প্রিয়পাঠক, একজন খ্রীস্টান বিশ্বাসী সর্ব সময় বিপদে প্রার্থনা দ্বারা ঈশ্বরের সাহায্য কামনা করবে এটিই শ্রেয় -
কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।(ফিলি ৪:৬-৭ )
বাইবেলের সমালোচকগণ মার্ক ১৬:১৪-১৮ পদের যীশু খ্রীস্টের এই কথার ভুলব্যাখ্যা করে সেটাকে একটি পরীক্ষা বানিয়েছে – প্রকৃত খ্রীস্টান হতে হলে, এই চ্যালেঞ্জে দাঁড়াতে হবে।
"পরে এগারোজন শিষ্য যখন আহার করছিলেন, যীশু তাঁদের কাছে আবির্ভূত হলেন, তাঁদের বিশ্বাসের অভাব দেখে ও পুনরুত্থানের পরে যাঁরা তাঁকে দেখেছিলেন, তাঁদের কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে রাজি না-হওয়াতে তিনি তাঁদের তিরস্কার করলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা সমস্ত জগতে যাও ও সমস্ত সৃষ্টির কাছে সুসমাচার প্রচার করো। যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রাণ পাবে, কিন্তু যে বিশ্বাস করে না, তার দণ্ডাদেশ করা হবে। আর যারা বিশ্বাস করে, এই চিহ্নগুলি তাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে: তারা আমার নামে ভূতদের বিতাড়িত করবে, তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে, তারা হাতে করে সাপ তুলে ধরবে, আর তারা প্রাণনাশক বিষ পান করলেও তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। তারা পীড়িত ব্যক্তিদের উপরে হাত রেখে প্রার্থনা করবে, আর তারা সুস্থ হবে।” (মার্ক ১৬:১৪-১৮)
কিন্তু একই যুক্তি অনুযায়ী, মুসলমানদের জন্য তেমন একটা ‘পরীক্ষা’ রয়েছে – হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন,
“যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়।”
অর্থাৎ এই যুক্তিতে, যারা জীবনে একবারও মুখ খুলে, তারা জাহান্নামী। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রে আসল ব্যাখ্যা হচ্ছে যে প্রকৃত ঈমানদারের জীবনে এই ধরনের প্রবণতা বেশী দেখা যায় (চুপ থাকা, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা এবং বিষ খেয়ে বেঁচে থাকা)।
এই পদের বলা হয়নি যে প্রত্যেক ঈমানদারের মধ্যে এই অলৌকিক গুণ সবসময় দেখা যাবে, বরং বলা হচ্ছে যে ঈমানদারদের মধ্যে এই চিহ্ন দেখা যাবে। এটা নিশ্চয় কোনো ‘falsification test’ (δοκιμάζω) নয়। তার সাহাবীদের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা হিসেবে যীশু খ্রীস্ট এই কথা বলেছেন, যে শয়তান যাই করেন না কেন, তিনি ঈমানদারদের উপর জয়লাভ করবেন না। প্রথম খ্রীস্টান চার্চের মধ্যে এই চিহ্ন দেখা দিয়েছে –
পৌলকে একটি বিষাক্ত সাপ কামড়াল কিন্তু তার ক্ষতি হয়নি (প্রেরিত ২৮:৩-৯) এবং প্রথম চার্চের উদ্বোধনে ১২জন শিষ্য অলৌকিকভাবে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছিলেন যখন পাক-রূহ তাদের উপর নেমে গেলেন। আমরা বাইবেল থেকে জানি যে বিভিন্ন ভাষা কথা বলার রূহানী দান সবাইকে দেওয়া হয়নি (১ করিন্থীয় ১২:১০); তেমনই ভাবে অন্যান্য চিহ্ন প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য নয়।
দ্বিতীয়ত, লোক দেখানোর জন্য আল্লাহ্ তাৎক্ষণিক কেরামতী করেন না। যখন মরুভূমিতে শয়তানের কাছে যীশু খ্রীস্ট একটি “falsification test”-এর দাবী করলেন, যীশু খ্রীস্ট বাইবেলের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তর দিলেন, “তোমার সদাপ্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।” (মথি ৪:৭; মথি ১৬:৪)।
আবার ইহুদী নেতারা যখন যীশুকে একটি চিহ্ন দেখাতে বলল, তিনি তাদের কোন চিহ্ন দেখাতে চাননি। তিনি অবশ্যই অনেক চিহ্ন দেখাতে পারতেন (এবং অন্যান্য সময়ে তিনি প্রায়ই কেরামতী কাজ করতেন), কিন্তু লোক দেখানোর চিহ্ন করেননা। তেমনভাবেও হযরত মুহাম্মদের সমালোচকগণ তাকে একটি কেরামতী কাজ দেখাতে বলল, কিন্তু তিনি কখন তা করেন নি। যীশুর খ্রীস্টের শিক্ষা অনুযায়ী, কেরামতী কাজ দ্বারা ঈমানদার এবং অ-ঈমানদার বোঝা যায় না, কারণ—
“…অনেক ভণ্ড মসীহ্ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং বড় বড় চিহ্ন-কাজ ও কুদরতি দেখাবে যাতে সম্ভব হলে আল্লাহ্র বাছাই করা বান্দাদেরও তারা ঠকাতে পারে।” (মথি ২৪:২৪)
অর্থাৎ যীশু খ্রীস্ট এই ধরণের ঈমানের পরীক্ষা সমর্থন করেননি।
তৃতীয়ত, “নতুন ভাষা” এবং “সব ভাষা” এক না। মার্ক ১৬:১৭ পদে “καιναι” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “অজানা, নতুন”। অনেকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সেটা বোঝাচ্ছে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মিশনারীরা প্রচার করতে গিয়ে নতুন ভাষা শিক্ষার গুণ। অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটা হচ্ছে একটি পুরোপুরি রূহানিক দান বা ‘বেহেশতি ভাষা’ যা ঈশ্বর দান করেন।
অতএব আমি খ্রীস্টান - এই স্বীকারোক্তিই ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য যতেষ্ট।
Комментарии