top of page
  • Black Facebook Icon
  • Black YouTube Icon
  • Black Instagram Icon
Search

দানিয়েল — পবিত্রীকৃত জীবনের এক অনণ্য দৃষ্টান্ত!


প্রিয়পাঠক, পবিত্রীকৃত জীবন কিভাবে গঠিত হয়, দানিয়েলের জীবন তাঁর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত সকলের জন্য, বিশেষতঃ মন্ডলীর যুবক- যুবতীদের জন্য অমুল্য শিক্ষা। ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো নিখুঁতরূপে পালনের দ্বারা দেহ ও মনের স্বাস্থ্যের পরম উপকার সাধিত হয়। নৈতিক ও মানসিক গুনাবলীর চরম শিখরে উঠতে হলে ঈশ্বরের নিকট হতে জ্ঞান ও শক্তির অন্বেষণ করা এবং জীবনের সর্ব্বপ্রকার অভ্যাসে কঠোর মিতাচারী হওয়া আবশ্যক।


দানিয়েলের স্বাভাব যত বেশী নির্দ্দোষ ছিল, তাঁর প্রতি তাঁর শ্ত্রুগণের ঈর্ষ্যা তত বেশী তীব্র ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করবার জন্য তাঁর বিপক্ষে কোন দোষ না পেয়ে, তারা উন্মত্ত হয়ে উঠেছিলেন।


“তখন সেই ব্যক্তিরা বললেন, আমরা ঐ দানিয়েলের অন্য কোন দোষ পাইব না; কেবল তাঁর ঈশ্বরের বাব্যস্থা লইয়া যদি তাঁর কোন দোষ পাই।” (দানিয়েল ৬ঃ৫)।


সমুদয় খ্রীষ্টীয়ানদের নিমিত্ত এই স্থানে সুন্দর একটি শিক্ষা রয়েছে। দিনের পর দিন দানিয়ালের উপরে তাঁদের ঈর্ষ্যার প্রখর দৃষ্টি ছিল, ঈর্ষ্যা পরবশ হয়ে তাঁরা তাঁর প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিত, তাঁর জীবনের কোন একটে বাক্যে কিংবা কার্য্যে তাঁর বিরুদ্ধে কোন দোষ পাইল না। তথাপি তিনি নিজেকে পবিত্র বলে কোন দাবি করলেন না, কিন্তু যা সর্ব্বাপেক্ষা উত্তম তা তিনি সাধন করলেন,-তিনি বিশ্বস্ততার ও আত্মৎসর্গের জীবন যাপন করলেন।


রাজার নিকট হতে আদেশ জারি হল। শত্রুগণ তাঁকে বিনষ্ট করতে চান, এটি তিনি ভালরূপে জানিতেন। তথাপি তিনি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়ার পরিবর্তন করলেন না। ধীর ও স্থির —ভাবে তিনি তাঁর চির আচরিত কর্ত্তব্য — কর্ম্ম সম্পাদন করতে থাকলেন এবং প্রার্থনা — আপন প্রকোষ্ঠে গমণ পুর্ব্বক যিরূশালেমের দিকস্থ বাতায়ন উন্মুক্ত রাখিয়া স্বর্গের ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা উৎসর্গ করলেন । তাঁর কার্য্য দ্বারা তিনি নির্ভীক চিত্তে ঘষোণা করলেন যে, কোন পার্থিব শক্তির, তাঁর এবং তাঁহার ঈশ্বরের মধ্যে আসবার এবং কাহার নিকটে প্রার্থনা করতে হবে, কিংবা কাহার নিকট প্রার্থনা করতে হবে না, বলবার অধিকার নাই। কি উদার মতাবলম্বী ! খ্রীষ্টীয় সাহস ও বিশ্বস্ততার প্রশংসাযোগ্য দৃষ্টান্ত রূপে তিনি আজ জগতের সামনে দণ্ডায়মান। যদিও তিনি জানিতেন যে, তাঁর ঈশ্বর-ভক্তির পরিণাম হবে মৃত্যু, তথাপি তিনি সমস্ত অন্তঃকরণে ঈশ্বরের দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছিলেন।


“তখন রাজা আজ্ঞা দিলেন, তাই তাঁহারা দানিয়েলকে আনিয়া সিংহদের খাতে নিক্ষেপ করিলেন। রাজা দানিয়েলকে কহিলেন, তুমি অবিরত যাহার সেবা করিয়া থাক, তোমার সেই ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করিবেন” (৬:১৬ পদ)।


পরে রাজা অতি প্রত্যূষে উঠিয়া সত্বর সিংহদের খাতের কাছে যাইয়া আর্ত্তস্বরে কহিলেন,


“হে জীবন্ত ঈশ্বরের সেবক দানিয়েল, তুমি অবিরত যাহার সেবা কর, তোমার সেই ঈশ্বর কি সিংহের মুখ হইতে তোমাকে রক্ষা করিতে পারিয়াছেন?” (৬:২০পদ) ভাব্বাদী প্রত্যুত্তরে কহিলেন, “হে রাজন, চিরজীবী হউন। আমার ঈশ্বর আপন দত পাঠাইয়া সিংহগণের মুখ বন্ধ করিয়াছেন, তাঁহারা আমার হিংসা করে নাই; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে আমার নির্দ্দষতা লক্ষিত হইল, এবং হে রাজন, আপনকার সাক্ষাতেও আমি কোন অপরাধ করি নাই।”


“তখন রাজা অতিশয় আহ্লাদিত হইলেন, এবং দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিয়া লওয়া হইল, আর তাঁহাদের শরীরে কোন প্রকার আঘাত দৃষ্ট হইল না, কারণ তিনি আপন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিয়াছিলেন “( ৬:২২-২৩)।


এইরূপে ঈশ্বরের দাস উদ্ধার পাইলেন। কিন্তু তাঁহার যে শত্রু গণ তাঁহাকে বিনষ্ট করিবার জন্য তাঁহার বিরুদ্ধে ফাঁদ পাতিয়াছিল, তাহারাই তাহাতে বিনষ্ট হইল। রাজার আদেশক্রমে তাহাদিগকে সিংহদের খাতে নিক্ষেপ করা হইল, আর বন্যজন্তুগণ তাহাদিগকে তৎক্ষণাৎ খাইয়া ফেলিল।


সত্তর বৎসরব্যাপী দাসত্ব যখন প্রায় শেষ হতে চলল, তখন যিরমিয়ের ভবিষ্যৎদ্বাণী পাঠে তাঁর মন উদ্বেলিত হয়ে উঠল।


সদাপ্রভুর সম্মুখে দানিয়েল স্বীয় বিশ্বস্ততা ঘোষণা করেন নাই। কিন্তু নিজেকে বিশুদ্ধ ও পবিত্র বলিয়া দাবী করিবার পরিবর্ত্তে, এই মহামান্য ভাব্বাদী বিনীত ভাবে বরং ইস্রায়েলের প্রকৃত পাপিগণের সাথে নিজের পরিচয় দান করেছিলেন। ক্ষীণ তারকা জ্যোতি অপেক্ষা বহুগুনে শ্রেষ্ঠ ছিল। স্বর্গের অতি প্রিয় এই ব্যক্তির ওষ্ঠাধর হতে যে প্রার্থনা উচ্ছারিত হয়েছিল, একবার তা চিন্তা করে দেখুন! গভীর নম্রতা সহকারে ও অশ্রুপূর্ণ চোখে হৃদয় বিদীর্ণ করে তিনি তাঁর নিজের জন্য ও নিজের লোকদের জন্য ঈশ্বরের নিকটে বিনতি করেছিলেন। নিজের অযোগ্যতা স্বীকার করে এবং সদাপ্রভুর মহত্ব ও মহিমা কীর্ত্তন করে তিনি তাঁর প্রাণ ঈশ্বরের সম্মুখে খুলে দিয়েছিলেন।


দানিয়েলের প্রার্থনার কথা শেষ হতে না হতেই, গাব্রিয়েল দূত স্বর্গীয় বিচারালয় হতে এসে কহিলেন যে, তাঁর প্রার্থনা গ্রায্য হয়েছে এবং উত্তরও দেওয়া হয়েছিল। এইরুপে সত্য জানবার ও বুঝিবার নিমিত্ত ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করলে স্বর্গ- নিযুক্ত বার্ত্তাবাহকের সাথে দানিয়েলের কথোপকথন হয়।


যে জ্যোতিতে ও সত্যে তাঁর ও তাঁহার লোকদের সর্ব্বাপেক্ষা অধিক প্রয়োজন ছিল, প্রার্থনার উত্তর স্বরূপ তিনি যে কেবল তাই প্রাপ্ত হয়েছিলেন, এমন নহে, অধিকন্তু ভাবী মহা-ঘটনাবলীর, এমন কি জগতের ত্রাণকর্ত্তার আগমনের (দৃশ্যাবলীর) দর্শনও তিনি প্রাপ্ত হয়েছিলেন।


যাঁরা পবিত্রীকৃত বলে দাবী করে, তাঁহাদের শাস্ত্রানুসন্ধানের আকাঙ্ক্ষা না থাকলে, অথবা তাঁরা বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভের জন্য প্রার্থনায় ঈশ্বরের সহিত মল্লযুদ্ধ না করলে, প্রকৃত পবিত্রীকরণ কি তা তারা জানতে পারে না।


দানিয়েল ঈশ্বরের সহিত কথোপকথন করেছিলেন। স্বর্গ তাঁর সম্মুখে উম্মুক্ত ছিল। নম্রতা ও ব্যাকুল প্রার্থনার ফলে তিনি উচ্চ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। যাঁরা সর্ব্বান্তঃ করণে ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করে, তাঁরা সকলেই তাঁর ইচ্ছা সম্পর্কে জ্ঞানলাভার্থে ক্ষুদিত ও তৃষিত হবে। ঈশ্বর সত্যের আদি সিদ্ধিকর্ত্তা । তিনি অমার্জ্জিত বুদ্ধিকে মার্জ্জিত করেন এবং তিনি যে সকল সত্য প্রকাশ করেছেন, তা বুঝবার ও হৃদয়ে ধারণ করে রাখবার নিমিত্ত মানবান্তঃকরনে শক্তি দান করে থাকেন।


গুপ্ত ধনের ন্যায় যাঁরা সত্য অনুসন্ধান করে, জগতের ত্রানকর্ত্তা তাঁদের নিকটে মহা সত্যগুলি প্রকাশ করেন। দানিয়েল বৃদ্ধ ছিলেন।পৌত্তলিক রাজ দরবারে মোহিনী শক্তির মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছিলেন, মহান সাম্রাজ্যের বিষয় ব্যাপারে তাঁর মন ভারাক্রান্ত ছিল। তথাপি তিনি ঈশ্বরের সম্মুখে নিজের আত্মাকে ক্লিষ্ট করবার নিমিত্ত এই সকল একদিকে ফেলে রাখে পরাৎপরের অভিপ্রায় কি তা জ্ঞাত হবার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। যাঁহারা শেষকালে বসবাস করবে, প্রার্থনার উত্তর- স্বরূপ তাঁদের নিকটে স্বর্গীয় রাজদরবার হতে জ্যোতি প্রদত্ত হয়েছিল।


স্বর্গ হতে প্রেরিত সত্যগুলি আমরা যেন সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করতে পারি, তজ্জন্য আমাদের বুদ্ধির দ্বার খুলে দিবার জন্য কত আগ্রহ ভরে ঈশ্বরের নিকট আমাদের প্রার্থনা করা কর্ত্তব্য!


দানিয়েল পরাৎপরের বিশ্বস্ত দাস ছিলেন। তাঁর সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী তিনি তাঁহার প্রভুর জন্য মহৎ মহৎ কার্য্য করেছিলেন। তিনি চরিত্রে যেরূপ বিশুদ্ধ, প্রভুভক্তিতে যেরূপ অবিচলিত, হৃদয়ের নম্রতায় ও ঈশ্বরের সম্মুখে অনুতাপে, তদ্রূপ শীর্ষস্থানীয় ছিলেন। আমরা পুনরায় বলি, দানিয়েলের জীবন প্রকৃত পবিত্রীকরণের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।


আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে। কিন্তু তোমাদের মস্তকের একগাছি কেশও নষ্ট হইবে না। তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে। (লুক ২১:১৭-১৯)

 
 
 

Recent Posts

See All
আল্লাহ আর ইয়াহওয়ে কি এক?

আমরা প্রায়ই শুনি, “সব ধর্মের ঈশ্বর এক” বা “আল্লাহ আর খ্রিস্টানদের ঈশ্বর একই।” কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, ইসলামের আল্লাহ এবং...

 
 
 

Comentarios


আমাদেরকে অনুসরণ করুন

আমাদের সামাজিক মিডিয়ায় খুঁজুন
  • Facebook - White Circle
  • YouTube - White Circle
  • Instagram - White Circle
@ekmatroshotto

©2020 by The Only Truth

একমাত্রসত্য creates awareness about Christ followers (“Christians”) in Bangladesh and Bengali speaking people of the world. We also encourage and motivate Churches and Christ followers on evangelism to the other religion followers in their own communities. 

bottom of page