প্রিয়পাঠক, যীশু আমাদের পরিস্কার বলেছেন, আমাদের ক্রুশ বহন করতে হবে। ক্রুশ অর্থ হচ্ছেন কষ্ট, যন্ত্রনা, দুঃখ ভোগের প্রতিচ্ছবি, যে ক্লেশ যীশু আপনার পাপের জন্য বহন করেছেন। যীশুর সেই মহান আদেশ, মুক্তির সুসমাচার প্রচার করতে বর্তমান আমাদেরও ক্লেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, তাই নয় কি? তাই আসুন আমরা পবিত্র বাইবেল থেকে প্রেরিত ১৪:২১-২২ পদ পাঠ করি -
‘‘আর সেই নগরে সুসমাচার প্রচার করিয়া এবং অনেক লোককে শিষ্য করিয়া তাঁহারা লুস্ত্রায়, ইকনিয়ে ও আন্তিয়খিয়ায় ফিরিয়া গেলেন; যাইতে যাইতে তাঁহারা শিষ্যদের মন সুস্থির করিলেন, এবং তাহাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা বিশ্বাসে স্থির থাকে আর কহিলেন, অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে’’ (প্রেরিত ১৪:২১-২২)
সম্প্রতি প্রায় আমি এই কথা শুনি আমাদের মন্ডলীর কিছু যুবকরা বলাবলি করে যে ১০ বছর যাবৎ বাংলাদেশের প্রটেস্টান্ট মন্ডলীতে সংঘটিত সেই মহাভাঙ্গনের বিষয়ে আমার এখন কথা বলা বন্ধ করা উচিৎ। কেননা তারা বলেছিলেন আমার উচিৎ ভবিষ্যতের বিষয়েই প্রচার করা এবং অতীতে আমাদের লোকেরা যে ভয়ঙ্কর বিষয়গুলির মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন সেই বিষয়ে কথা না বলা। এখন আমি সব সময়েই সমালোচনা শুনে থাকি, বিশেষ করে বন্ধুদের করা সমালোচনা। এবং সেই সব যুবকেরা আমার বন্ধু। কিন্তু তারা একেবারে ভুল করছেন! সম্পূর্ণভাবে ভুল! আসলে আমি মন্ডলীর সেই ভয়ঙ্কর মহা ভাঙ্গনের বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার করি না। এবং ঈশ্বর আমাকে দেখিয়েছেন যে আমাকে অবশ্যই এই বিষয়ে আবার প্রচার করতে হবে, এবং আবার, এবং বারবার - যতক্ষণ না এর অন্তর্বর্তী বার্তা আপনাদের হৃদয়ে প্রবেশ করছে এবং আপনাদের জীবনকে পরিবর্তিত করছে! এবং তারপরে আমাকে অবশ্যই প্রচার করে যেতে হবে এমনকি আরও বেশি করে! হ্যাঁ, বেশি করে এবং আরও বেশি এবং আরও আরও বেশি করে প্রচার - আবার, আবার, এবং বারবার!
‘‘যে কেহ নিজের ক্রুশ বহন না করে, ও আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না’’ (লূক ১৪:২৭)। এবং সেই কারণে "সহজতর" জীবন লাভ করার জন্য, বর্তমান অনেক লোক আমাদের মন্ডলী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল? ভাল, সেই সময়ে মন্ডলীগুলো তাদের মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যক বিশ্বাসীদেরকে ধরে রাখতে পেরেছিল। অন্যেরা মন্ডলী ছেরে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউই বিজয়ী খ্রীষ্ট বিশ্বাসীতে পরিণত হননি, অথবা ঈশ্বরের জন্য বেশি কিছু করেন নি। তাদের আধ্যাত্মিক জীবন শুকিয়ে গিয়েছিল, এবং তারা বসন্তের ঝরা পাতার মতন উড়ে গেছিলেন। খ্রীষ্ট বলেছিলেন, ‘‘যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়’’ (লূক ৯:৬২)।
আমি সেই লোকদের উপরে প্রচার করতে চলেছি যারা মন্ডলী ত্যাগ করেছিলেন এবং জগতে ফিরে গিয়েছিলেন! হ্যাঁ, আমিই! মন্ডলীর কয়েকজন বিদ্রোহী সন্তান এবং পশ্চাদ্পসারণ করা ব্যক্তিরা বলছেন, ‘‘তিনি কর্কটরোগে আক্রান্ত একজন দালাল মানুষ এবং তিনি অত কথা বলতে পারেন না।’’ এই সমস্ত কথা গণ্য করবেন না! আমি এখনও মারা যাইনি! যেমন দশ বছর আগে করতাম তেমনই আজ সকালেও আমি শাস্ত্রীয় বিরোধমূলক বিষয় এবং দুর্বল নব্য-সুসমাচার প্রচারমূলক বিষয়ের প্রতিটি বিন্দুকে ঘৃণা করছি! হ্যাঁ, ঘৃণাই হল সঠিক শব্দ। আমি এটা ঘৃণা করি! ঘৃণা - ঘৃণা! পবিত্র ঘৃণার সঙ্গে ঘৃণা করা, কারণ খ্রীষ্ট স্বয়ং তা ঘৃণা করেন! বাইবেল বলছে, ‘‘মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস’’ (আমোষ ৫:১৫)।
খ্রীষ্ট ঐ সমস্ত দুর্বল লায়দিকেয়াস্থ, শাস্ত্রবিরোধী, অলস নব্য-সুসমাচার প্রচারমূলকদের বলেছিলেন - ‘‘আমি নিজ মুখ হইতে তোমাকে বমন করিতে উদ্যত হইয়াছি’’ (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৬)। হ্যাঁ! আমি নিজ মুখ হইতে তোমাকে বমন করিব। আমি তোমাকে বমন করিব! আমি তোমাকে বমন করিব! আমি তোমাকে বমন করিব, মুখ হইতে থু করিয়া ফেলিব, নিজমুখ হইতে তোমাকে - উদ্গীরণ করিব!’’ ডঃ চার্লস সি. রাইরি ঐ পদের সম্বন্ধে বলেছেন, ‘‘কদুষ্ণ অথবা স্বাভাবিক অথবা আপোসপূর্ণ...মন্ডলী হল প্রভুর নিকট ঘৃণ্য, এবং তাঁহার উদ্দেশ্যের প্রতি ক্ষতিদায়ক’’।
লায়দ্দেকিয়ার অধিবাসীদের কদুষ্ণতা প্রতিবিধানের উপায় কি? নব্য-সুসমাচার প্রচারে অলসতা এবং বিদ্রোহ নিরাময়ের উপায় কি? সেই নিরাময় আমাদের পাঠ্যাংশের মধ্যেই আছে:
‘‘অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে’’ (প্রেরিত ১৪:২২)
প্রেরিত পৌল এবং তার সহকারী বার্নবাস লুস্ত্রা, ইকনিয় এবং আন্তিয়খিয়াতে ফিরে গিয়েছিলেন। তারা সেই শহরগুলিতে ফিরে এসেছিলেন সেখানকার নতুন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের শিক্ষা দিতে। তিনি বলেছেন, একটি স্থানে শুধুমাত্র একবার মাত্র প্রচার করাই যথেষ্ট নয়। নতুন বিশ্বাসীগণের প্রতি শিক্ষাদান এবং বিশ্বাসের মধ্যে তাহাদের প্রতিষ্ঠা করারও প্রয়োজন আছে। এবং পৌল এবং বার্নবাস যাহা করিয়াছিলেন এটিই তা। তাহারা নূতনদের (উদ্ধারপ্রাপ্তদের) এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইলে তাদের বিস্তর কষ্ট সহ্য করতে হবে। যদি তারা খ্রীষ্টের সহিত সহভাগি উত্তরাধিকারী হইতে চাহেন তাহা হইলে তাহাদেরকে তাঁহার জন্য কষ্ট সহ্য করিতে হইবে।
২৩ পদে পৌল এবং বার্নবাস যাদের শিক্ষাদান করেছিলেন তারা সকলেই ছিলেন সম্পূর্ণ নূতন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী। তিনি বলেছিলেন যে এমন কি এই মন্ডলীগুলিতে ‘‘প্রাচীন’’ যারা তারাও ছিলেন নূতন বিশ্বাসী। পৌল এবং বার্নবাস এই সমস্ত সম্পূর্ণ নূতন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন ‘‘যে আমাদিগকে অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে’’ (প্রেরিত ২৪:২২)। আমি আপনাদের বলছি, ‘‘কেবল মাত্র তারাই নয়, কিন্তু অবশ্যই আমাদিগকেও: ইহা অবশ্যই গণ্য করতে হবে যে যারা স্বর্গে যাবে সেই সকলকে অবশ্যই ক্লেশ এবং তাড়নার প্রত্যাশা করতে হবে...কেহ মনে করবেন যে এটি পারতপক্ষে তাদের প্রতি একটি মানসিক আঘাত তুল্য হবে, এবং উহা তাদের পরিশ্রান্ত করাবে। না...ইহা তাহাদিগকে সুনিশ্চিত হইতে সাহায্য করিবে, এবং খ্রীষ্টের জন্য তাহাদের আবদ্ধ করিয়া রাখিবে... ‘খ্রীষ্ট যীশুতে যারা পবিত্রভাবে বাস করিবে তাহারা তাড়না ভোগ [করিবে]’...যাহারা খ্রীষ্টের শিষ্য হইবে তাহারা অবশ্যই নিজেদের ক্রুশ তুলিয়া লইবেন।
যীশু, আমি আমার ক্রুশ তুলেছি, সব ছেড়ে তোমায় অনুসরণ করতে; নিঃসঙ্গ, ঘৃণা, পরিত্যক্ত, তবু, এখন থেকে, তুমিই আমার সব হবে;
আমি যা চেয়েছি, আশা করেছি, এবং আমার জ্ঞাত আকাঙ্খা, সব বিনষ্ট কর;
তবুও কত মহান আমার অবস্থা, ঈশ্বর আর স্বর্গ এখনও আমার নিজের!
‘‘অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে’’ (প্রেরিত ১৪:২২)
আমি জানি সামনে আমাকে মৃত্যুজকক পরিস্তিতির মুখোমুখি হতে হবে, সুসমাচার প্রচার, শিষ্যগঠনের এই ভার অনেক ক্লেশের মধ্যে দিয়ে আমাকে বহন করতে হবে।
Comments