top of page
Search

কোরান বলছে বাইবেল অবিকৃত


বর্তমানকার ইসলামী পন্ডিতরা যতই দাবী করুক, গসপেল বিকৃত , আসল গসপেলের কোন খোজ নেই , বা তার কোন অস্তিত্ব নেই ইত্যাদি, অথচ স্বয়ং আল্লাহ ও তার রসুল মুহাম্মদ কিন্তু সেই বিকৃত গসপেলকেই প্রামান্য হিসাবে গ্রহন করছেন ও তাকে ঈশ্বরের বানী বলে স্বীকার করে তা অনুসরন করতে বলছেন খৃ্ষ্টানদেরকে, এমন কি তিনি তার নিজের অনুসারীদেরকেও বলছেন যে যদি তারা সন্দেহে পতিত হয়, তারা যেন সেই গসপেল পাঠ করে আসল ঘটনা জেনে নেয়। বাস্তবে আমরা দেখি গোটা দুনিয়ার মুসলমানরা আসলেই বিভ্রান্তিতে আছে। এবারে আসল কথায় আসা যাক।


কোরান বলেছে:


সুরা ইউনুস- ১০:৯৪: "সুতরাং তুমি যদি সে বস্তু সম্পর্কে কোন সন্দেহের সম্মুখীন হয়ে থাক যা তোমার প্রতি আমি নাযিল করেছি, তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করো যারা তোমার পূর্ব থেকে কিতাব পাঠ করছেএতে কোন সন্দেহ নেই যে, তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট থেকে তোমার নিকট সত্য বিষয় এসেছে। কাজেই তুমি কস্মিনকালেও সন্দেহকারী হয়ো না।"


আল আরাফ- ৭: ১৬৯: "তারপর তাদের পেছনে এসেছে কিছু অপদার্থ, যারা উত্তরাধিকারী হয়েছে কিতাবের; তারা নিকৃষ্ট পার্থিব উপকরণ আহরণ করছে এবং বলছে, আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। বস্তুতঃ এমনি ধরনের উপকরণ যদি আবারো তাদের সামনে উপস্থিত হয়, তবে তাও তুলে নেবে। তাদের কাছথেকে কিতাবে কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কিছু বলবে না? অথচ তারা সে সবই পাঠ করেছে, যা তাতে লেখা রয়েছে। বস্তুতঃ আখেরাতের আলয় ভীতদের জন্য উত্তম-তোমরা কি তা বোঝ না ?"


তার মানে মুহাম্মদকে আল্লাহ বলছে – মক্কার যেসব খৃষ্টান ও ইহুদি মুহাম্মদকে বিশ্বাস করছে না , তারা যেন তাদের কিতাব তৌরাত ও ইঞ্জিল পাঠ করে দেখে আর তাহলেই তারা বুঝবে মুহাম্মদ সত্য কথা বলছেন কি না। এর অর্থ , মুহাম্মদের পূর্বেকার কিতাব তৌরাত ও ইঞ্জিল উভয়কেই আল্লাহ ও মুহাম্মদ অবিকৃত ও বিশুদ্ধ হিসাবে মেনে নিচ্ছে। তা না হলে, আল্লাহ কখনই বিকৃত কিতাবসমূহকে প্রামান্য দলিল হিসাবে গ্রহন করবে না।কারন বিকৃত বা ভুল কিতাবের কোন রেফারেন্স সত্য হতে পারে না।


এমন কি যখন মাঝে মাঝে ইহুদিরা কোন বিচার নিয়ে মুহাম্মদের কাছে আসত , তখন কোরান বলছে-


সুরা মায়েদা- ৫: ৪৩: "তারা আপনাকে কেমন করে বিচারক নিয়োগ করবে অথচ তাদের কাছে তওরাত রয়েছে। তাতে আল্লাহর নির্দেশ আছে। অতঃপর এরা পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনও বিশ্বাসী নয়।"


ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে যে তাওরাত আছে , তাতেই তো ঈশ্বরের বিধান বিদ্যমান আছে , তাহলে তারা কেন মুহাম্মদের কাছে বিচারের জন্যে আসে? তাওরাত যদি বিকৃত হতো , আল্লাহ কি এসব কথা বলত? বিকৃত কিতাবের বিধান তো বিকৃতই হয়, তাহলে সেটাকে কিভাবে প্রামান্য দলিল হিসাবে আল্লাহ ধরে নিতে বলে? এছাড়াও কোরান বলছে-


সুরা মায়দা-৫: ৪৬-৪৭ "ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী। : আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বানী।"


অর্থাৎ যীশু খৃষ্টের কাছে যে ইঞ্জিল কিতাব নাজিল করেছিল সেটা খৃষ্টানদের অনুসরন করা উচিত। মুহাম্মদের সময় যে ইঞ্জিল কিতাব খৃষ্টানদের কাছে ছিল তা যদি বিকৃত হতো , বা তা ভ্রান্তিতে পূর্ন থাকত , কোরান এমন কথা নিশ্চয়ই বলত না। মোদ্দা কথা , মুহাম্মদ বার বার ইহুদি ও খৃষ্টানদেরকে তৌরাত ও ইঞ্জিল কিতাব পাঠ করতে বলছে , যাতে তারা বুঝতে পারে মুহাম্মদ আসলে তাদেরকে কি বলছে।


এখন আমরা যদি ইঞ্জিল কিতাব পাঠ করি , তার সারমর্ম হলো – যীশু খৃষ্টকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হচ্ছে , যিনি মানুষ রূপে দুনিয়াতে এসেছিলেন , দুনিয়ার মানুষকে তাদের আদি পাপ ও কৃত যে পাপ আদম ও হাওয়া করেছিল এদন বাগানে যা উত্তরাধিকার সূত্রে সকল মানুষই জন্ম থেকে সেই পাপ বয়ে বেড়ায় যা থেকে মুক্ত করার জন্যে যীশু নিজে ক্রুশে জীবন দিয়েছেন , এর পর তিন দিন পর আবার জীবিত হয়েছেন ও হাজার হাজার মানুষের সামনে দেখা দিয়েছেন। খৃষ্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , দুনিয়ার মানুষের পাপ মোচনের জন্যে যীশুর এই আত্মত্যাগ ও পুনরুত্থান- এর মাহাত্ম থেকে। এটাই খৃষ্টান ধর্মের মূল অনুপ্রেরনা, যা পাপিদের জন্য পরিত্রাণের সুসমাচার। অথচ এর পরেই কোরান বলছে-


সূরা নিসা- ৪: ১৫৭: "আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।"


অর্থাৎ যীশু ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে মারা যান নি। এই বিষয়টাকে প্রমান করতে গিয়ে ইসলামী পন্ডিতরা হরহামেশা একটি যুক্তি দেয় যে , বর্তমানে যে ইঞ্জিল কিতাব আছে , তা বিকৃত , খৃষ্টানরা সেটাকে বিকৃত করে , যীশুর এই ক্রুশে মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কাহিনী লিখেছে , এছাড়াও তারা মনগড়া ত্রিত্ববাদী পিতা ঈশ্বর, ঈশ্বরের পূত্র যীশু ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মা ঈশ্বর এই কাহিনী জুড়ে দিয়েছে। বিষয়টাকে খোলাসা করতে প্রথমে ইঞ্জিল কিতাব কি জিনিস সেটা জানতে হবে। যীশুর বার্তাকে বলা হয় সুসমাচার বা গসপেল। এই গসপেল হলো চারটা- মথি , মার্ক , লুক ও জন। কিন্তু সে যাই হোক, গবেষণা করে দেখা যায়, গসপেলের কাহিনী গুলো যীশু মারা যাওয়ার প্রায় পর পরই লিখিত হতে থাকে। তার মারা যাওয়ার ৫০/৬০ বছরের মধ্যেই লেখা অনেক পান্ডুলিপি আবিস্কৃত হয়েছে।পরবর্তীতে এসব পান্ডুলিপি ও আরও আবিস্কৃত পান্ডুলিপির ভিত্তিতে বর্তমানে যে গসপেল দেখা যায় তা গ্রন্থিত হয়েছে।


কিন্তু সেটাও বিষয় না । রোম সম্রাট কনস্টানটাইন খৃষ্ট ধর্ম গ্রহন করার পরে , তার নির্দেশনায় ভ্যাটিকানের পোপতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ও গসপেলকে সম্পূর্ন কিতাবাকারে গ্রন্থিত করা হয়, আর সেটা ঘটে ৩৮২ খৃষ্টাব্দে রোমের পোপের অধীনে। মুহাম্মদের জন্ম ৫৭০ খৃষ্টাব্দে, ৬১০ খৃষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়েসে তিনি আল্লাহর বানী পাওয়া শুরু করেন। তার অর্থ গসপেলকে আমরা বর্তমানে যে কিতাবাকারে দেখি তা গ্রন্থিত হয় মুহাম্মদের জন্মেরও প্রায় ২০০ বছর আগে। অর্থাৎ আজকে যে গসপেল দেখি, তা গ্রন্থিত হওয়ারও প্রায় ২৫০ বছর পর মুহাম্মদ তার ইসলাম প্রচার শুরু করেন, আর তখন তিনি খৃষ্টানদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তারা যেন তাদের কাছে থাকা গসপেলকে অনুসরন করে, কারন সেটা স্বয়ং আল্লাহ বা ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে। কিন্তু সেই গসপেলেও তো যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে, ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে আত্মত্যাগ ও পুনরুত্থানের কথা বলা হয়েছে, ত্রিত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ মুহাম্মদ ও তার আল্লাহ মুহাম্মদের আমলকার সেই গসপেলকে গ্রহন করে, গসপেলে বর্নিত যীশুকে গ্রহন করছেন, গ্রহন করছেন যীশুকে ঈশ্বরের পূত্র, তার ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু, পুনরুত্থান ও ত্রিত্ববাদের কাহিনী।



কিন্তু এর পরে যদি সেই একই মুহাম্মদ বা আল্লাহ বা তাদের কোরান বলে যে যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে হত্যা করা হয় নি, তার কোন পুনরুত্থান ঘটে নি, বা ত্রিত্ববাদ বলে কিছু নেই, তাহলে আমরা কি বুঝব? সমস্যাটা কোথায়? কোরানে নাকি গসপেলে? ইসলামে নাকি খৃষ্টান ধর্মে?
319 views0 comments
bottom of page