"তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকে চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন ইহাদিগকে দেওয়া যাইবে না।কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন।" (#মথি ১২:৪০)
খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস অনুসারে অজ্ঞানতার সবচেয়ে নেতিবাচক চিহ্ন হচ্ছে খ্রীষ্টের মৃত্যুর ও পুনরুত্থান অস্বীকার করা । তাই অনেকে বলে থাকে ভাববাদী যোনা যেমন মাছের পেটে মরেনি তেমনি যীশুও মরেনি। তাই আজকের এই ক্ষুদ্র আলোচনায় আমারা দেখব ভাববাদী যোনার চিহ্ন কি ? এই চিহ্নের সাথে যীশু মৃত্যুর ও পূণরুত্থানের সাথে অনন্তকালীন অনুতাপ ও মন পরিবর্তনের সম্পর্ক নিয়ে আমরা আলোচনা করব।।
ভাববাদী যোনার চিহ্ন কিঃ ভাববাদী যোনার চিহ্ন জানার পূর্বে আমাদের যোনার ভাববাদী পুস্তক ও মথি লিখিত সুসমাচার সহ অন্যান্য সুসমাচার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা উচিত । এক পদ, দুই পদ পড়ে পবিত্র বাইবেলের ব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া আর কোন কিছুর অবশিষ্ট থাকবে না ।
প্রথমত : ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : যোনা ভাববাদী খ্রীষ্ট পূর্ব ৮ম শতাব্দীর ভাববাদী ছিলেন । তিনি ইস্সায়েল রাজা দ্বিতীয় যারবিয়াম সমসাময়িক ভাববাদী ছিলেন ( #২রাজা ১৪: ২৩--২৭) । ঈশ্বর তাকে পাঠিয়ে ছিলেন তৎকালীন সময়ের পরাশক্তি ও ইস্সাযেলের শত্রু অশুরের রাজধানী নীনবীর বিরুদ্ধে মন পরিবর্তনের সতর্ক বানী প্রদান করার জন্যে । প্রথমে তিনি ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে নীনবী না গিয়ে তর্শীশে (বতমান সম্ভবত েস্পন ) যাওয়ার জন্য জাহাজে উঠেন । কিন্তুু ঈশ্বর সমুদ্রে ঝড় পাঠান তাতে জাহাজের সবার জীবন ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয় । তখন সবাই যার যার দেবতার উদ্দেশ্য প্রার্থনা করতে ছিলেন । তখন যোনা জাহাজে ঘুমিয়ে ছিলেন । কিন্তুু জাহাজের ক্যাপটেইন তাকে প্রার্থনা করতে বলেন যেন জাহাজ ধ্বংস না হয়। পরে নাবিকরা কার দোষের কারনে এই ঝড় তার জন্য লটারি করে । লটারিতে যোনার নাম উঠে । এর মধ্যে যোনা জাহাজের লোকদের কাছে জীবন্ত ঈশ্বরের পরিচয় দিয়ে ছিলেন । তা ছাড়া তার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার কথাও ব্যক্ত করেন । যোনার পরামর্শে নাবিকরা যোনাকে সমুদ্রে ফেলে দেয় এবং ঈশ্বর যোনা কে গ্রাস করায় জন্য বড় মাছ পাঠালেন এবং মাছের পেটে তিন দিন ও তিন রাত ছিলেন ( #যোনা ১ :১৭)।
মাছের উদর থেকে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন । তিনি মৃত্যুর দুয়ারে অবস্থান করেন (#যোনা ২:২ ) । পরে ঈশ্বরের নিদেশে মাছ যোনাকে শুষ্ক ভূমিতে স্থানান্তর করে।যোনা পরে তিনি নীনবীতে ঈশ্বরের মন পরিবর্তনের বানী ঘোষনা করেন । (#যোনা ৩:১-৪) তিনি ঘোষণা করেছিলেন,"আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।" (#যোনা ৩: ৪)
যোনার ডাকে নীনবীবাসী তাদের অন্যায় পথ ফিরে এসেছিলেন । এই কারণেই তারা ঈশ্বরের দয়া পেয়েছিলেন (#যোনা ২ : ১০) পদ।
এখনে আমরা দেখতে পাই যোনা সেখানে মরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয় ।
দ্বিতীয়ত : #মথি লিখত সুসমাচারে ১২: ৩৯--৪০ পদে যীশু বলেছিলেন ,
"যীশু অবিশ্বাসী যিহুদীদের যোনার চিহ্ন অথাৎ যোনা যেমন তিনি দিবা রাত্র বড় মাছের মধ্যে ছিল তেমনি যীশু পৃথিবীর গর্ভে থাকবেন ।"
মনে রাখতে হবে যীশু এখানে সময়ের সাথে তুলনা করেছেন যোনার অবস্থানের উপর নয় । মাছের পেটে যোনা কত দিন ছিলেন? তিন দিবা রাত্রি । কিন্তুু অনেকে অযোগ্য ভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন যেহেতু যোনা মাছের পেটে জীবিত ছিল ঠিক তেমনি কালভেরীর ক্রশে থেকে নামিয়ে কবরে যখন রাখা হয় তখন যীশু জীবিত অথবা অজ্ঞান ছিলেন যা swoon theory নামে পরিচিত। পাঠকের জন্য লিংক সংযুক্ত করা হল এই শিক্ষা খ্রীষ্টীয় শিক্ষার বিপরীত ছাড়া আর কিছু নয়।
এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব : যোনার চিহ্নের কথা বলার পরে যীশুর শিষ্য মথি যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্পর্কে বেশ কয়েক বার যীশু কতৃক ভবিষ্যত বাণীর কথা বলেছেন । যেমন : #মথি ১৬ : ২১; #মথি ১৭:২২; #মথি ২০ : ১৭-১৯; #মথি ২৬: ২২--২৯;
যীশুর ক্রশীয় মৃত্যুর প্রমাণ : #মথি ২৭: ৩২--৫৬ পদ
যীশুর সমাধির প্রমাণ ২৭ : ৫৬--৬৬
যীশুর পুনরুথানের প্রমাণ : #মথি ২৮ অধ্যায়
যীশু যখন নিজের মৃত্যুর কথা বলতে ছিলেন তখন শিষ্য পিতর অনুরোধ করে বলে ছিলেন " প্রভু " ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক । ইহা আপনার প্রতি কখনো ঘটবে না ( #মথি ১৬: ২২ ) । কিন্তুু যীশু শিষ্য পিতর কে বলেছিলেন আমার সম্মুখ হতে দূর হও শয়তান, তুমি আমার বিঘ্নস্বরূপ, কেননা যাহা ঈশ্বরের তাহা নয় কিন্তু যাহা মানুষের তাহাই তুমি ভাবিতেছ ( #মথি ১৬ : ২৩ )।
তার মানে কি ? ঈশ্বরের মন্ত্রনা হচ্ছে যীশু ক্রুশে হত হবেন এবং তৃতীয় দিবসে পুনরুত্থিত হবেন।
পুরাতন নিয়মে অনেকবার যীশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ভাববানী আছে ( মৃত্যু ঃ #গীত ১৬ ; ৪০:৬-৮ , #যাত্রা ১২ :২১-২৭ , #যিশাইয় 53 অধ্যায়, পূর্ণতা : সমস্ত নতুন নিয়ম ব্যক্ত করেছেন : #১করি: ১৫ :১-৫ )
পুনরুত্থান : #ইয়োব ১৯:২৩-২৭ পূর্ণতা ঃ #যোহন ৫: ২৫-২৯ #গীত ১৬:৮-১১ ঃ পূর্ণতা ( #প্রেরিত ২:২৫-২৮ ; #১করি; ১৫ অধ্যায়)
যীশু তাঁর আলোচনায় পরিষ্কার করে ইংগিত দিয়েছেন
"ক্রুশে মরবেন না " এ কথা যীশুর কথা অনুযায়ী শয়তান ও মানুষের চিন্তা থেকে থেকে আগত।
"যীশু ফিরে পিতরকে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও, শয়তান। তুমি আমার পথের বাধা। যা ঈশ্বরের তা তুমি ভাবছ না কিন্তু যা মানুষের তা-ই ভাবছ।” ( #মথি ১৬ :২৩)
যীশু কি কবরে জীবিত না মৃত ছিল?
যোনা আশ্চর্য ভাবে মাছের পেটে জীবিত ছিল যদিও তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করেছিলেন । পরে মাছ তাকে সমুদ্রের তীরে উদ্গীরণ করেন । সমালোচকরা বলে থাকে যেহেতু যোনা মাছের পেটে তিন দিন তিন রাত যেমন জীবিত ছিলেন তদ্রূপ যীশু কবরে তিন দিন তিন রাত কবরে জীবিত ছিলেন।আমরা যদি যীশুর মুখের বাণী দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই তিনি সমুদ্রের গর্ভে থাকার বিষয়টি সময়ের সাথে তুলনা করেছেন । যীশু বলেননি যোনা যেমন তিন দিন তিন রাত মাছের পেটে জীবিত ছিলেন তেমনি যীশু কবরে তিন দিন তিন রাত কবরে থাকবেন ।
যীশুর কথা পরিষ্কার ভাবে বুঝবার জন্য আমাদের যীশুর তুলনামূলক ভাষা বুঝা বাঞ্ছনীয়। আমরা একটি উদাহরণ দেখি : যীশু বলেছিলেন, "আর মোশী যেমন প্রান্তরে সেই সম্পর্কে উচ্চে উঠিয়াছিলেন । সেই রূপ মনুষ্য পুত্রকেও উচ্চকৃত হইতে হইবে , যেন যে কেউ তাহাকে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পায় " ( #যোহন ৩: ১৪-১৫) । যীশু এখানে উচ্চকৃত অবস্থার সাথে তুলনা করেছেন , সাপের সাথে না । ভাববাদী মোশী মরুভুমিতে ইসরাইল জাতির উপরে ভয়াবহ সাপের ধ্বংস থেকে রক্ষা পাবার জন্য ঈশ্বরের নির্দেশ দিয়েছিলেন পিতলের সাপ তৈরি করতে ( #গননা ২১: ৪--৯) । এখানে আমাদের লক্ষ্য করা প্রয়োজন , যোনার চিহ্ন বলতে সময়কে এবং মোশীর সাপের মানে "উচ্চ কৃত অবস্থার " সাথে তুলনা করা হয়েছে ।
এখানে যোনার জীবিত বা মৃত অবস্হার সাথে যীশু তুলনা করেন নি, করেছেন সময়ের সাথে ।সেই যোনার চিহ্ন বলতে যীশু কবরে তিন দিন তিন রাত মৃত অবস্থায় কবরে থাকবেন এবং পূনরুত্থিত হবেন যেমন তিনি বলেছিলেন , "সেই সময় অবধি যীশু আপন শিষ্যদিগকে স্পষ্টই বলিতে লাগিলেন যে, তাঁহাকে যিরূশালেমে যাইতে হইবে, এবং প্রাচীনবর্গের, প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হইতে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, ও হত হইতে হইবে, আর তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে।" ( #মথি ১৬: ২১) পদ ।
নীনবী বাসীর কাছে যোনার চিহ্নঃ ভাববাদী যোনাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছিলেন নীনবীতে মন পরিবর্তনের বাণী দিয়ে কারণ সেই শহর পাপে পূর্ণ ছিল। ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তারা যদি মন পরিবর্তন করে না করে তাহলে তিনি নীনবী ধ্বংস করে দিবেন । যোনার ঘোষণা শুনে নীনবীবাসি মন পরিবর্তন করেছিলেন ।।
নীনবীবাসি কেন মন পরিবর্তন করেছিলেন ? ভাববাদী যোনার কথা শুনে নীনবী বাসি উড়িয়ে দেন নি, যিহুদী scholars গণ পর্যালোচনা করে এই উপসংহারে নীত হয়েছেন যে নীনবীবাসি যোনার মাছের পেটে থাকার ঘটনা শুনে ছিল।
ঈশ্বর অবাধ্যতার জন্য ঈশ্বর যোনাকে যেভাবে শাস্তি দিয়েছিলেন তেমনি তাদের শাস্তি দিতে সক্ষম। তাছাড়া তারা জানত এমন পরিস্থিতিতে মানুষের বাঁচা সম্ভব না । তারা বুঝতে পেরেছিল এমন পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের দয়াই যোনাকে জীবিত রেখেছে এবং মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছেন । যোনা মাছের পেট থেকে প্রার্থনা করেছিলেন ঈশ্বর অনুগ্রহের কথা বলেছিলেন , "পরিত্রাণ সদাপ্রভুর কাছে"।(#যোনা ২:৯ )
নীনবীবাসি বুঝতে পেরেছিল তারা যদি অনুতপ্ত হয়ে মন পরিবর্তন করে তাহলে তারা জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে করুনা পাবেন । নীনবীবাসি আরও বুঝতে পেরেছিল ঈশ্বর যদি তাঁর প্রিয় ভাববাদী কে অবাধ্যতার জন্য এমন শাস্তি দিতে পারেন তাহলে যে নগরী পাপে পূর্ণ তার অবস্থা কি হবে ? যিহুদী ইতিহাসবিদর ধারনা সঠিক ছিল ।
যীশু তা সমর্থন করেছেন যে নীনবীবাসি মন পরিবর্তন করেছিল ভাববাদী যোনার মন পরিবর্তনের বাণী শোনার পর । যীশু এই ভাবে পরিস্কার করে বলেছিল, "কারণ যোনা যেমন নীনবীয়দের কাছে চিহ্নস্বরূপ হইয়াছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও এই কালের লোকদের নিকটে হইবেন।" (#লূক ১১: ৩০)।
যীশু এখানে যোনার ঘটনা মন পরিবর্তনের ঘটনা সত্যতার স্বাক্ষর দিয়েছেন । তিনি আরও ইংগিত দিয়ে ছিলেন যোনার সময়ে নীনবী বাসি যোনার কথা শুনে অনুতপ্ত হয়ে মন পরিবর্তন করে চরম বিচার থেকে রক্ষা পেয়েছিল । ঠিক তেমনি ভাবে তিনি এই কালের লোকদের ইহা ঘোষণা দিয়েছিলেন , যারা যোনার চিহ্ন অর্থাৎ খীষ্টের মৃত্যুর ও পূণরুত্থানকে বিশ্বাস করে অনুতপ্ত হবে তারা অনন্ত কালীন শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে । অন্যথায অনন্ত কালের জন্য ধ্বংস প্রাপ্ত হবে ।
কেন যোনার চিহ্ন ছাড়া অন্য কোন চিহ্ন দেওয়া হবে না ? যীশু এ পৃথিবীতে অনেক আশ্চর্য কাজ করেছিলেন ( #প্রেরিত ২: ২২) ।যিহুদারা এই সকল আশ্চর্য কাজ অস্বীকার করতে পারে নাই ( #যোহন ১১: ৪০) । তার পরেও তারা যীশু কে বিশ্বাস করিনি। শাস্ত্র এই ভাবে বলেন, কিন্তু যদিও তিনি তাহাদের স্বাক্ষাতে এত চিহ্ন কার্য্য করে ছিলেন, তথাপি তারা তাদের বিশ্বাস করল না ; ( #যোহন ১২: ৩৭) । তা ছাড়া যীহুদীরা সব সময়ই চিহ্নের অন্বেষণ করত ( #যোহন ১২:৩৭, ২: ১৮) । সাধুপৌল একই ভাবে যীহুদীদের সম্পর্কে বলেছেন ( #১করি ১: ২২) ।
যিহুদীরা জানত যীশু নিজেকে মসীহ বা খ্রীষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন । তাই তা প্রমাণ করার জন্য চিহ্ন বা প্রমাণ দাবী করেছে । যদিও যীশু অনেক আশ্চর্য কাজ করেছিলেন । তার পরেও তারা সন্তুষ্ট ছিলনা । তারা দেখেছে যীশু পাঁচ হাজার লোককে পাঁচটি রুটি ও ২টি মাছ দিয়ে খাইয়েছেন ( #লূক ৯: ১০--১৭) । তারা তর্ক করে বলেছে মোশীও একই রকম করেছেন বলে আলোচনা করেছেন ( যোহন ৬: ৩১ ) । তারা চেয়েছে যীশু যদি মোশীর চেয়ে মহান তা প্রমাণ করার জন্য যীশু কি করতে পারেন তার চিহ্ন চেয়েছে । যীশু অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন তার পরেও তারা আকাশ থেকে চিহ্ন চেয়েছে (#মথি ১৬:১) । যীশু যিহুদীদের চিহ্নের খুঁজার দাবির কথা বুঝে এই কথা বলেছিলেন ।
"এই কালের লোকেরা দুষ্ট, ইহারা চিহ্নের অন্বেষণ করে কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাহাদিগকে দেওয়া যাইবে না (#লূক ১১: ৩০ ) "
যিহুদীরা চিহ্ন চেয়েছিলেন যেন যীশু প্রমাণ করেন যীশু জগতের মসীহ ও ত্রাণকর্তা । যীশু তাদের একটি মাত্র চিহ্ন দিয়েছেন যা মসীহের পরিত্রাণকর্তার দাবির সত্যতার প্রমাণ হয় । সেই চিহ্ন যোনার চিহ্ন ।
চিহ্ন কি ? (#মথি ১২: ৪০) পদ । যীশু পরিস্কার করে চিহ্নের রূপ রেখা বলেছিলেন । যোনার চিহ্ন নীনবী তে যেমন সমযের জন্য চিহ্ন ছিল এমন সমস্ত যুগের জন্য যীশু যোনা চিহ্ন অথাৎ খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পূণরুত্থান মন পরিবর্তনের শেষ চিহ্ন হয়ে থাকবে ।
যোনার চিহ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা : যীশু সত্যিই মারা গিয়েছিলেন । এ যীশু বেশ কয়েক বার ভাববাদী করেছিলেন রোমান শতপতি তা সত্যায়িত করেন ( #লূক ২৩:৪৭--৪৯) পদ । যীশু কে জীবিত বা অজ্ঞান অবস্থায় নামানো হয়নি । তিনি সত্যিই মারা গেছেন । তাঁর স্হানে অন্য কেউও মারা যায়নি। খ্রিস্টীয় ধর্মতাত্ত্বিক , ঈশ্বরের বচনে ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে সত্যতার কে।ন কমতি নেই কারণ তা ঈশ্বরের পরিকল্পনায় হয়েছে, " সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের নিরূপিত মন্ত্রণা ও পূর্বজ্ঞান অনুসারে সমর্পিত হইলে তোমরা তাঁহাকে অধর্মীদের হস্ত দ্বারা ক্রুশে দিয়া বধ করিয়াছিলে।" Acts/2/23
একই দেহে পূনরূত্থিত হয়েছেন মানুষ মৃত্যুর পর ও আত্মা আলাদা হয়ে যায় । আত্মা যার দান তার কাছে গচ্ছিত থাকে । আমাদের আত্মা পূনরূত্থিত হয় না । কিন্তুু আমাদের দেহের পূনরূত্থিত হবে । এই ক্ষেত্রে যীশু মৃত্যুর পর আত্মার পৃথক হয় এবং পূনরূত্থিত দেহে পূণরায আবার মিলন হয় । শেষ দিনে বিশ্বাসীদের দেহে রূপান্তরিত হবে যা হবে আত্মিক দেহ ( #১করি ১৫: ৫৩) পদ । মৃতেরা অক্ষয় তাঁহারা উপেক্ষিত হইবে এবং আমারা রূপান্তরিত হইব। তার মানে আমাদের আত্মা এমন একটা দেহ পরিধান করবে যার কোন মৃত্যু নেই যীশুর পূনরূথান তার প্রমাণ করে ।
যীশুর পুনরুত্থানের দেহ কেমন ছিল ?
পুনরুত্থীত যীশু কে দেখতে পেয়ে শিষ্যরা মহাভীত ও ত্রাসযুক্ত হয়েছিল । তারা মনে করে ছিল তারা কোন আত্মা বা ভূতকে দেখতে পাচ্ছিলেন । কিন্তুু যীশু শিষ্যদের পরিস্কার করে ছিলেন এই বলে (#লূক ২৪ : ৩৯) পদ । যীশুর প্রকৃত দেহ ছিল এবং এই দেহ ছিল
পূর্বের দেহের চেয়ে ভিন্ন । এই দেহ নিয়ে শিষ্যদের দর্শন দিয়ে তখন তারা যিহুদীদের ভয় করে তালা মেরে অবস্থান করছিলেন । তার পূনরূত্থিত দেহের কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না ( #যোহন ২০: ১৯ ; #লূক ২৪: ৩১; #যোহন ২০: ২৬) পদ । দেহের ছিল মহিমান্বিত, রূপান্তরিত, অক্ষয়, অমরর্ত্যের অধিকারী ।
তাই খ্রীষ্টকে জীবিত অজ্ঞান অবস্থায় নামানো হয়নি অথবা কবরে তিনি জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন । তৃতীয় দিনে পূনরূত্থিত হয়েছেন শাস্ত্রনুসারে ভাববানী অনুসারে ( #১করি ১৫: ৩--৪) পদ । তিনি তার গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত দেহ নিয়ে স্বগে আরোহন করেছেন যেন তার প্রিয় পাত্রদের যারা তাকে প্রভু ও মুক্তি দাতা হিসেবে বিশ্বাস করে তাদের জন্য স্বগে স্থান প্রস্তুত করতে পারেন । তিনি যখন পূণরায আসবেন তখন তিনি তাদের মৃত্যু থেকে জীবিত করবেন এবং মৃত প্রাপ্ত দেহকে রুপান্তরিত অমরত্বের অধিকারীর দেহ দান করবেন ( #ফিলিপীয় ৩: ২০--২১) পদ ।
"তিন দিন ও তিন রাত" সময়ের ব্যাখ্যা:
Dr. John MacArthur এ সম্পর্কে বলেছেন যে তিন দিন ও তিন রাত সময়কে জোরালো যুক্তিতে তিন দিনকে বুঝায়। যিহূদী ভাষার ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় দিনের অংশকেও বুঝায়। তাই যীশু যদি শুক্রবারে মারা যায় এবং সপ্তাহের প্রথম দিনে পুনরুত্থান করেন তারপরও যিহূদীদের গণনা অনুসারে তিন দিন তিন রাত হবে। পক্ষান্তরে, অনেকে আক্ষরিক সময় নির্ধারণ করতে বলতে পারেন যীশু বুধবার বা বৃহস্পতিবারে মারা গেছেন কিন্তু খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্ত করার অর্থকে আক্ষরিক ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। যীশু নিজে বলেছেন, "তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা গিয়া সেই শৃগালকে বল, দেখ, অদ্য এবং কল্য আমি ভূত ছাড়াইতেছি, ও আরোগ্য সাধন করিতেছি, এবং তৃতীয় দিবসে সিদ্ধকর্মা হইব।" Luke/13/32 (The MacArthur Study Bible : page 1415)
সাধু পৌলও বলেছেন, "ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন,আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; (#১করি15: 3-4)
আনুষঙ্গিক তাৎপয্য যোনার চিহ্ন দ্বারা যীশুর বিচার কায্যকেও ইঙ্গিত করে । নীনবী সেই সময়ে স্বগীয বিচারের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তুু মন পরিবর্তনের বানী গ্রহণ করায় বেচে গিয়ে ছিলেন । ঈশ্বরের বতমান সময়ে প্রতিটি মানুষ কে মন পরিবর্তনের আজ্ঞা দিবেন । কারন তিনি একদিন বিচারের জন্য ধার্য করেছেন এবং তার প্রমাণ খীষ্টের মৃত্যু থেকে পূনরূথান পবিত্র শাস্ত্রনুসারে তাই বলে, কেননা তিনি একটি দিন স্থির করেছিলেন ( #প্রেরিত ১৭: ৩১) পদ ।
অনুতাপের বাণী
ভাববাদী যোনা যে ভাবে মন পরিবর্তনের বানী প্রচার করেছিলেন । খীষ্ট ও শেষ বিচারের পূর্বে অনুতাপ ও মন পরিবর্তনের শেষ বানী দিয়েছেন । নীনবী বাসি যোনার প্রচার শুনে পরিবতিত হয়েছিল আর এখন তিনি যোনার চেয়েও মহান তিনি শেষ বিচারের আগে মন পরিবর্তনের বানী দিয়েছিলেন যেন পাপী মানুষ উদ্ধার পায় । যীশু বলেছিলেন, ' কাল সম্পন হইল ' ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল; তোমরা মন ফিরাও ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর ।" যীশুর শিষ্যদের প্রভু যীশু সুসমাচার দিয়ে ছিলেন একই ভাবে দিয়েছেন ( #প্রেরিত ২:৩৮ ) পদ । মন পরিবর্তনের উপাদান খীষ্টের মৃত্যু ও পূণরুত্থান ভিত্তিতে হতে হবে।
যোনা যে ভাবে ভয়ংকর অবস্থা থেকে উদ্ধার পেয়ে ছিলেন তদ্রূপ খ্রীষ্ট মানুষের শেষ মৃত্যু থেকে উদ্ধার করতে এসেছন । উদ্ধার পাবার প্রমাণ হচ্ছে তার বানী যা বিশ্বাসযোগ্য ও অথবহ।
কেননা ভাববাদী যোনার প্রচারে যেমন পরিবর্তনের ফল এনে ছিল তেমনি খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পূণরুত্থানের বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের জীবন পবিত্র আত্মার ফল আনে । কারন খীষ্টের মৃত্যু ওপূণরুত্থান বিশ্বাস ছাড়া ও তার প্রভুর স্বীকার করা ছাড়া পবিত্র আত্মার অবস্থান করেন না ( #রোমীয় ১০: ৯; #১করি ১২: ১--২) পদ ।
আগত বিচারের বানী অপেক্ষা করছে , "আগেকার দিনে মানুষ জানত না বলে ঈশ্বর এই সব দেখেও দেখেন নি। কিন্তু এখন তিনি সব জায়গায় সব লোককে পাপ থেকে মন ফিরাতে আদেশ দিচ্ছেন, কারণ তিনি এমন একটা দিন ঠিক করেছেন যে দিনে তাঁর নিযুক্ত লোকের দ্বারা তিনি ন্যায়ভাবে মানুষের বিচার করবেন। তিনি সেই লোককে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলে সব মানুষের কাছে এর প্রমাণ দিয়েছেন।” ( #প্রেরিত ১৭:৩০-৩১) ।
শেষ কথা হচ্ছে যীশু পৃথিবীর জন্য শেষ চিহ্ন হিসেবে যোনার চিহ্ন দিয়েছেন । বাইবেলে অনেক সময় দৃশ্যমান চিহ্ন দেওয়া হয়েছে : নোহের কাছে রংধনুর চিহ্ন, আব্রাহামের কাছে বিশ্বাসের চিহ্ন ত্বকছেদ ; । কিন্তুু বতমানে পাপী তাপী অবিশ্বাসী প্রজন্মের জন্য যোনার চিহ্ন। যা যীশুর অন্যান্য আশ্চর্য কাজের চেয়ে ও ভিন্ন । তা হচ্ছে সব কালের সবচেষ্ঠ আশ্চর্য কাজ তার মৃত্যু থেকে পূনরূথান যা ভাববাদী যোনার চিহ্ন কে পিছিয়ে ফেলে দেয় এবং মুকুট শিরে ঘোষিত হয় । কিন্তুু অধিকাংশ যিহুদী তা বিশ্বাস করে নাই কিন্তু মিথ্যা প্রচার করে ছিল ( #মথি ২৮ : ১৩)।
আমরা দেখেছি যে, যোনার তিন দিন তিন রাত মাছের পেটে থাকার কথা প্রভু যীশু সময়ের কথা তুলনা করে ছিলেন, যোনার মৃত্যু বা জীবিত অবস্থানের উপর নয় । যীশুর তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে পূনরূথিত হয়েছেন যেন সমস্ত পৃথিবীতে মন পরিবর্তনের বানী প্রচারিত হয় । তিনি যেমন বলেছিলেন শিষ্যদের , " তবে পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসলে পর তোমরা শক্তি পাবে, আর যিরূশালেম, সারা যিহূদিয়া ও শমরিয়া প্রদেশে এবং পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত তোমরা আমার সাক্ষী হবে।”(#প্রেরিত ১: ৮)।
যুগে যুগে যিহুদীদের মত অনেকেই খ্রীষ্ট প্রদত্ত যোনার চিহ্ন অস্বীকার করবে, ভুল ব্যাখ্যা দিবে কিন্তু এতে তাদের চুড়ান্ত ক্ষতি ছাড়া আর কি আছে ?
তাই এই প্রজন্মের কাছে যীশু যে শেষ চিহ্ন দিয়েছেন অর্থাৎ খীষ্টের মৃত্যু ও পূণরুত্থান তা যারা স্বীকার করে যেন খীষ্টকে প্রভু ও মুক্তিদাতা হিসাবে গ্রহণ করে পূর্ণ ও ধন্য হই। আমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের শক্তিতে তাকে যেন জায়গা দেই আর তাতেই যোনার চিহ্নের সাথকতা আমাদের জীবনে বিরাজ করবে।
আমেন ।