ছাই লাগানোর জন্য কপাল কেন বেছে নেওয়া হয়েছে? কারণ এটি হিন্দু চক্রের তৃতীয় নয়ন। আপনি নিশ্চয়ই হিন্দু মহিলাদের দুচোখের মাঝখানে চিহ্ন দেখে থাকবেন। তিলককাটা বা তিলকছাপ হলো হিন্দুদের শুভযোগ, শুভক্ষণ এবং মাঙ্গলিক চিহ্ন যা পবিত্র ছাই বা মাটি যা গঙ্গানদী বা তীর্থস্থানের মাটি দিয়ে কপালে তিলক আাঁকা বা চিহ্ন দেওয়া হয়। ভষ্ম বুধবার বাইবেল থেকে আসেনি, আর এটি হিন্দুদের সাদৃশ্য থেকে এসেছে। মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকা, যা বিশ্বস্ত কাথলিকরা শুক্রবারে করে থাকে, ভষ্ম বুধবার। অনেক কিছুই হলো ভ্রান্তিজনক আত্মার শিক্ষা এবং খ্রীষ্টিয় শিক্ষার বহির্ভূত - ১তীমথিয় ৪:১-৩ পদ।
ঈশ্বরের আরাধনায় বাইবেল খুব স্পস্টভাবে মানুষের তৈরি রীতিনীতি সম্পর্কে নিন্দা জানিয়েছে। ঈশ্বর মান্য করা এবং ঈশ্বরকে ভয় করা প্রতিটি খ্রীষ্টিয়ান ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্যে বাধ্য থাকে। জাগতিকতা কিংবা জগতের যেকোনো পৌত্তকিতার সাথে যারা যুক্ত তাদের সাথে যুক্ত হওয়া বাইবেল অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নিন্দা জানিয়েছে। বাইবেল আমাদের জানায় যে শেষকালের গুরুরা ঈশ্বরের বাক্যে বিরোধীতা করবে আর তাদের লোকদের ঈশ্বরের বাক্যের থেকে তাদের কথায় বাধ্য থাকতে বলবে।
রোমীয় ১৬: ১৭-১৮ পদ - “ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা যে শিক্ষা পাইয়াছ, তাহার বিপরীতে যাহারা দলাদলি ও বিঘ্ন জন্মায়, তাহাদিগকে চিনিয়া রাখ ও তাহাদের হইতে দূরে থাক। কেননা এই প্রকার লোকেরা আমাদের প্রভু খ্রীষ্টের দাসত্ব করে না, কিন্তু আপন আপন উদরের দাসত্ব করে, এবং মধুর বাক্য ও স্তুতিবাদ দ্বারা সরল লোকদের মন ভুলায়”।
যিশাইয় ৮:২০ পদ - “ব্যবস্থার কাছে ও সাক্ষ্যের কাছে (অন্বেষণ কর); ইহার অনুরূপ কথা যদি তাহারা না বলে, তবে তাহাদের পক্ষে অরুণোদয় নাই”।
গালাতীয় ১:৬-৯ পদ “আমার আশ্চর্য বোধ হইতেছে যে, খ্রীষ্টের অনুগ্রহে যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, তোমরা এত শীঘ্র তাঁহা হইতে অন্যবিধ সুসমাচারের দিকে ফিরিয়া যাইতেছ। তাহা আর কোন সুসমাচার নয়; কেবল এমন কতকগুলি লোক আছে, যাহারা তোমাদিগকে অস্থির করে, এবং খ্রীষ্টের সুসমাচার বিকৃত করিতে চায়। কিন্তু আমরা তোমাদের নিকটে যে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা ছাড়া অন্য সুসমাচার যদি কেহ প্রচার করে- আমরাই করি, কিম্ব স্বর্গ হইতে আগত কোন দূতই করুক- তবে সে শাপগ্রস্থ হউক। আমরা পূর্বে যেরূপ বলিয়াছি, তদ্রুপ আমি এখন আবার বলিতেছি, তোমরা যাহা গ্রহণ করিয়াছ, তাহা ছাড়া আর কোন সুসমাচার যদি কেহ তোমাদের নিকটে প্রচার করে, তবে সে শাপগ্রস্থ হউক।”
তীমথিয় ৬:৩-৫ পদ, “যদি কেহ অন্যবিধ শিক্ষা দেয়, এবং নিরাময় বাক্য, অর্থাৎ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাক্য, ও ভক্তির অনুরূপ শিক্ষা স্বীকার না করে, তবে সে গর্বান্ধ, কিছুই জানে না, কিন্তু বিত-া ও বাগযুদ্ধেও বিষয়ে রোগগ্রস্থ হইয়াছে, এই সকলের ফল মাৎসর্য, বিরোধ, বিবিধ নিন্দা, কুসন্দেহ, এবং নষ্টবিবেক ও হীনসত্য লোকদের চিরবিসংবাদ; এই প্রকার লোকেরা ভক্তিকে লাভের উপায় জ্ঞান করে।”
কেন আজ অনেক খ্রীষ্টিয়ানদের প্রতিটি ফাল্গুন মাসে তাদের আচরণ পৌত্তলিকতার মতো হয়? ধর্মীয় উদ্দেশ্যের জন্য কপালে ছাইভষ্ম লাগালো সহজেই পৌত্তলিকা বোঝা যায়। ভষ্মবুধবার রোমান কাথলিকদের দিন যা যীশু খ্রীষ্ট এবং ঈশ্বরের বাক্য প্রত্যাখ্যান করা হয়। ভষ্ম-বুধবারে কাথলিকরা তাদের কপালে ছাই দিয়ে চিহ্ন দেয়। পবিত্র শাস্ত্র আমাদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে এবং যীশু খ্রীষ্টের ও শিষ্যদের অনুশীলন আমাদের জগতের নিজেস্ব ধর্মের বিপদজক চরম পতন থেকে সতর্ক করে। ভষ্মবুধবার হলো সেই রকমেরই স্বর্ধম বা স্বপক্ষত্যাগ করার একটি বিষয়।
শাস্ত্রের নতুন নিয়মে কোনো মণ্ডলীতে কখনো ভষ্ম-বুধবার পালনের কোনো বিষয় নাই, শিষ্যদের কোনো নির্দেষ নাই। বর্তমান খ্রীষ্টিয় মণ্ডলীর কোনো অধিকার নাই নতুন কোনো নিয়ম তৈরি করার।
যীশু খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত আমাদের জন্য। তিনিই আমাদের পক্ষে সমস্ত ধর্মের কর্ম সেই কালভেরিতে করে গেছেন চিরদিনের জন্য। আমাদের বলা হয় মন ফিরিয়ে সেই ক্রুশের দিকে দৃষ্টি দিতে। আমেন!!
Comments