পাঠের বিষয়: রোমীয় ৩: ২১-২৬
“কিন্তু এখন ব্যবস্থা ব্যতিরেকেই ঈশ্বর-দেয় ধার্ম্মিকতা প্রকাশিত হইয়াছে, আর ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক তাহার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া হইতেছে। ঈশ্বর-দেয় সেই ধার্ম্মিকতা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা যাহারা বিশ্বাস করে, তাহাদের সকলের প্রতি বর্ত্তে—কারণ প্রভেদ নাই; কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরববিহীন হইয়াছে—উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়। তাঁহাকেই ঈশ্বর তাঁহার রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান—কেননা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্ব্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছে— যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্ম্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্ম্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্ম্মিক গণনা করেন।”
পর্যবেক্ষণ
১। ব্যবস্থা ছাড়াই ধার্মিকতা প্রকাশিত হয়েছে—এর অর্থ কী?
২। ব্যবস্থা ও ভাববাদীগণের গ্রন্থ কী সাক্ষ্য দেয়?
৩। ঈশ্বরের দেওয়া ধার্মিকতা কীভাবে পাওয়া যায়?
৪। কীভাবে ঈশ্বর লোকদের ধার্মিক গণনা করেন?
৫। যীশু খ্রীষ্ট পাপিদের জন্য কী করেছেন?
ব্যাখ্যা
বাইবেল মানুষের প্রকৃতি ও অবস্থার তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে:
১। পাপে পতনের আগে:
তখন মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে হৃদয়ের একত্রীকরণ ও নিষ্পাপ বিশুদ্ধতায় চলত।
২। পাপে পতনের পরে:
মানুষ পাপী হয়ে গেল, তার প্রকৃতি বিকৃত হল এবং ঈশ্বরের মহিমা হারালো।
৩। পুনর্জন্মের পরে:
ঈশ্বরের করুণায় মুক্তি লাভ করে, মানুষ নতুন সৃষ্টি হয়।
মানুষের এই দুই অবস্থা (পতিত ও পুনরুত্থিত) একসঙ্গে প্রাসঙ্গিক এবং বাইবেল সেই বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
প্রথমত: সার্বজনীন অপরাধের বাস্তবতায় কোনো পার্থক্য নেই
“কারণ সকলেই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের মহিমা থেকে বঞ্চিত হয়েছে” (পদ ২৩)।
১। পাপ সর্বজনীন:
বাইবেল শুধু দোষারোপ করে না; এটি দয়া ও করুণার সঙ্গে পাপের বাস্তবতা তুলে ধরে। পাপের মাত্রা ও গভীরতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু পাপের উপস্থিতি সার্বজনীন।
২। অহংকারের বিনাশ:
প্রেরিত পল প্রথমে অইহুদীদের দেখালেন যে, তারা পাপী। পরে ইহুদীদের দেখালেন যে, তাদের আইনানুযায়ী ধার্মিকতাও যথেষ্ট নয়।
৩। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সকল সমান:
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি সাম্যবাদী। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধনী বা দরিদ্র, উচ্চ বা নিম্ন শ্রেণি—সবাই পাপী।
দ্বিতীয়ত: সার্বজনীন করুণার প্রস্তাবে কোনো পার্থক্য নেই
“খ্রীষ্ট যীশুতে যে মুক্তির মাধ্যমে তাঁর অনুগ্রহের দ্বারা নির্দ্বিধায় ধার্মিক হওয়া” (পদ ২৪)।
১। ঈশ্বরের ভালোবাসার প্রমাণ:
যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে ঈশ্বর মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কেমন। মানুষকে অবহেলা করার জন্য নয়, বরং করুণার সঙ্গে মুক্তি দেওয়ার জন্যই যীশু ক্রুশে আত্মাহুতি দেন।
২। ন্যায়বিচার ও করুণা:
ঈশ্বর শুধু পাপ ক্ষমা করেন না; বরং পাপীর ওপর তাঁর ধার্মিকতা আরোপ করেন।
• যীশুর রক্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত।
• বিশ্বাসের মাধ্যমে পাপী মুক্তি পায়।
৩। কোনো যোগ্যতা বা উপার্জন প্রয়োজন নেই:
এটি ঈশ্বরের বিনামূল্যের অনুগ্রহ। এতে কোনো পার্থক্য নেই—সবাই সমানভাবে এই করুণা লাভ করতে পারে।
প্রয়োগ
১। পাপের সার্বজনীন ঘোষণা:
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে বাইবেলের মতে, সবাই পাপী এবং ধার্মিক কেউই নয়?
২। মুক্তির সুসমাচার:
ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট আপনার পাপ মুক্তির জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর আপনাকে ধার্মিক হিসেবে গ্রহণ করেন।
৩। কোনো পার্থক্য নেই:
বিশ্বাস ও অনুগ্রহই মুক্তির একমাত্র পথ।
তাই আসুন, যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর দেওয়া মুক্তির আনন্দে অংশীদার হই।
Comments