প্রিয়পাঠক, একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী আর একজন খ্রীষ্টান এই দুই ব্যক্তির মধ্যে বেশ পার্থক্য বিদ্যামান আছে। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী, "যিনি যীশু খ্রীষ্টকে নিজ পাপের পরিত্রাণ কর্তা হিসাহে বিশ্বাসে হৃদয়ে গ্রহন করেছেন এবং তিনি পরিত্রাণের চিহ্নের মুদ্রাঙ্ক পবিত্র আত্নাকে বায়না হিসাবে প্রাপ্ত হয়েছেন। এই পরিত্রাণ ঈশ্বরের দয়ায়, যীশু খ্রীষ্টের রক্তের বিনিময়ে বিনামূল্য দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটি বিনামূল্য সেহেতু এটি মূল্য দিয়ে রক্ষা করতে হবে এমন নয়! কেননা আমি সুসমচারকে রক্ষা করবো এমন নয় বরং সুসমাচার সর্বদায় আমাকে শয়তান, পাপ ও মৃত্যু কবল থেকে রক্ষা করছেন।
"কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।" যোহন ৩:১৬ পদ।
"খ্রীষ্টে থাকিয়া তোমরাও সত্যের বাক্য, তোমাদের পরিত্রাণের সুসমাচার, শুনিয়া এবং তাঁহাতে বিশ্বাসও করিয়া সেই অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ;সেই আত্মা ঈশ্বরের নিজস্বের মুক্তির নিমিত্ত, তাঁহার প্রতাপের প্রশংসার নিমিত্ত আমাদের দায়াধিকারের বায়না।"
ইফি ১:১৩-১৪ পদ।
খ্রীষ্টান শব্দটির সংজ্ঞা যদি আমরা পরিস্কার বুঝতে পারি তাহলে আমরা একজন খ্রীষ্টান ও খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর বিষয় জানতে পারবো। একজন খ্রীষ্টান বলতে আমরা যা বুঝি আসলে তা বাইবেলের আলোকে সত্য হিসাবে ধরা হয় না। যেমন, খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহন করলে আমরা তাকে খ্রীষ্টান বলে গন্য করি। এবং নিয়মিত চার্চে প্রার্থনা ও উপাসনা করলে সে খ্রীষ্টান। কিন্তু সে যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাসে গ্রহন নাও করতে পারে I আর খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি যীশু খ্রীষ্টের উপরে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেছেন এবং তাঁকে প্রভু হিসাবে গ্রহন করেছেন; সে পরিত্রাণপ্রাপ্ত! এই পরিত্রাণ কখনোই হারিয়ে যায় না।
"আমার মেষেরা আমার রব শুনে, আর আমি তাহাদিগকে জানি, এবং তাহারা আমার পশ্চাদগমন করে;আর আমি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিই, তাহারা কখনই বিনষ্ট হইবে না, এবং কেহই আমার হস্ত হইতে তাহাদিগকে কাড়িয়া লইবে না।"
যোহন ১০:২৭-২৮ পদ।
সুতরাং খ্রীষ্ট বিশ্বাসী আর খ্রীষ্টান এই সংজ্ঞাটি মাথায় রেখে একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ও খ্রীষ্টান কি পরিত্রাণ হারিয়ে ফেলতে পারে? নিশ্চয় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন I এই প্রশ্নের গুরুত্বপূর্ণ উত্তর খুৃজতে পবিত্র বাইবেল "পরিত্রাণতত্ত্ব" সম্পর্কে যা বলে তা আমাদের পরীক্ষা করা।
একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ঈশ্বরের সন্তান। যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাসে গ্রহনের পূর্বে সে ঈশ্বরের সন্তান ছিল না। তার অতীত ছিল ঈশ্বর বিহীন, খ্রীষ্ট বিহীন, পুরাতন নিয়মের প্রতিজ্ঞার বাইরের লোক, তার পরিচয় ছিল পরজাতি। কিন্তু খ্রীষ্টের ক্রুশে পাতিত রক্তের মূল্য দ্বারা এখন তারা পাপের দন্ড হইতে মুক্ত। যেহেতু পরিত্রাণ যীশুর রক্তের দ্বারা সম্পূর্ণ করা হয়েছে, সুতরাং তা হারানোর প্রশ্নেই আসে না। কেননা যে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নয়, কিন্তু জগতর কাছে খ্রীষ্টান সে ত পরিত্রাণপ্রাপ্ত হই নি। আর যে পরিত্রাণ কখনোই পায় নি, সে কিভাবে পরিত্রাণ হারাতে পারে?
"অতএব এখন, যাহারা খ্রীষ্ট যীশুতে আছে, তাহাদের প্রতি কোন দণ্ডাজ্ঞা নাই।" রোমীয় ৮:১ পদ।
একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী উদ্ধার পেয়ে গেছে I তাই সে খ্রীষ্টেতে জীবন যাপন করবে; তোমরা তো জান যে তোমাদের পিতৃপুরুষগণের থেকে তোমাদের কাছে প্রাপ্ত জীবনের অলীক আচরণ থেকে তোমরা ক্ষয়নীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা মুক্ত হও নি, বরং নির্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্তের দ্বারা মুক্ত হয়েছ”। ১পিতর ১: ১৮-১৯ পদ।
মুক্ত হওয়া শব্দটি একটি বিনিময়ের মূল্য দেওয়া বোঝানো হয় I অমাদেরকে খ্রীষ্টের রক্তের মূল্যে দ্বারা ক্রয় করা হয়েছে I যীশু খ্রীষ্টের একফোটা রক্তের মূল্য এই জগত পরিশোধ করতে পারবে না। তাই একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর পরিত্রাণ হারাতে হলে ঈশ্বরকে এই মূল্যবান রক্ত ফিরিয়ে দিয়ে ক্রয়কে প্রত্যাখান করতে হবে। কিন্তু সত্য হচ্ছে ঈশ্বর যা দেন, তা তিনি ফিরিয়ে নেন না। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীকে ঈশ্বর ন্যায্যতায় ধার্মিক হিসাবে গ্রহন করেছেন I
“অতএব বিশ্বাসহেতু আমাদের ধার্মিক প্রতিপন্ন করা হয়েছে, তাই আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে আমাদের শান্তি রয়েছে”। রোমীয় ৫:১। পদ I
ন্যায্যতার অর্থ হচ্ছে আমরা পাপি কিন্তু ঈশ্বর যীশুর রক্তে পাপ ক্ষমা করে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের এমনভাবে গ্রহন করেছেন যে, আমরা আর পাপি নই; আমাদের ধার্মিক ঘোষণা করা হয়েছেI যারা যীশুকে উদ্ধারকর্তা বলে ঘোষণা করা হয় তাদেরকে ঈশ্বরের দ্বারা “ধার্মিক বলে ঘোষণা করা হয়” I একজন খ্রীষ্টানের পরিত্রাণ হারাতে, ঈশ্বরকে তাঁর বাক্যে ফিরে যেতে হবে এবং তিনি এর আগে যা ঘোষণা করেছিলেন তা প্রত্যাহার করতে হবে। অপরাধবোধ থেকে মুক্ত হওয়া লোকেদের আবার বিচার করতে হবে এবং দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। ঐশ্বরিক ন্যায্যতার ঘোষনা ফিরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু ঈশ্বর খ্রীষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাদের অনন্তজীবন দান করেছেন; অর্থাৎ আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি। পরিত্রাণ সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য সংরক্ষিত তা হারানোর বিষয় নয়। কিন্তু আপনার বিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে! পরিত্রাণ নয়।
"তোমরা যাহারা ঈশ্বরের পুত্রের নামে বিশ্বাস করিতেছ, আমি তোমাদিগকে এই সকল কথা লিখিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমরা অনন্ত জীবন পাইয়াছ।"
১ যোহন ৫:১৩ পদ
যীশুতে বিশ্বাসী সকল খ্রীষ্টান পরিত্রাণের পথে চলিতেছে। কিন্তু অবিশ্বাসী হৃদয় পরিত্রাণ হইতে ধ্বংসের পথে পরিচালিত হচ্ছে; ইহাদের পরিত্রাণ নেই।
"কিন্তু আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না। পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।"
ইব্রীয় ১০:৩৮-৩৯ পদ।
"এই সকল ধরিয়া আমরা কি বলিব? ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে? যিনি নিজ পুত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন, তিনি কি তাঁহার সহিত সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পূর্ব্বক দান করিবেন না? ঈশ্বরের মনোনীতদের বিপক্ষে কে অভিযোগ করিবে? ঈশ্বর ত তাহাদিগকে ধার্ম্মিক করেন; কে দোষী করিবে?
খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন, বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন।খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে? কি ক্লেশ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দুর্ভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ-সংশয়? কি খড়্গ?
যেমন লেখা আছে, “তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম।”
রোমীয় ১০:৩১-৩৯ পদ।
অতএব, যীশুতে বিশ্বাসে স্থীর সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসী কখনোই পরিত্রাণ থেকে হারিয়ে যাবে না! এটি নিশ্চিৎ।
Comments