প্রিয়পাঠক, ইসলাম ও মুসলিম ধর্মের লোকেরা যীশু বা ঈসা মসীহকে শুধুমাত্র একজন নবী বলে। এখন আমাদের জানা দরকার তাদের এই স্বীকারোক্তি কতটুকু ধর্মতাত্ত্বিকভাবে গ্রহনযোগ্য। প্রথমত আমি বলবো, যীশুকে শুধু নবী বলে স্বীকার করা, নবী হিসাবে যীশুকে সম্মান করা, এটি আপনাকে পরিত্রাণের পথে পরিচালিত করবে না। এই স্বীকারোক্তিতে আপনি ভ্রান্তভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। কেননা যীশু নবীর চাইতেও আরো বেশি কিছু তা প্রত্যেক মানুষের জানা প্রয়োজন।
বিশ্বের সব চেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় আলোচ্য বিষয় হচ্ছে যীশুকে? এই বিষয়ে বিতর্ক। তাই আসুন এই সকালে আমরা আজ তার পূর্ণ ব্যাখ্যা কি তা দেখি -
যীশু প্রচার কাজে বিভিন্ন জায়গায় পরিভ্রমন করেছেন, অনেক অলৌকিক কাজ করেছেন, জীবনের জন্য আধ্যাত্মিক শিক্ষাও দিয়েছেন, নিজে শিষ্যগঠন করেছেন। যীশু মানুষের মধ্যে একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন তৈরী করেছিলেন। তাই তিনি সর্ব লোকদের নিকট খুব সহজেই পরিচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।
একদিন যীশু শিষ্যদের প্রশ্ন করলেন, আমি কে এই বিষয়ে লোকেরা কি বলে?
"পরে যীশু যখন কৈসরিয়া-ফিলিপি এলাকায় গেলেন তখন শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “মনুষ্যপুত্র কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?” তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কেউ কেউ বলে এলিয়; আবার কেউ কেউ বলে যিরমিয় বা নবীদের মধ্যে একজন।”তখন তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” শিমোন-পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।” উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “শিমোন বার-যোনা, তুমি ধন্য, কারণ কোন মানুষ তোমার কাছে এটা প্রকাশ করে নি; আমার স্বর্গস্থ পিতাই প্রকাশ করেছেন।" (মথি ১৬:১৩-১৭)
যীশু "লোক " বলতে এখানে যা বুঝিয়েছেন তা হল - যারা যীশুর শিষ্য নয় - কিন্তু যীশুকে ভালবাসেন এমন ব্যক্তি। বর্তমান বিশ্বে যীশুকে ভালবাসেন এমন লোক প্রচুর আছে, যীশুর সময়েও প্রচুর ছিল। যেমন -
১। ইহুদি
২। মুসলিম
৩। বৌদ্ধ
৪। হিন্দু
৫। নাস্তিক ও
৬। কিছু ভ্রান্ত খ্রিস্টান।
উপরে, উল্লেখিত সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো যীশুকে নিজ নিজ মনের ইচ্ছা দ্বারা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেন এমন কি যীশুর শিষ্যদের বিশ্বাসকেও চ্যালেঞ্জ করে যা একেবারেই হাস্যকর একটি বিষয়। তাদের কেউ কেউ বলেন, যীশু একজন ভাল মানুষ, কেউ বলেন যীশু নবী, কেউ বলেন যীশু রাসূল, কেউ বলেন যীশু বিশেষ কেউ, কেউ বলেন যীশু উদ্ধারকর্তা ইত্যাদি। এই ধরনের বিশ্বাসে যীশু সন্তুষ্ট নন, কিন্তু তিনি বলেন তোমরা, শিষ্যরা কি বল?
শিষ্য হল খ্রিস্টান যারা যীশুকে জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র বলে বিশ্বাস ও স্বীকার করেন, যা লোকদের বিশ্বাস থেকে একেবারেই আলাদা। খ্রিস্টানদের এই পরিচয়ের উপর বেড়ে উঠতে হবে। এই পরিচয়ের উপর চার্চ গঠন করতে হবে - যীশু জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র, যিনি ঈশ্বর মানব।
যীশু কেন ঈশ্বর মানব ?
"পবিত্র বাইবেলে যীশু ঈশ্বর মানব ও যীশু নিজেও তা প্রমাণ করেছেন। যীশুর দ্বৈত স্বভাব আছে, তাই যীশু ঈশ্বর ও মানুষের মাঝে মধ্যস্ততাকারী, দ্বিতীয় কোন মাধ্যম নাই যা দ্বারা মানুষ ঈশ্বরের সংগে মিলিত হতে পারে।
যীশু বলেন, "পিতা আমাতে আছেন, এবং আমি পিতাতে আছি"- যোহন ১০:৩৮।
যীশু যখন "পিতা আমা অপেক্ষা মহান" - (যোহন ১৪:২৮ ) বলেন, তখন তার অর্থ কি? এর অর্থ বুঝতে হলে যীশুর দুটো স্বভাব সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মতে যীশুর দুটো স্বভাব - তাঁর ঈশ্বরের স্বভাব ও মানব স্বভাব। এ দুটো স্বভাবের কারণেই তিনি ঈশ্বর ও তিনি মানব। এদুটো স্বভাবের কারণে তিনি ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরী করতে পেরেছেন। তিনি সব সময় এ দুটো স্বভাব ও ব্যক্তিতে বিদ্যমান। মানুষের স্বভাব না থাকলে তিনি স্বর্গ থেকে মানুষের মাঝে মানুষ হিসাবে অবতরণ করে বসবাস করতে পারেন না। তাঁর মানুষ হওয়া দরকার ছিল, কেননা তিনি মানুষের পরিত্রাণ করতে এসেছেন। আবার তাঁকে ঈশ্বর থাকতে হয়েছে। কেননা কোন পাপ না করতে, পাপিদের পাপ ক্ষমা করতে, আর পাপের কর্তা শয়তানকে পরাজিত করতে ঈশ্বর থাকা দরকার।খ্রিস্টান ধর্মের বিশ্বাস মতে ঈশ্বর মানুষ হিসাবে মূর্তিমান হয়েছেন যেন মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। যখন তিনি মানুষ হিসাবে কথা বলেছেন, তখন তিনি মানবীয় স্বভাবে থেকে কথা বলেছেন বলেই ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা ও বশ্যতা দেখিয়েছেন। এদুনিয়াতে তিনি তাঁর মানবীয় রুপ দেখিয়েছেন, আবার ঈশ্বরের রুপ দেখিয়েছেন। কেননা তিনি যে সব কাজ করেছেন, তা কেবল ঈশ্বরই করতে পারেন।
“আমার পিতা আমার হাতে সব কিছুই দিয়েছেন। পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আবার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে। এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন কেবল সে-ই জানে।" (লুক ১০: ২২)
পরিশেষে, এটি বলা যায় যে, নন খ্রিস্টানরা যীশুকে নানা ভাবে বিশ্বাস করেন, এতে আমাদের কোন সমস্যা নাই, কিন্তু আমরা খ্রিস্টানরা যীশুকে কি বলে বিশ্বাস ও প্রচার করি তাহাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
যীশুকে শুধুমাত্র নবী বলে স্বীকার করা, নবী বলে সম্মান করা, এটি নিজের সাথে নিজেই প্রতারণা করা, কেননা যীশু ত্রানকর্তা মসীহ জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানুষের স্বর্গ ও নরকে যাওয়া নির্ভরশীল।
যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করিবে। (যোহন ৩:৩৬)
Comments