প্রিয়পাঠক, আজ আমরা নবী আব্রাহাম তার কোন পুত্রকে কোরবানি করতে নিয়ে ছিলেন, সেই বিষয়ে সত্যতার অনুসন্ধান করবো। কেননা এই বিযয়ে ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদরা বড় ধরনের মিথ্যাচার করছেন তা আমরা অবগত আছি। এই বিষয়ে প্রভু যীশু বহু আগেই শিষ্যদের শতর্ক করে বলেছেন, "কেউ কুড়ায় অথবা কেউ ছড়ায়" তাই নয় কি? তাই আসুন আমরা পবিত্র বাইবেল থেকে আদিপুস্তক ২২: ২ পদ পড়ি,
"তখন তিনি কহিলেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, যাহাকে তুমি ভালবাস, সেই ইস্হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং তথাকার যে এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর।"
প্রথমতঃ পবিত্র বাইবেলে আদিপুস্তক ২২:২ পদে, ঈশ্বর আব্রাহামের সংগে কথোপকথন করছেন। তিনি কোরবানি বিষয় আব্রাহামের সংগে কথা বলছেন। তিনি আব্রাহামকে বলেন, তুমি আপন পুত্র, তোমার অদ্বিতীয় পুত্র , ঈসাহাককে নিয়ে মোরিয়া দেশে যাও, এবং ঈশ্বরের দেখানো এক পর্বতের উপরে তাহাকে কুরবানী কর। আদিপুস্তক ২২:১-১৪ পদে ৫ বার ঈসাহাকের নাম পরিস্কার উল্লেখ আছে। ঈশ্বর আব্রাহামকে তার অদ্বিতীয়পুত্র ঈসাহাকে কোরবানি কথা বলেছেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কার সাক্ষ্য গ্রহন করবো? ঈশ্বর, আব্রাহাম ও ঈসাহাক না কি ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদদের মনগড়া কথা? অবশ্যই আমরা ঈশ্বর, আব্রাহাম ও ঈসাহাকের সাক্ষ্যকে সত্য বলে গ্রহণ করবো।
প্রিয়পাঠক, আপনারাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। এই বিষয়ে কোরআনের বক্তব্যও অতি পরিস্কার। সত্য অনুসন্ধান করতে সেটিও আমাদের জানা প্রয়োজন, তাই নয় কি?
সূরা আস-সাফফাত:১০২ - "অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।"
কোরানে সরাসরি কোন পুত্রকে কোরবানি করতে নেওয়া হয়েছিল, তার নামের কোন উল্লেখ নেই। "প্রিয়পুত্র" শুধু এই শব্দটি আছে। প্রিয়পুত্র এই কথাটির দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, এই প্রিয়পুত্র ঈসাহাক। কেননা আব্রাহামের নিজের স্ত্রী সারার গর্ভে ঈশ্বরের আশ্চর্যজনক আসির্বাদে জন্ম নেওয়া পুত্র ঈসাহাকই প্রিয় হবেন।
দ্বিতীয়তঃ আব্রাহামের দৈহিক বংশধররা, সমস্ত ঈস্রায়েল জাতি এখনো এটি স্বীকার করে যে, নবী আব্রাহাম ঈসাহাকে কোরবানি করতে নিয়েছিলেন। কিতাবীয় সাল গননায় আব্রাহাম থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর পর্যন্ত এই সত্যই ঘোষিত হয়ে আসছে। এই সত্যের পক্ষে প্রমাণ আছে, ঈশ্বরের নিজ মুখের সাক্ষ্য, আব্রাহামের নিজ মুখের সাক্ষ্য, ঈসাহাকের নিজ মুখের সাক্ষ্য, সমস্ত ঈস্রায়েল জাতির সাক্ষ্য। কিন্তু আব্রাহামের ৬০০০ বছর পরে, এই পৃথিবীতে এমন কি ঘটলো যে, ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদরা ইতিহাসের ঈশ্বরিক সত্যতার বিপক্ষে মিথ্যার একটি প্রলেব দিয়ে ঈসমাইলকে কোরবানির কথা ঘোষণা করছেন, কিন্তু কেন?
এই কেন এর উত্তর খুবই ভয়াবহ। কারণ ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদগন শুধু আব্রাহামের কোরবানি বিষয়ে বলেই থেমে নেই। তাদের ধর্মতাত্ত্বিক আক্রমন সমগ্র বাইবেলের সমুদয় ঈশ্বরিক শিক্ষার বিপক্ষে। এখানে যীশুর জন্ম, যীশুর ঈশ্বরত্ব, যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু,যীশু পুনুরুন্থান ও যীশুর দ্বিতীয় আগমন, এমন কি, বাইবেলে বর্ণিত সকল নবীদের ঘটনাপ্রবাহ ও শিক্ষার বিপরিতে ব্যাপক মিথ্যা শিক্ষার সংমিশ্রণ ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই প্রবনতার উৎস স্বয়ং বাইবেলের ঈশ্বরের বিপক্ষ শক্তির অবস্থান। কেননা ঈশ্বরের রাজ্যর প্রতিপক্ষের শক্তি খুবই সক্রিয়।
প্রিয়পাঠক, কোন ধর্মকে আঘাত করার মন ও ইচ্ছা আমার নেই। কিন্তু ঈসমাইলকে কোরবানি দিতে নেওয়া হল এ ঘটনা কোথা থেকে আসল, আজও আমি তা জানতে পারলাম না। আমি অতি উৎসাহী হয়ে কোরআনের সূরা সাফফাতের ১০০-১১৩ আয়াত বহুবার পড়েছি। সেখানে ঈসমাইলের নাম ধরে কোরবানি করার কোন উল্লেখ নেই, বরং যে সৎকর্ম পরায়ন সন্তানের কথা বলা হয়েছে, তিনি হচ্ছেন ঈসাহাক। আমি অনেক কোরআন জানা ভাইদের এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছি, তারা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। পবিত্র বাইবেলে থাকা হাজার হাজার বছরের পুরনো ঐতিহাসিক সত্য ঘটনাকে ৬০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে ভিন্নভাবে বলার পিছনে কি যুক্তি থাকতে পারে? আপনারা খুজে পেলে আমাকে জানাবেন। আমিও তা জানতে চাই। প্রত্যেক পাঠকের নিকট এই আহবান জানাই। পবিত্র বাইবেলে ঈসাহাককে কোরবানি করার ঘটনাকে বিকৃত করে, কিভাবে কেউ কেউ ঈসমাইলকে আনল, তার তথ্যসূত্র অনুসন্ধানের ভার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
Comments