
প্রিয়পাঠক, আসমানী কিতাব পুরাতন নিয়মে [ তৌরাত, যাবুর, নবীদের ] কিতাবে মসীহের আগমনের ৩০০ বারের বেশি ভবিষ্যৎ বানী করা হয়েছে। যদি কেউ এই ভবিষ্যৎদ্বাণী পূর্ণতাদানকারী হয় তা হলে তাকে প্রথমে ঈস্রায়েল বংশে আগমন করতে হবে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মোহাম্মাদ ঈস্রায়েল বংশে আগমন করেন নি কেননা তিনি কুরাইশ বংশে আগমন করেছেন।
যেহেতু মুহাম্মদ সম্পর্কে উপরোক্ত সব “ভবিষ্যদ্বানী” এত অসম্ভাব্য, কিছু কিছু লোক দাবি করে যে ঈসায়ী ও ইহুদীগণ হিংসাপরায়ণ ভাবে মুহাম্মদ সম্পর্কে ভবিষ্যবাণীগুলো সরিয়ে ফেলেছে। নিচে এই দাবি করা যে সম্পূর্ণ অসম্ভব তার তিনটি কারণ তুলে ধরা হলো:
১. ঈসায়ী ধর্মের উৎপত্তি থেকেই তারা ইহুদী ধর্মীয়-নেতাদের বিপক্ষে, কারণ তারা ঈসায়ী ধর্মের মূল নবীকে অস্বীকার করেন। ঈসা নবী* সম্পর্কে ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্যেও ইহুদীগণ ঈসা নবীকে তাদের ওয়াদাকৃত মসীহ্ হিসেবে মেনে নেন না যা কিনা তাদের মধ্যে অনেক ইহুদী-ঈসায়ী সংঘাতের সূত্রপাত ঘটিয়েছে।
ইহুদীগণ যদি মুহাম্মদকে কে নিয়ে করা ভবিষ্যদ্বানীগুলো মুছে দিতে পারেন, তাহলে তারা কেন মসীহের সম্পর্কে একটা ভবিষ্যদ্বানীও মুছে ফেললেন না? কিন্তু ইহুদীদের তৌরাত, জবুর ও নবীদের কিতাব যদি ঈসায়ীদের তৌরাত, জবুর ও নবীদের কিতাব (“পুরাতন নিয়ম”)-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাদের মধ্যে অক্ষরে অক্ষরে মিল পাওয়া যায়।
২. মুহাম্মদের বিষয়ে পূর্ববর্তী কিতাবের কোন আয়াত যদি সরিয়েই ফেলা হত তাহলে নিশ্চয় মুহাম্মদের জীবনকালেই তা কিতাব থেকে মুছে ফেলার কথা। কিন্তু মুহাম্মদের জীবনকালের শত শত বছর আগের হাজার হাজার কপি গ্রীক ও হিব্রু ভাষায় লিখিত কিতাব সংরক্ষিত রয়েছে যা বর্তমানে আমাদের হাতে থাকা তৌরাত,জবুর ইঞ্জিলের সাথে সম্পূর্ণ মিল রাখে, এবং সেগুলোর কোন এক কপিতেও মুহাম্মদকে নিয়ে কোন ভবিষ্যদ্বানীর উল্লেখ নাই।
৩. কোরআন আমাদের শিক্ষা দেয় যে “আল্লাহর কালামের কোনো পরিবর্তন নেই” (সূরা আন’আম ৬:৩৪) এবং: “হে কিতাবীগণ! তৌরাত, ইন্জীল ও যাহা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নাই।” (সূরা মায়িদা ৫:৬৮)
তাহলে কেমন করে আল্লাহ্র কালাম পরিবর্তন করা সম্ভব? যারা আল্লাহর ক্ষমতাকে সন্দেহ করে তাদের পক্ষেই কী কিতাব পরিবর্তন করার কথা বলা সম্ভব নয়?
পৃথিবীর সপ্তম বড় ধর্ম ‘বাহাই-ধর্ম’ দাবী করে যে তাদের নবী বাহাউল্লাহ ইবরাহিম, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মদের পরে সেই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী একজন নবী। যদি বাহাই সম্প্রদায় এখন দাবি করে যে কোরানে আগে বাহাউল্লাহ-র সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী ছিল যা পরে মুসলমানরা মুছে দিয়েছে তাহলে আমরা কী জবাব দিব?
আমরা অবশ্যই বলবো যে এই দাবি অযৌতিক, অপ্রমানযোগ্য, কারণ কোন খাঁটি মুমিনের পক্ষে জেনেশুনে তার নিজের কিতাব পরিবর্তন করা কল্পনার বাইরে এবং পুরোপুরি অসম্ভব। কেঊ বলবে যে, কোন মুসলমান তা করবে না কিন্তু ঈসায়ীরা তা করতে পারে কারণ তারা খুব বদমাইশ ও দুষ্ট। কিন্তু কোর’আন শরীফে তো ঈসায়ীগণকে বলা হয় “অহংকারহীন” (৫:৮৩), “মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী”, “নম্র ও দয়ালু” (৫৭:২৭)। এমন প্রকৃতির লোক কি কখনও নিজের পবিত্র ঐশীগ্রন্থের পরিবর্তন করার মতো বড় অপরাধ সহ্য করবে? অবশ্যই না। আল্লাহর পরিকল্পনা সিদ্ধ হয় কারণ তিনি সর্বশশক্তি, কে তাঁর পরিকল্পনায় বাধা দিতে পারে?
*আমরা খৃষ্টানরা ঈসাকে শুধু নবী হিসাবে মানি না। আমরা তাঁকে ত্রাণকর্তা এবং ঈশ্বরের পুত্র বলে জানি। কিন্তু মুসলমানদের সঙ্গে আলোচনার খাতিরে তাঁকে নবী বলে মানছি।
Opmerkingen