কিভাবে আপনি প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার সন্ধান করবেন?
- সত্য অন্বেষী
- Jul 15, 2020
- 4 min read

প্রিয়পাঠক, আমরা জানি বর্তমান সময়ে অনেক খ্রীষ্টান বিশ্বাসী প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা কি তা জানার জন্য খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাই নয় কি? কিন্তু প্রশ্ন হলো কিভাবে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে ও বুঝতে পারব?
তাই আসুন আমরা পবিত্র বাইবেলের যাকোব ১:২২ পদ পড়ি।
‘‘আর বাক্যের কার্য্যকারী হও, শ্রোতামাত্র হইও না...’’ (যাকোব ১:২২)।
ঈশ্বরের বাক্য শোনা এবং তা থেকে পথনির্দেশ পাওয়ার জন্য, আপনি যা শুনেছেন তার প্রতি বাধ্য হতে অবশ্যই আপনাকে ইচ্ছুক হতে হবে। এর পূর্ববর্তী পদ, যাকোব ১:২১ পদে ঈশ্বরের বাক্য শোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলা হয়েছে।
‘‘অতএব তোমরা সকল অশুচিতা এবং দুষ্টতার উচ্ছ্বাস ফেলিয়া দিয়া, মৃদুভাবে সেই রোপিত বাক্য গ্রহণ কর, যাহা তোমাদের প্রাণের পরিত্রাণ সাধন করিতে পারে’’ (যাকোব ১:২১)।
স্পষ্টতার জন্য আমি একটা আধুনিক অনুবাদ থেকে এর উল্লেখ করব।
‘‘অতএব, তোমরা সকল নৈতিক অশ্লীলতা এবং মন্দ যাহা অতি সাফল্য আনে তাহা ঝাড়িয়া ফেলিয়া দেও, এবং নম্রতার সহিত সেই রোপিত বাক্য গ্রহণ কর, যাহা আপনাকে পরিত্রাণ করিতে পারে’’ (NIV)।
একজন মানুষকে অবশ্যই সেই সমস্ত নৈতিক অশ্লীলতা ও মন্দতা থেকে মুক্তি পেতে হবে, যা সাফল্য নিয়ে আসে। এটা যৌন সাহিত্য এবং পর্ণগ্রাফির তিক্ততাকে অন্তর্ভূক্ত করছে। কোন কোন লোক ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার আশা করেন সেই সময়ে যখন তারা অশুচি চিন্তার ক্রীতদাস হয়ে আছেন। কেউ কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার আশা করছেন সেই সময়ে যখন তার পিতামাতা, তার পালক, বা মন্ডলীর অন্য নেতাদের সঙ্গে তার তিক্ততার সম্পর্ক চলছে। তাদের হৃদয় তিক্ত হয়ে আছে। যারা ঈশ্বর বিরোধী, যারা জাগতিক তাদের সঙ্গে অন্যান্যদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব রয়েছে। তারা সেই ব্যক্তিকে এতটাই পছন্দ করে যে তারা ভুলে যায় যে ‘‘জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা’’ (যাকোব ৪:৪)।
অন্যেরা ঈর্ষা এবং গর্বে পরিপূর্ণ। আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি ঈশ্বরের সামনে স্বীকার করতে হবে এবং আপনার হৃদয় থেকে এই সমস্ত অপসারনের জন্যে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আপনার জীবনের নির্দেশ হিসাবে ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণ করলে শুধুমাত্র তবেই আপনি যথেষ্ট পরিমানে নম্র হবেন। একমাত্র তখনই আপনি হবেন ‘‘বাক্যের কার্যকারী, এবং শুধু শ্রোতামাত্র নয়।’’
এই পদের উপরে মন্তব্য করতে গিয়ে, একজন পালক বলেছিলেন, ‘‘ইহা প্রায় অপরিবর্তনশীল ঘটনা [ যে বা যাহারা একসময় নিজেদের খ্রীষ্ট বিশ্বাসী বলেছিলেন তাহাদের সন্দেহপ্রবণতা যখন বৃদ্ধি পায় ], এবং ইহা বা উহা সংগ্রহ করিতে শুরু করেন, তখন তাদের জীবনে এক গুপ্ত অশুভ শক্তি কাজ করে যাহাকে তাহারা নিজস্ব সচেতনতা হইতে আবরিত করিতে যত্নশীল হয়।
সেবাকার্যের প্রতি কটু বাক্য বলিতে দিয়াবল তাহাদের প্রলুব্ধ করে কারণ সুসমাচার তাহাদের অপরাধযুক্ত নৈতিক চেতনার বিরুদ্ধে যাইবার প্রতি কঠিন চাপ দিয়া থাকে, এবং তাহাদের পাপের বিষয়ে অস্বচ্ছন্দ অনুভব করায়। আনন্দের সহিত এবং আপনার নিজস্ব লাভের নিমিত্ত যদি আপনাকে ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করিতে হয়, তাহা হইলে আপনি অবশ্যই ‘সমস্ত আবিলতা এবং দুষ্টতার অমিতাচার ত্যাগ করিবেন’; কারণ এই সকল বিষয়গুলি ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধে আপনাকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন করিবে’’।
যদি ঈশ্বরের বাক্য থেকে আপনি কোন লাভ গ্রহণ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সমস্ত নোংরামীকে জীবন থেকে সরিয়ে দিতে হবে। একমাত্র তখনই আপনি হতে পারবেন ‘‘বাক্যের কার্য্যকারী ব্যক্তি।’’ আপনার জীবনে আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানতে পারবেন শুধুমাত্র যখন আপনি ঈশ্বরের বাক্যের বাধ্য হবেন। আমি এখন ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার জন্যে বাইবেলে লিখিত পথগুলির মধ্যে ছয়টির সন্ধান আপনাকে দিচ্ছি।
১। অবশ্যই এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার জন্যে আপনার নিজের হৃদয়কে আপনি অবশ্যই বিশ্বাস করবেন না।` যেমন আমি আপনাদের আগেও বলেছি, বাইবেল খুব স্পষ্ট করে বলছে,
‘‘যে নিজ হৃদয়কে বিশ্বাস করে, সে হীনবুদ্ধি’’ (হিতোপদেশ ২৮:২৬)।
আপনি মনে করতে পারেন সেটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কারণ,‘‘অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?’’ (যিরমিয় ১৭:৯)।
আশ্চর্য্যের কোন কিছুই নেই যে যিনি নিজের অন্তঃকরণকে বিশ্বাস করেন তিনি একজন ‘‘হীনবুদ্ধি’’ ব্যক্তি।
২। ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার জন্যে আপনাকে অবশ্যই আপনার ইচ্ছা নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে হবে।
‘‘যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয় জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর হইতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি’’ (যোহন ৭:১৭)।
এর অর্থ এই যে যদি কোন ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে কার্য্যকর করিতে পছন্দ করেন, ঈশ্বর তাহার নিকটে তাহা প্রকাশ করিবেন। যদি কোন ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তাঁহার ইচ্ছাকে কার্য্যকর করিতে চাহেন, তাহা হইলে, তিনি জানতে পারবেন...কোন বিষয়ে ঈশ্বরের নেতৃত্ব নির্ধারিত করিবার প্রাথমিক পূর্বশর্তকে...যাহা হইল ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করিবার প্রতি একটি বিশুদ্ধ সম্মতি, এমনকী সেই উত্তর যদি কাহারও পছন্দের বিরুদ্ধে যায় তাহা হইলেও,তাই নয় কি?
৩। ঈশ্বরের ইচ্ছা জানবার জন্যে আপনাকে অবশ্যই আপনার পাপসমূহ স্বীকার এবং পরিত্যাগ করতে হয়।
‘‘যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে| ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সর্ব্বদা ভয় রাখে; কিন্তু যে হৃদয় কঠিন করে, সে বিপদে পড়িবে’’ (হিতোপদেশ ২৮:১৩-১৪)।
৪। ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার জন্যে আপনি অবশ্যই আপনার খ্রীষ্টীয় পিতার নির্দেশ অগ্রাহ্য করবেন না।
‘‘অজ্ঞান আপন পিতার শাসন অগ্রাহ্য করে; কিন্তু যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়’’ (হিতো ১৫:৫)।
‘‘জ্ঞানবান পুত্র পিতার শাসন মানে, কিন্তু নিন্দক ভর্ত্সনা শুনে না’’ (হিতোপদেশ ১৩:১)।
৫। ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার জন্যে আপনি অবশ্যই আপনার মন্ডলীর আত্মিক নেতাদের পরামর্শ মেনে চলুন।
‘‘তোমরা তোমাদের নেতাদিগকে [তোমাদের পরিচালনাকারীদের, স্কোফিল্ড] আজ্ঞাগ্রাহী এবং বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হবে বলিয়া তাহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরিকার্য্য করিতেছেন, - যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন...’’ (ইব্রীয় ১৩:১৭)।
ইব্রীয় ১৩:১৭ সম্বন্ধে সংস্কার পন্থি বাইবেল ষ্টাডি বলছে, ‘‘বিশ্বস্ত মন্ডলীর নেতৃবর্গ হইতেছেন বিশ্বস্ত মেষপালক অথবা প্রহরীর ন্যায় যিনি নগরের প্রতি বিপদসূচক ঘন্টা বাজান। নেতৃবর্গের যত্ন খুব আন্তরিক এবং বিশুদ্ধ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত এবং তাহারা তাহাদের হিসাব তাঁহাকেই দিবেন। তাহাদের সেবাকার্য্য বাধাপ্রাপ্ত হইলে প্রত্যেকেই দুঃখভোগ করিবে, তাই নয় কি?"
৬। ঈশ্বরের ইচ্ছা জানার জন্য আপনার উচিৎ ঈশ্বরের প্রতি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা, এবং জাগতিক আমোদ প্রমোদের মধ্যে গা ভাসিয়ে না দেওয়া।
‘‘অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা| আর এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ’’ (রোমীয় ১২:১-২)।
Comments