বর্তমান করোনা ভাইরাস নিয়ে মুসলিম ভাইয়েরা খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে নানা টিটকারীমূলক কথা বলছেন। আমরা খ্রীষ্টানরা অন্ধকারের আধারে, হতাশায় জীবন কাটাচ্ছি? কেন এই অভিযোগ? আমাদের উদ্ধারকর্তা যীশু কি নেই? তাঁকে কি আমরা আমাদের জীবন থেকে দূরে সরে দিয়েছি? শোন, হে খ্রীষ্টান ভাই ও বোনেরা এখন সময় অনুতাপ করে জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি ফিরে আসা কেননা আমাদের ঈশ্বর জীবন্ত।
হে মুসলিম ভাই তোমাদের বলছি - আসল খ্রীষ্টান ধর্ম হল একটি জীবনযাপনের ধর্ম, শুধুমাত্র মনের মধ্যে থাকার ধর্ম নয়। আসল খ্রীষ্টন ধর্ম বিজয় অর্জন করতে জানে, ভয়ে জড়সড় থাকতে চায় না। আসল খ্রীষ্টান ধর্ম আত্নত্যাগের ধর্ম, এটি লোক দেখানো ধর্ম নয়, এ ধর্ম কাজের, নিশ্ছল হয়ে থাকার নয়, সব সময় সচল হবার ধর্ম। এ ধর্ম স্থীর থাকার ধর্ম নয়, এ ধর্ম ভিতরে প্রবেশ করার ধর্ম।
কেননা প্রকৃত খ্রীষ্টান ধর্মে কোন নিরপেক্ষতার স্থান নেই, স্থান রয়েছে সামনে এগিয়ে যাবার। এ ধর্ম সাহসীকতার ধর্ম, শুধুমাত্র সাবধানতা আর বাধ্যবাধকতার ধর্ম নয়। প্রকৃত খ্রীষ্টান ধর্ম পর্বত সড়িয়ে দিতে পারে, সাগর পাড়ি দিতে পারে, উন্থান পতন ঘটাতে পারে, দেয়াল গড়ে তুলতে পারে, পানির উপর দিয়ে হাটতে পারে, মৃতকে জীবন দিতে পারে, ঝড় থামাতে পারে, ক্ষুধার্তকে খাওয়াতে পারে, তৃষ্ণার্তকে পানি দিতে পারে, বস্তু হীনকে বস্ত্র পড়িয়ে দিতে পারে।
এ ধর্ম অবিরত নির্যাতন ভোগ করতে পারে, প্রতিদিন ঘাম ঝড়াতে পারে, ক্ষত বিক্ষত হতে পারে, অপূর্ণকে পূর্ণ করতে পারে, সব কৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। আসল খ্রীষ্টান ধর্ম পাপিকে বলে অন্ধকার, দোযকে বলে অগ্নিকুন্ড, শঠতাকে বলে খারাপী, শয়তানকে বলে মিথ্যুক, আর বলে কেউ বিচার এড়াতে পারবে না। খ্রীষ্টান ধর্ম পিছিয়ে থাকে না। খ্রীষ্টান ধর্মকে অন্যদের ঠেলা দিয়ে চালাতে হয় না। এধর্ম বিরোধিতার মুখে বশ্যতা স্বীকার করে না, চাপের মুখে গুটিয়ে যায় না, সমালোচনার মুখে পিছপা হয় না, সময়ের টানাপোড়নে ম্রিয়মান হয় না, কারাভোগে মৃত্যু বরণ করে না, ব্যবহারে ম্লান হয়ে যায় না। এটি মরচে পড়ে না, পিছনে ফিরে আসে না, পুনরারম্ভ করে না, প্রত্যাঘাত করে না, বা ফিরিয়ে নেয় না।
আসল খ্রীষ্টন ধর্ম সব সময় খ্রীষ্টকে উপরে তুলে ধরে; বাধা ভেংগে ফেলে, বাধার মুখে এগিয়ে যায়, দুঃখে মারিয়ে যায়, নিন্দাবাদকে হজম করে ফেলে, সমালোচনাকে উড়িয়ে দেয়, মানবতাকে পরাস্থ করে, পরাজয়কে জয় করে এবং সন্দেহবাদকে গুঁড়ে দেয়।
আসল খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচুর দান করে, অবিরত প্রার্থনা করে, উপচয় দাবি করে, প্রচন্ড পরিশ্রম করে, ক্ষমতার সাথে প্রচার করে, ভালোবেসে সেবা করে, ধৈর্যের সাথে রক্ষা করে এবং প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বাস করে। আসল খ্রীষ্টান ধর্ম সাহসের সাথে সব জাগতিক মানদন্ডকে পরাভূত করে ঈশ্বরের মানদন্ড স্থাপন করে। খ্রীষ্টান ধর্ম উচ্চ আসনের জন্য লালসা করে না, নিজ অবস্থানকে ভূলুণ্ঠিত করে না, নিজ নীতির সাথে আপোষ করে না, বরঞ্চ পারিপার্শ্বিকতাকে নিমন্ত্রণ করে, অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এ ধর্ম কখনও পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে বড় হতে, জনপ্রিয় হতে, আকর্ষণীয় হতে, সুযোগ সন্ধানী হতে চায় না। এধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা অল্প, তাদের কথা বলা স্বচ্ছ, এর দর্শন ও শিক্ষা জনপ্রিয় নয়, এর প্রভাব বিশাল। এ ধর্মের অনুসারীদের পৃথিবী কোন পুরুস্কার দেয় না, কিন্তু আমাদের পুরুস্কার স্বর্গে অপেক্ষা করছে।
"ঈশ্বরের মনোনীতদের বিপক্ষে কে অভিযোগ করিবে? ঈশ্বর ত তাহাদিগকে ধার্ম্মিক করেন; কে দোষী করিবে? খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন, বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন। খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে? কি ক্লেশ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দুর্ভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ-সংশয়? কি খড়্গ? যেমন লেখা আছে, “তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম।” কিন্তু যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজয়ী অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই। কেননা আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি ঊর্দ্ধ স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্ করিতে পারিবে না।" (রোমীয় ৮: ৩৩ - ৩৯)
Comments